মুকেশ অম্বানী
রিলায়্যান্স জিয়ো প্ল্যাটফর্ম ও ফেসবুক গাঁটছড়া বেঁধে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডিজিটাল লেনদেন, ই-কমার্স থেকে অনলাইন বিনোদনের জগতে একাধিপত্য তৈরি করতে পারে। শুধু শিল্পমহল নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের একাংশেও দানা বেঁধেছে এই আশঙ্কা। সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ আজ দাবি তুলেছে, এই চুক্তি বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে কি না, তা প্রতিযোগিতা কমিশন খতিয়ে দেখুক। সরকারি কর্তারা বলছেন, আইন মাফিক এমনিতেই এই চুক্তিতে কমিশনের ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে। টেলিকম জগতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই-ও তা খতিয়ে দেখতে পারে।
এ দিকে বাজারে একাধিপত্য তৈরির আশঙ্কা তৈরি হলেও, রিলায়্যান্স জিয়ো প্ল্যাটফর্মে ফেসবুকের ৪৩,৫৭৪ কোটি টাকা লগ্নির ফলে মুকেশ অম্বানীর পক্ষে রিলায়্যান্সকে ঋণ মুক্ত সংস্থা করে ফেলা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রিলায়্যান্সের নিট দেনার পরিমাণ ১.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১০ থেকে জিয়োতে মুকেশ প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। ফলে গত অর্থবর্ষে রিলায়্যান্সের ঋণের উপর সুদের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ১৬,৪৯৫ কোটিতে পৌঁছেছে।
অগস্টে মুকেশ শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সভায় বলেছিলেন, গত পাঁচ বছরে তাঁর সংস্থা ৫.৪ লক্ষ কোটি লগ্নি করেছে। তার মধ্যে তখনও পর্যন্ত জিয়ো-তে ঢালা হয়েছিল ৩.৫ লক্ষ কোটি। ফলে সংস্থার দেনা বেড়ে ৩.০৬ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। এর মধ্যে হাতে ১.৫৩ লক্ষ কোটি নগদ বাদ দিলে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা। মুকেশ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে সংস্থার নিট দেনা শূন্যে নামিয়ে আনতে চান। সেই লক্ষ্যেই রিলায়্যান্স দু’টি পরিকাঠামো লগ্নি ট্রাস্ট তৈরি করে। জিয়ো-র পরিকাঠামো ও টাওয়ারের ব্যবসা এই ট্রাস্টের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এরপর তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসার ২০ শতাংশ মালিকানা সৌদি অ্যারামকো-কে ১.১ লক্ষ কোটি টাকায় বেচে দেয় মুকেশের রিলায়্যান্স গোষ্ঠী। এ বার ফেসবুকের হাতে জিয়ো প্ল্যাটফর্মের ৯.৯ শতাংশ মালিকানা তুলে দেওয়া সেই পথেই আর এক পা।
আরও পড়ুন: পরিষেবা গোটাল চার আন্তর্জাতিক সংস্থা, আতঙ্ক ভারতের আকাশেও
এখানেই স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বিপদ দেখছেন। তাঁর যুক্তি, প্রথমত, ফেসবুক জিয়ো-র পিঠে চেপে ইন্টারনেট পরিষেবা দেবে। তাতে ‘নেট নিউট্রালিটি’ বা ইন্টারনেটে সব কিছু দেখার সমান সুযোগে ধাক্কা লাগবে। প্রসঙ্গত, এর আগে এই কারণেই ট্রাই আপত্তি তোলায় ফেসবুক এ দেশে ‘ফ্রি বেসিকস’ প্রোগ্রাম চালু করতে পারেনি। জিয়ো, ফেসবুক, ফেসবুকের সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ-এর কোটি কোটি ব্যবহারকারীর যে তথ্য এই দুই সংস্থার হাতে থাকবে, তার সঙ্গে অ্যামাজ়ন, ফ্লিপকার্ট প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারবে না। ডিজিটাল লেনদেন, খবর, বিনোদনেও একইভাবে এই দুই সংস্থার একাধিপত্য তৈরি হবে বলে তাঁর মত।
আশঙ্কা
•ফেসবুক ও জিয়ো প্ল্যাটফর্মের জোট ধাক্কা দিতে পারে নেট নিউট্রালিটি বা নেট নিরপেক্ষতা বিধিতে। যার আওতায় অনলাইনে সবার সব কিছু দেখার সমান সুযোগ পাওয়ার কথা।
•এই জোটের সঙ্গে তথ্যের খেলায় এঁটে ওঠা মুশকিল অ্যামাজ়ন, ফ্লিপকার্টের মতো নেট বাজারের।
•ডিজিটাল লেনদেন, খবর, বিনোদনের জগতেও তৈরি হতে পারে একাধিপত্য।
ফেসবুক ইন্ডিয়ার কর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফেসবুক ও জিয়ো-র মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান হচ্ছে না। কিন্তু সরকারি কর্তাদের যুক্তি, দেশে ৬০ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তার মধ্যে ৪৫ কোটি লোকের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ কোটি মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। ৩২.৮ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। জিয়ো ব্যবহার করেন ৩৮ কোটির বেশি মানুষ। এত মানুষের তথ্য একটি সংস্থার হাতে থাকলে, তার সঙ্গে অ্যামাজ়ন, ফ্লিপকার্ট বা অন্যান্য স্টার্ট-আপ সংস্থার পক্ষেও প্রতিযোগিতায় টেকা মুশকিল। ফলে সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল লেনদেন, ই-কমার্স, বিনোদনের সিংহভাগ দুনিয়াই এই সংস্থার হাতে চলে আসছে।
আরও পড়ুন: লকডাউন পর্বে কাজ হারালেন ১৪ কোটি মানুষ, জানাল সমীক্ষা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.i•ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy