Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Business News

অজানা-অনিশ্চয়তার খাদে তলিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি, শেষ কোথায় জানা নেই

পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ভবিতব্য ভাবতে বসলেই ভূত-ভবিষ্যৎ সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে নিমেষে।

সমর বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ১০:৩০
Share: Save:

বন্‌ধ-ধর্মঘট চলছে না। সন্ত্রাস-সংঘর্ষ নেই। তবু সেকেন্ড-মিনিটের সূক্ষ্ম হিসেবে ঝড়ের বেগে ছুটে চলা মানবসভ্যতা যেন আচমকাই স্থবির, অথর্ব, জড়ভরত। আকাশে, মাটিতে, পাতালে অবিরাম গতিতে ছুটে চলা এই গ্রহ যেন অতর্কিতে থেমে গিয়েছে। লকডাউন! প্রধানমন্ত্রী সে দিন বলেছিলেন, ‘‘জান হ্যায় তো জাহান হ্যায়।’’ সত্যিই, প্রাণই যদি না থাকে, তা হলে আর এই বিশ্ব-দেশ-রাজ্য দিয়ে হবে কী?

জান থাকলেও সত্যিই কি বেঁচে থাকা যাবে? খাবার জুটবে?

মৃত্যুর হাড় হিম করা হাতছানিতে আপাতত এই প্রশ্ন হয়তো অন্তরালে। কিন্তু সত্যিই যদি করোনাভাইরাস-যুদ্ধে জয়ী হয় মানবজাতি, তার পরেও কি স্বস্তি দেবে অর্থনীতি? নাকি করোনা নামক সাপের থেকে মুক্তি পেয়ে দুর্ভিক্ষের বাঘের মুখে গিয়ে পড়ব? জিডিপি, জিএসটি, আর্থিক বৃদ্ধি, রাজকোষ ঘাটতি, উৎপাদন— এ সব জটিল তত্ত্বকথা আর পরিসংখ্যানের কচকচানিতে না গিয়েও নিজের পকেটের দিকে তাকালেই অশনিসঙ্কেতটা স্পষ্ট। আকাশের উড়ান মাটিতে দাঁড়িয়ে, হোটেল, রেস্তরাঁ, শপিং মল, কল-কারখানা, ট্রেন, বাস, পর্যটন— সব দরজায় তালা ঝুলছে। কাজ হারানোর আতঙ্কে রক্তে বয়ে যাচ্ছে শীতল স্রোত। পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ভবিতব্য ভাবতে বসলেই ভূত-ভবিষ্যৎ সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে নিমেষে।

করোনা-উত্তর পৃথিবী হয়তো আসবে। কিন্তু বিমান পরিবহণ, নির্মাণ, পর্যটন, পরিবহণ, গাড়ি, উৎপাদন, জাহাজ নির্মাণ ও পরিবহণের মতো শিল্পক্ষেত্রে যে কোটি কোটি অসংগঠিত শ্রমিক কাজ করেন, তাঁদের একটা বিরাট অংশ কাজ হারাবেন। তাঁরা কি আর কাজ ফিরে পাবেন? পেলেও কত দিন পরে? তত দিন বিনা রোজগারে নিজের, সংসারের নুনভাত জোগাড় করার মতো সঞ্চয় এদের কি আদৌ আছে? আবার এই যে সামাজিক দূরত্বের তত্ত্ব গেঁথে যাচ্ছে মানুষের মনে, করোনা বিদায় নেওয়ার পরেও মানুষে মানুষে সেই অবিশ্বাসের বাতাবরণ কি পাল্টাবে? গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ট্রেনে-বাসে যাতায়াতের ছবি কি ফিরবে? আপাতত সময়ের গর্ভে তলিয়ে এই সব প্রশ্নের উত্তর।

আরও পড়ুন: রাজনীতি নয়, কে শুনছে? রোজ তর্ক বাড়ছে বাংলায়, খোঁচা আসছে দিল্লি থেকেও

বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে তাই ঘন কালো মেঘ। কালবৈশাখীর মতো ক্ষণিকের ঝড় নয়, সাইক্লোনের পূর্বাভাস। লন্ডভন্ড হওয়ার ইঙ্গিত। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার ঝড়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে বহু সংস্থা। সবচেয়ে বেশি লোকসানের মুখে পড়বে বিমান পরিবহণ ও পর্যটন ক্ষেত্র। ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে বয়ে আনবে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কট। বড় শিল্পপতিরা তবু তিন-চার মাস কর্মীদের মাইনে ও অন্যান্য খরচ দিয়েও পরে পুষিয়ে নিতে পারবেন, কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কি টিকে থাকতে পারবে? উদ্বেগের আরও বড় কারণ, এই ছোট শিল্পক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি অসংগঠিত শ্রমিক। আবার সারা বিশ্বের মধ্যে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের হার সবচেয়ে বেশি ভারতে। বিরাট অংশ দিনমজুর। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে হবে এই দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষগুলোকেই।

আরও পড়ুন: মাস্ক মিলছে না, বাড়িতে বানাবেন কী ভাবে?

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ) বলেছে, ২০০৮ সালের মন্দার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ছাপিয়ে যেতে পারে ১৯৩০ সালের ‘দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা মহামন্দাকেও। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন-এর একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভারতবর্ষে ৪০ কোটি মানুষ চলে যেতে পারেন দারিদ্রসীমার নীচে। সমীক্ষা সংস্থা মুডি’জ তাদের ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৩ থেকে নামিয়ে এনেছে ২.৫ শতাংশে। শুধু তাই নয়, কত দিনে এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা যাবে, তারও কোনও দিক্‌নির্দেশ নেই। আসলে এখনও বুঝেই ওঠা যায়নি, এটাই কি ডুবন্ত অর্থনীতির তলদেশ, নাকি মন্দার স্রোত সবে শুরু হয়েছে?

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy