রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস।—ছবি পিটিআই।
দরিদ্রের পাতে খাবার আর হাতে টাকা জোগাতে গত কালই ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার চব্বিশ ঘণ্টা না-কাটতেই শুক্রবার আসরে নামল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এক ধাক্কায় ৭৫ বেসিস পয়েন্ট (০.৭৫ শতাংশ বিন্দু) সুদ ছাঁটাই করল তারা। গৃহ ঋণের মতো মেয়াদি ধারের কিস্তি আপাতত তিন মাস স্থগিত রাখারও অনুমতি দিল বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে।
আজই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। সংস্থার প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘এটা পরিষ্কার যে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় ঢুকে পড়েছে।’’ তাঁর মতে, এ বার পরিস্থিতি ২০০৯-এর সঙ্কটের থেকেও খারাপ হবে।
তাঁর এই ঘোষণার আগেই অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণে সুদের বোঝা কমানোর ব্যবস্থা যেমন করেছে, তেমনই বন্দোবস্ত করেছে বাজারে নগদের জোগান বৃদ্ধিরও। যাতে শিল্পের মূলধন জোগাড়ের খরচ কমে। আবার বাড়তি কেনাকাটায় উৎসাহ পান সাধারণ মানুষ। লক-ডাউনের ঝড়ের মুখে যেন একেবারে উড়ে না-যায় এমনিতেই ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতি। কিন্তু এই ওষুধ গিলেও অর্থনীতি সামনের ঝঞ্ঝা সামাল দিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে খুব নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞেরা। চিন্তা না-কাটায় শুরুতে উঠলেও, দিনের শেষে মুখ ভার শেয়ার বাজারেরও।
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আগামী ঋণনীতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ৫০ বেসিস পয়েন্ট (০.৫ শতাংশ বিন্দু) পর্যন্ত রেপো রেট কমাতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। এর পক্ষে জোরালো সওয়াল করছিল শিল্পমহল। কিন্তু অর্থনীতির উপরে করোনা-সুনামি আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় এ দিন আগেভাগেই এক ধাক্কায় তা ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪.৪% করল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। রিভার্স রেপো রেট ৯০ বেসিস পয়েন্ট কমে হল ৪%। সিআরআর ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমে হল ৩%। যে সুদে ব্যাঙ্কগুলি শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে ধার নেয়, সেই মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটিও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করা হয়েছে ৪.৬৫%।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি, শুধু এ দিনের সিদ্ধান্তের জেরে বাজারে নগদের জোগান বাড়বে ৩.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সুদের বোঝা কমায় এই কঠিন সময়ে মূলধন জোগাড় কিছুটা সহজ হবে সংস্থাগুলির পক্ষে। ঋণে সুদ কমলে কোনাকাটাতেও উৎসাহ বৃদ্ধির সম্ভাবনা। অর্থাৎ আশা, লক-ডাউন উঠলে চাহিদা কিছুটা চাঙ্গা হবে। তার হাত ধরে চাকা ঘুরবে কল-কারখানার। যা না-হলে বহু মানুষের কাজ খোয়ানোর আশঙ্কা।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের দাবি, কঠিন সময়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নেওয়া এই সিদ্ধান্ত সুবিধা জোগাবে অর্থনীতিকে। এই আশায় এ দিনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অর্থমন্ত্রীও। কিন্তু অর্থনীতির এই যুক্তি এখন কতটা কাজ দেবে, সে বিষয়ে খুব একটা নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত যেখানে দফায়-দফায় নাগাড়ে ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাইয়ের পরেও বাজারে চাহিদা তেমন বাড়েনি। এগিয়ে আসেননি বিনিয়োগকারীরাও।
দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির কথায়, “সাধারণ মানুষ কেনাকাটা ও সেই সূত্রে খরচ বাড়াতে দ্বিধা করেন না তখনই, যখন তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ আয়ের বিষয়ে তেমন চিন্তিত নন। কিন্তু এখন কাজের বাজারে যে ঘোর অনিশ্চয়তা এবং আগামী দিনে যে ভাবে তা বাড়বে, তাতে হাতে আসা বাড়তি টাকা খরচ করতে চাইবেন কত জন?”
এর আগে চাহিদায় ভাটা থাকাকালীন কর্পোরেট করে বিপুল ছাড় দিয়েও, তার তেমন সুফল পায়নি কেন্দ্র। তাতে সংস্থার মুনাফা হয়তো বেড়েছে, কিন্তু লগ্নি আসেনি। অনেকেরই আশঙ্কা, এ বারও তেমনই কেনাকাটার বদলে ঝোঁক বাড়বে সঞ্চয়ের। তারই মধ্যে অবশ্য আশার কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর পুরো সুবিধা গ্রাহকদের দরজায় পৌঁছে দিতে স্টেট ব্যাঙ্কের ঘোষণা। এর আগে শীর্ষ ব্যাঙ্ক বার বার সুদ কমানো সত্ত্বেও অধিকাংশ ব্যাঙ্কই যা করেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy