—প্রতীকী চিত্র।
নির্বাচন মিটলেও কমেনি রাজনৈতিক উত্তেজনা। দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম ফের আগুন। ঋণদাতাদের সুদের বোঝা কমার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। তবে এত সব অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়েও শেয়ার বাজার তার শক্তি ধরে রেখেছে। গত মঙ্গলবার ৩০৮ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স ঢোকে ৭৭ হাজারের ঘরে। থামে ৭৭,৩০১ অঙ্কে। পরের দু’দিনে আরও এগিয়ে গড়ে নতুন নজির। টানা ছ’দিনে মোট উত্থান ১০২৩। শুক্রবার ২৬৯ খুইয়ে থিতু হয় ৭৭,২১০-এ।
সূচক তেজী। তবে বাজার খরচ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে আমজনতার। খাদ্যপণ্যের চড়া মূল্যবৃদ্ধি চিন্তায় রেখেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সরকারকেও। এক দিকে দেশের বড় অংশে টানা তাপপ্রবাহ এবং অন্য দিকে বর্ষার ঘাটতি ঠেলে তুলছে আনাজ-সহ খাদ্য সামগ্রীর দামকে। গত ১-১৮ জুন বর্ষার ঘাটতি ছিল ১৭ শতাংশেরও বেশি। সর্বাধিক উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, ৬৩.৪%। পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে ঘাটতি ৩.৬%। দক্ষিণে অবশ্য স্বাভাবিকের তুলনায় ১৩% বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বছর গোটা দেশ স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি পাবে বলে পূর্বাভাস থাকলেও, বাস্তবে বাড়ছে অনিশ্চয়তা। কারণ— প্রথমত, আগামী দিনে বর্ষার এতটা ঘাটতি মেটানো যাবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। দ্বিতীয়ত, পূর্বাভাসকে মিলতে হলে এর পরে হয়তো অতিবৃষ্টি পাবে দেশ। তখন বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা থাকবে। অনাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টি, দুইই কৃষির পক্ষে ক্ষতিকর। উৎপাদনে ধাক্কা দেয়। কৃষিপণ্যের জোগান কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় দাম। খাদ্যপণ্যের দাম না কমলে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনা কঠিন। সে ক্ষেত্রে সুদ কমার সম্ভাবনাও থাকবে না। পরিস্থিতি যা, তাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সুদ কমার আশা অনেকেই ছেড়েছেন। অর্থাৎ ঋণগ্রহীতাদের স্বস্তি এখনও বহু দূর।
তবে ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণের চাহিদা গত জানুয়ারি-মার্চে ১৯.৩% বেড়েছে। মোট ঋণ তার আগের বছরের তুলনায় ২৬.৬ লক্ষ কোটি টাকা বেড়ে পৌঁছেছে ১৬৪.৩ লক্ষ কোটিতে। কিন্তু আমানত বৃদ্ধির হার ১৩.৬%। অথচ আমানত ঋণকে ছাপিয়ে না বাড়লে ব্যাঙ্কের হাতে ধার দেওয়ার টাকা কম পড়তে পারে। যা অর্থনীতির জন্য ভাল নয়। ফলে ঋণের মতো ব্যাঙ্কের জমাতেও চড়া সুদ বহাল থাকবে বলেই ধারণা।
আমানতে সুদ বাড়লে উপকৃত হন সুদ নির্ভর সাধারণ এবং প্রবীণ নাগরিক। কিন্তু তার উপর দেয় আয়কর এবং বাজারে চড়া মূল্যবৃদ্ধির হিসাব কষে অনেকেই সেই আয়কে লাভজনক মনে করছেন না। রিটার্ন এবং করের সুবিধার জন্য বহু মানুষ সঞ্চয়ের একাংশ সরাচ্ছেন মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ারে। যে কারণে এই দুই জায়গায় লাফিয়ে বাড়ছে লগ্নিকারীর সংখ্যা। মে মাসে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে মোট লগ্নি এসেছে ৩৪,৬৯৭ কোটি টাকা। যা এক মাসে সর্বকালীন রেকর্ড।
শেয়ার ভিত্তিক ফান্ড ছাড়াও মোটা লগ্নি হচ্ছে ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে (ডেট ফান্ড)। একটু বেশি আয়ের জন্য ঝুঁকি নিতে রাজি থাকলে, অনেকে টাকা রাখছেন বিভিন্ন গৃহঋণ সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফসি)। ডাকঘরেরও কিছু প্রকল্পে ব্যাঙ্কের তুলনায় বেশি সুদ মিলছে। এই সব কারণেই ব্যাঙ্কে টাকার জোগান তেমন বাড়ছে না।
মাসিক আয়ের জন্য সুদ নির্ভরদের বড় অংশ ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে টাকা রাখেন। তবে তাঁদেরও একাংশ ভাল মাসিক আয়, মূলধনী লাভ এবং করের সুবিধার জন্য সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল পদ্ধতিতে (এসডব্লিউপি) ফান্ডে লগ্নি করছেন। যাঁরা সর্বোচ্চ করের আওতায়, কর দেওয়ার পরে ব্যাঙ্ক থেকে প্রাপ্য সুদ তাঁদের আকর্ষণ করে না। মূল্যবৃদ্ধি ধরলে প্রাপ্ত নিট সুদ লোকসানেরই ইঙ্গিত দেয়। তবে শিল্পের স্বার্থে ব্যাঙ্ক জমার পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। সে জন্য তাতে সুদ আরও বাড়বে কি না, সেই প্রত্যাশা মাথা তুলেছে। এ বার ব্যাঙ্ক জমায় ভাটা কাটানোর বিষয়টি বাজেট তৈরির সময় অর্থমন্ত্রী মাথায় রাখবেন বলে আশা। নতুন কর কাঠামোতেও ব্যাঙ্ক সুদে কর ছাড় মিলবে কি, উত্তরের অপেক্ষায় বসে অনেকেই।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy