—প্রতীকী চিত্র।
গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা করে নামছে। ফেব্রুয়ারিতে তা হয়েছে ৫.০৯%। অর্থাৎ, রয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত সহনসীমার (৬%) নীচে। কিন্তু শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নীচে এনেই আত্মতুষ্টির শিকার হতে চান না তাঁরা। তাঁদের লক্ষ্য, এই হারকে ৪ শতাংশের নীচে নিয়ে আসা। আজ শীর্ষ ব্যাঙ্ক থেকে মুদ্রিত মার্চের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দামের চাপই সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হারকে দ্রুত নামতে দিচ্ছে না। শীর্ষ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর মাইকেল দেবব্রত পাত্রের নেতৃত্বাধীন একটি দল এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনের মত লেখকদের নিজস্ব বলে জানিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
গত বার অনিয়মিত বর্ষা এবং বিরূপ আবহাওয়ার জেরে পেঁয়াজ, টোম্যাটো-সহ বিভিন্ন আনাজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। চাল-ডালের দামও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। খাদ্যপণ্যের সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির ছেঁকায় মূলত হাত পুড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ এবং মধ্যবিত্তের। এরই মধ্যে গত অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির ৪.৮৭ শতাংশে নেমে আসে। পরের চার মাসে তা ছিল যথাক্রমে ৫.৫৫%, ৫.৬৯%, ৫.১% এবং ৫.০৯%। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্যে সেই সময় থেকেই বার্তা স্পষ্ট ছিল যে, তেল ও খাদ্যপণ্যের মতো স্পর্শকাতর পণ্য বাদে অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির হার (কোর ইনফ্লেশন) ৩ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু খাদ্যপণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই চড়ে। আজ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদকেরা লিখেছেন, ‘‘কোর ইনফ্লেশন কমার ফলে সামগ্রিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধির হার স্তিমিত হয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত খাদ্যপণ্যের দামের কিছুটা করে মাথা তোলা খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারকে ৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার কাছে আসতে দিচ্ছে না।’’ সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, গত কয়েক মাসের মূল্যবৃদ্ধির হারের প্রবণতা দেখলে বোঝা যাবে, চাল, ডাল, আনাজ, মশলা, ফল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত খাদ্যপণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সংখ্যার নিরিখে মূল্যবৃদ্ধিকে যেমনই দেখাক না কেন, সাধারণ মানুষের এখনই স্বস্তি পাওয়া মুশকিল। আবার পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার কার্যত তলানিতে থাকলেও সেখানেও খাবারদাবারের দাম বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের উপরে। এই বাজারের দামের প্রভাব খুচরো বাজারে পড়তে কিছুটা সময় লাগে। তবে মূল্যবৃদ্ধির উপরে তার বিরূপ প্রভাব যে কার্যত অনিবার্য, তা স্পষ্ট। একমাত্র রান্নার গ্যাসের দাম কমা আংশিক স্বস্তি দেবে গৃহস্থকে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি উত্তাপ হারাচ্ছে। বেশ কয়েকটি এগিয়ে থাকা অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমছে। আগামী দিনে তা আরও কিছুটা স্তিমিত হতে পারে। উল্টো দিকে, কর্পোরেট ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের শক্তিশালী হিসাবের খাতা, দেশের বাজারে চাহিদা, পরোক্ষ কর সংগ্রহ এবং ভর্তুকি কমার হাত ধরে ভারতে বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী। ২০২১-১৪ সালের মধ্যে জিডিপি বৃদ্ধির গড় ৮ শতাংশের উপরে। এই মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনেও তাকে ৮ শতাংশের উপরে ধরে রাখা অসম্ভব নয়। উল্লেখ্য, গত অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৪%। তার আগের দুই ত্রৈমাসিকেও সংশোধিত হার ৮ শতাংশের বেশি। যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের উদ্বেগ, বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হলে ভারতে রফতানির বাজার ফের ধাক্কা খেতে পারে। তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে জাতীয় অর্থনীতির উপরে। সে ক্ষেত্রে শুধু দেশের বাজারের চাহিদার উপরে নির্ভর করে বৃদ্ধির উঁচু হার ধরে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy