আরও বেশি নতুন সংস্থা তৈরিতে জোর দিতে স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৫। ‘এঞ্জেল ট্যাক্স’ নিয়ে আয়কর সংক্রান্ত হয়রানি বন্ধ করা হবে। স্টার্ট আপগুলির জন্য তৈরি হবে আলাদা টেলিভিশন চ্যানেল। বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নতুন সংস্থাগুলির (স্টার্ট আপ) জন্য এই সব প্রতিশ্রুতি দিলেও, চিঁড়ে তেমন ভিজল না। বরং তাদের প্রশ্ন, ‘এঞ্জেল ট্যাক্স’ নিয়ে নজরদারির নামে যে হয়রানি হচ্ছে নতুন সংস্থাগুলির, তা আমূলে উপড়ে ফেলার দিশা কই বাজেটে? একই সঙ্গে প্রশ্ন, সংস্থাগুলিকে তহবিল জোগাতে বিজেপির ইস্তাহারে যে ২০ হাজার কোটি টাকার ‘সিড স্টার্ট আপ ফান্ড’-এর কথা বলা হয়েছিল, সে সম্পর্কে কেন একটি শব্দও খরচ করলেন না অর্থমন্ত্রী?
উল্লেখ্য, স্টার্ট আপগুলি তাদের শেয়ারের দাম যা হওয়া উচিত (ফেয়ার মার্কেট ভ্যালু) তার থেকে বেশি টাকায় শেয়ার ইসু করে যে মূলধন জোগাড় করে (মূলত এঞ্জেল লগ্নিকারীদের থেকে), তার উপরে দিতে হয় আয়কর। এটাই এঞ্জেল ট্যাক্স। নির্মলা বলেছেন, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ‘ই-ভেরিফিকেশন’ করা হবে। এবং স্টার্ট আপ ও তাতে লগ্নিকারীদের ব্যাপারে আর কোনও রকম পরীক্ষা করা হবে না।
কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের (সিবিডিটি) চেয়ারম্যান পি সি মোদী-ও সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশ্বাস দিয়েছেন, কর নিয়ে স্টার্ট আপগুলিকে চিন্তা করতে হবে না। বরং ব্যবসা করায় মন দিক তারা। তিনি বলেছেন, যারা ইতিমধ্যেই এঞ্জেল লগ্নিকারীদের তহবিল পাওয়ার জন্য আয়কর সংক্রান্ত নোটিস পেয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা।
স্টার্ট আপ দুনিয়া অবশ্য শুধুই প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারছে না। দেশের এঞ্জেল বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান এঞ্জেল নেটওয়ার্কের এক সদস্যের দাবি, কর আদায় সংক্রান্ত হয়রানির জেরে অন্তত ২০০ সংস্থা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধের মুখে। তাঁর অভিযোগ, সরকার সমস্যার কথা জানে। তবু বাজেটে তেমন দিশা কই! স্টার্ট আপ বিনিয়োগকারী টি ভি মোহনদাস পাই-এর দাবি, এঞ্জেল কর সংক্রান্ত আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর মতে, সেই হেনস্থা বন্ধের কথা বলা মানেই সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দেওয়া নয়।
ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, যাঁরা ‘অ্যাসেসমেন্ট নোটিস’ পেয়েছেন, নতুন নিয়ম-কানুন কি তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? এক স্টার্ট আপ মালিক বলেন, ‘‘একটি কমিটি খতিয়ে দেখবে সংস্থাগুলির মূল্যায়ন ও বিনিয়োগ। বাস্তবে বিশেষ কিছু বদল হল না।’’
আর এই ক্ষোভ ও সংশয় কাটিয়ে ওঠার উপরেই স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ার সাফল্য নির্ভর করছে, মত বিশেষজ্ঞদের। কেন্দ্রের তথ্য বলছে দেশে ২৩১ জন এঞ্জেল লগ্নিকারী আছেন। রয়েছে ৮টি এঞ্জেল নেটওয়ার্ক। ১৬টি বেশি মূল্যের স্টার্ট আপ ১,৭০০ কোটি ডলারের (প্রায় ১,১৫,৬০০ কোটি টাকা) বেশি লগ্নি টেনেছে। ফলে এই ছবির জেল্লা বজায় রাখতে সঠিক সরকারি নীতি জরুরি, মতে বিশেষজ্ঞদের।
২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষিত হয় ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’। ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করা হয়। লক্ষ্য, ২০২০ সালের মধ্যে ১৮ লক্ষ কর্মসংস্থান। গত মার্চ পর্যন্ত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শিল্প নীতি ও উন্নয়ন দফতরের নথিভুক্ত নতুন উদ্যোগ ১৫ হাজারের সামান্য বেশি। এবং ওই তহবিল থেকে এখনও ৬০০ কোটি টাকা স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে (সিডবি) দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পের মাঝপথে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬% টাকা। তা-ও খাতায় কলমে। খোদ নীতি আয়োগের হিসেবই বলছে, টাকা পুরোটা বিলি হয়নি। আর স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে হিসেব, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬৩টি সংস্থা টাকা পেয়েছে। সরকারি হিসেব, নথিভুক্ত সংস্থাগুলোর এক শতাংশও তহবিল থেকে টাকা পায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy