ভবানীপুরে প্রচারে এসে সিলিন্ডারের গাড়ির সামনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরী। নিজস্ব চিত্র।
তেল এবং রান্নার গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার চড়া দামে কিনতে গিয়ে বিধ্বস্ত মানুষ। তবে উপনির্বাচনের প্রচারে কলকাতায় এসে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী সেই দুর্দশার দায় কার্যত রাজ্যের দিকেই ঠেলে দিলেন। পেট্রল-ডিজ়েলের চড়া দামের জন্য বিরোধীরা বিপুল অঙ্কের কেন্দ্রীয় (উৎপাদন) শুল্ককে দায়ী করলেও পুরীর যুক্তি, তাঁরা এর মধ্যে কর বাড়াননি! সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর তলানিতে নামুক কিংবা চূড়োয় উঠুক, কেন্দ্র সব সময় নির্দিষ্ট অঙ্কের শুল্কই আদায় করেছে। বরং এখন কর বাবদ বেশি আয় করছে রাজ্য। তবে গত সাত বছরে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কম থাকার সময় কেন কেন্দ্রীয় শুল্ক বাড়ল, অথচ সেই দাম চড়ার সময় শুল্ক কমানো হল না, তার জবাব কার্যত এড়িয়ে গেলেন তিনি। উল্টে দাবি করলেন, রাজ্যগুলিই পেট্রোপণ্যকে জিএসটি-তে আনতে বাধা দিচ্ছে।
রান্নার গ্যাস ৯০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অথচ ভর্তুকি কমেছে। এমনকি উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় গরিব গ্রাহকেরাও নামমাত্র ভর্তুকি পাচ্ছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরীর দাবি, ‘‘ভর্তুকি বন্ধ হয়নি। সেই বোঝা বিপুল হওয়ায় যেখানে প্রয়োজন সেখানে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সকলের জন্য তা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না।’’ কিন্তু ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকল্পের প্রচারে অভ্যস্ত এবং স্বচ্ছতার বড়াই করা মোদী সরকার ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের কথা কেন প্রকাশ্যে বলছে না? মন্ত্রীর দাবি, ‘‘সেটা সরকারের বিষয়।’’
ভোট প্রচারের ফাঁকে বুধবার একান্ত এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনায় স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছিল তেল-গ্যাসের চড়া দর নিয়ে দেশ জোড়া বিতর্ক-বিক্ষোভের প্রসঙ্গ। পুরীর দাবি, এতে কেন্দ্রের কোনও দায় নেই। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছরের মতো অশোধিত তেল ব্যারেলে ১৯ ডলারে থাকুক বা ৭৫ ডলার, সব সময়ই কেন্দ্র নির্দিষ্ট অঙ্কের (পেট্রলে ৩২.৯০, ডিজেলে ৩১.৮০ টাকা) শুল্ক নেয়।’’ কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময় তা ছিল যথাক্রমে ৯.৪৮ ও ৩.৫৬ টাকা। এখন জ্বালানি, বিশেষত ডিজ়েলের দাম বাড়ায় মূল্যবৃদ্ধিও মাথা তুলছে। ‘গোলপোস্ট বদলে’র যুক্তি তুলে পুরীর দাবি, কেন্দ্রকে বিঁধতে এক এক বার এক এক রকম কথা বলা ঠিক নয়।
তেলের দর নিয়ে রাজ্যগুলির ভ্যাট-কে আগেও কাঠগড়ায় তুলেছে কেন্দ্র। পুরী বলেন, ‘‘গত জুলাই থেকে পশ্চিমবঙ্গ শুধু পেট্রলেই লিটারে ৩.৫১ টাকা বাড়তি আয় করেছে। কেন্দ্রের মতো তারা নির্দিষ্ট অঙ্কের কর নেয় না। রাজ্য করের হার কমালে পেট্রলও এখানে ১০০ টাকা ছুঁত না।’’ বস্তুত, তেলের মূল দাম ও কেন্দ্রীয় শুল্ক যোগ করে তার উপরে ভ্যাট চাপে। ফলে মূল দাম বাড়লে ভ্যাটের হার এক রেখেও বাড়তি আয় হয় রাজ্যের। তবে এ রাজ্য দু’বার তাতে সামান্য ছাড় দিয়েছে।
তেলের চড়া দামের দায় আগের সরকারগুলির দিকেও ঠেলেছেন পুরূ। তাঁর হিসাবে, সাত বছরে পেট্রলের দর বৃদ্ধির হার ৪২ বছরে সর্বনিম্ন। যেমন, ২০১৪-২০২১ সালে তা বেড়েছে লিটারে ৩০% (৭৭ থেকে ১০০ টাকা)। কিন্তু ২০০৭-২০১৪ পর্যন্ত ৬০% (৪৮ থেকে ৭৭ টাকা), ২০০০-২০০৭ পর্যন্ত ৭০% (২৮ থেকে ৪৮ টাকা)।
তেলে দাম কমানোর জন্য জিএসটি চালুর সওয়াল করে ‘বল’ রাজ্যগুলির দিকে আগেই গড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এ দিন রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে তৃণমূল নেতারা এক লাইন লিখিয়ে আনুন, পেট্রোপণ্যে জিএসটি বসালে তৃণমূল বাধা দেবে না। কথা দিচ্ছি, রাজ্য বিজেপি কেন্দ্রকে তা কার্যকর করার অনুরোধ জানাবে। বিশেষজ্ঞেরা বলেন, সে ক্ষেত্রে পেট্রল লিটারে অন্তত ৭০ টাকা কমবে। তৃণমূলের জন্যই পেট্রল, ডিজেলকে জিএসটি-তে আনা সম্ভব হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy