সরকার চায় বস্তা কেনার খরচ কমাতে। প্রতীকী ছবি।
খাদ্যশস্য মোড়কের জন্য পাটের সঙ্গে পলিথিন মিশিয়ে (পলি-জুট) তৈরি বস্তার ব্যবহার চালুর কথা ভাবছে কেন্দ্র। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জুট কমিশনারের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (বিআইএস)। আর এতেই প্রমাদ গুনছে চট শিল্প। এই ভাবনার বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই বস্ত্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছে চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ। তাদের অভিযোগ, তা বাস্তবায়িত হলে রাজ্য তথা সারা দেশে চটকলগুলি ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়াবে। জুট কমিশনার মলয়চন্দন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, পরিকল্পনা প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তিনি বলেন, “পাট ও পলিথিন মিশিয়ে তৈরি সুতো দিয়ে বস্তা তৈরির প্রস্তাব কার্যকর করা আদৌ সম্ভব কি না এবং সম্ভব হলে সেই বস্তার মান কী হবে ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখছে বিআইএস।’’
চট শিল্প সূত্রের খবর, সরকার চায় বস্তা কেনার খরচ কমাতে। হিসাব অনুসারে, পলিথিনের সঙ্গে পাট মেশানো সুতো দিয়ে তৈরি বস্তার দাম সাধারণ চটের বস্তার থেকে কম পড়বে। পাশাপাশি চট শিল্পে অনেক সময়েই ধর্মঘট, লকআউটের ফলে বস্তার উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে দরকারের সময় বস্তা পেতে সমস্যা হয় কেন্দ্রের। তা মোকাবিলা করতেও পলি-জুটের বস্তা চালু করতে চায় তারা। উল্লেখ্য, আইন অনুযায়ী বর্তমানে খাদ্যশস্য ভরতে ক্ষেত্রে ১০০% এবং চিনির মোড়কের জন্য ২০% চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রই চট শিল্পের থেকে তা কেনে।
দেশে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশায় পাট তৈরি হয়। সিংহভাগ চটকলও পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। আইজেএমএ-র চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্তের দাবি, “ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের চট শিল্প ধ্বংস হবে। এই শিল্পের প্রায় ৩ লক্ষ কর্মীর চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এর মধ্যে রাজ্যেই রয়েছেন প্রায় ২.৫ লক্ষ।’’ তাঁর মতে, পাটের সঙ্গে পলিথিন মিশিয়ে সুতো চটকলগুলি তৈরি করতে পারলেও, সেই সুতো দিয়ে তাঁদের চটকলগুলিতে বস্তা তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি কার্যকর হলে সুতো তৈরির জন্য ৪০% কর্মীর চাকরি থাকবে। কিন্তু বস্তা তৈরির জন্য যে ৬০% কর্মী লাগে, তাঁরা কাজ হারাবেন। যে কারণে ওই ব্যবস্থা মানা সম্ভব নয়। একই মতের শরিক সংগঠনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাজারিয়াও। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের ওই প্রস্তাব নানা ভাবে রাজ্যের ক্ষতি করবে। চটকলগুলি তো বন্ধ হবেই। মার খাবে রাজ্যের পাট চাষও।’’
এই ভাবনার বিরোধিতা করে জুট কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পলিথিনের সঙ্গে পাট মিশিয়ে তৈরি সুতো দিয়ে বস্তা তৈরি করা চটকলগুলিতে সম্ভব নয়। এর জন্য যে যন্ত্রপাতি লাগে, তা প্লাস্টিক (পিপি, এইচডিপিই) শিল্পের কাছেই রয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, অন্য কিছু রাজ্যের চট শিল্পও চরম সমস্যায় পড়বে। লাভবান হবে গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের প্লাস্টিক শিল্প। এটা কিছু মহলের চক্রান্ত বলেই মনে করছি। পলি-জুটের বস্তায় পরিবেশদূষণও হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy