ফাইল চিত্র।
কখনও জ্বালানির উৎপাদন শুল্ক থেকে সংগ্রহ হওয়া রাজস্বের সাহায্যে করোনা মোকাবিলার কথা। কখনও বা তেলের দাম কমাতে রাজ্যগুলিকে ভ্যাটের হার নিচু করার ডাক। পেট্রল-ডিজ়েল-রান্নার গ্যাসের দামে মানুষ যখন বিপর্যস্ত, তখন এ ভাবেই বারবার গোলপোস্ট বদল করেছে মোদী সরকার। এখন নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে তেল ঋণপত্র (অয়েল বন্ড) নিয়ে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী দাবি করেছেন, ইউপিএ সরকারের আমলে ছাড়া ওই ঋণপত্রের দায় মেটাতে গিয়েই শুল্ক কমিয়ে তেলের দামে সুরাহা দেওয়া যাচ্ছে না মানুষকে। অথচ অর্থ মন্ত্রকের কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টসের তথ্যই বলছে, তেলের উৎপাদন শুল্ক থেকে কেন্দ্রের আয় যে ভাবে লাফিয়ে বাড়ছে তার তুলনায় অয়েল বন্ড বাবদ বকেয়া নিতান্তই কম। ঠিক যে দাবি করে আসছে বিরোধী দলগুলি।
কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) পেট্রোপণ্যের উৎপাদন শুল্ক বাবদ কেন্দ্রের রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৬৭,৮৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রায় ৩২,৪৯২ কোটি টাকা বা ৪৮% বেশি। যা চলতি অর্থবর্ষে অয়েল বন্ডের বকেয়ার তিন গুণ। উল্লেখ্য, এ বছর ওই বাবদ ১০,০০০ কোটি টাকা মেটাতে হবে কেন্দ্রকে (সবিস্তার সারণিতে)। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় লকডাউন শিথিল হয়ে আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় পেট্রল-ডিজ়েল-সহ সমস্ত রকম জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সারা অর্থবর্ষে তেলের উৎপাদন শুল্ক বাবদ কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় আগের বছরের তুলনায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বেশি হতে পারে।
ইদানিং সামান্য কমলেও পেট্রল-ডিজ়েলের দাম এখনও বিপুল। দেশের অধিকাংশ জায়গায় লিটারে পেট্রল এখনও ১০০ টাকার উপরে। ডিজ়েলের দামে ব্যতিব্যস্ত পরিবহণ ক্ষেত্র। পাশাপাশি, গত তিন সপ্তাহের মধ্যে গৃহস্থের রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। জ্বালানির দর নিয়ে সম্প্রতি মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেস নেতারা। তার পরেই তেল বন্ড নিয়ে কংগ্রেসের উদ্দেশে পাল্টা আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে বিজেপি। উল্লেখ্য, ইউপিএ সরকারের আমলে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর যখন অনেকটাই মাথা তুলেছিল, তখন তেল সংস্থাগুলিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র ইসু করেছিল কেন্দ্র। যাতে সাধারণ মানুষকে ভর্তুকিতে তেল বেচতে গিয়ে তাদের ক্ষতি না-হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের মধ্যে কয়েক কিস্তিতে সেই আসল মেটানোর কথা সরকারের।
ক’দিন আগে তেলের দর নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে দাম কমানোর সম্ভাবনা খারিজ করে নির্মলা জানান, ইউপিএ আমলের তেল বন্ডের দেনা বাবদ ১.৩ লক্ষ কোটি টাকার দায় চেপে রয়েছে কেন্দ্রের কাঁধে। এর পরে পুরীও দাবি করেন, মোদী সরকারকে মেটাতে হবে দেড় লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। এই দেনার দায়ে তেল সংস্থাগুলির হাত-পা বাঁধা রয়েছে। সে কারণে তাদের পক্ষে তেলের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষকে সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও দাবি করেন, ইউপিএ সরকারের আমলে কৃত্রিম ভাবে জ্বালানির দাম চেপে রাখতে গিয়ে সামগ্রিক ভাবেই আর্থিক সমস্যায় পড়েছিল তেল ক্ষেত্র। অর্থের অভাবে যথেষ্ট ব্যয় করা যায়নি উত্তোলন এবং উৎপাদনে। যার ফলে অশোধিত তেলের আমদানি বেড়েছে। বেড়েছে সেই বাবদ খরচ।
বিরোধীরা অবশ্য আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, গত সাত বছরে উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে ২৩ লক্ষ কোটি টাকা রাজকোষে তুলেছে মোদী সরকার। তেল বন্ডের দায় তার কাছে কিছুই নয়। এ বার খোদ কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টসের হিসেবে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy