Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
সহজে ব্যবসা করা নিয়ে মত কৌশিকের

শেষ কথা নয় শুধু তালিকায় এগোনো

সম্প্রতি বণিকসভা ফিকির এক সভায় ভারতে বিশ্বের অর্থনীতি শ্লথ হওয়ার প্রভাব নিয়ে মত জানানোর সময়ে সহজে ব্যবসার প্রসঙ্গ তোলেন কৌশিকবাবু।

কৌশিক বসু। প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা

কৌশিক বসু। প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫০
Share: Save:

বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহজে ব্যবসা করার (ইজ় অব ডুয়িং বিজনেস) মাপকাঠিতে সম্প্রতি ১৪ ধাপ এগিয়েছে ভারত। বিভিন্ন মহল বলছে, নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য লালফিতের ফাঁস কাটানোয় নয়, বরং দেনায় ডুবে থাকা ব্যবসা বা সংস্থা বন্ধের কারণে ওই অগ্রগতি। আর বিশ্ব ব্যাঙ্কেরই প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ তথা ভারতের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর মতে, শুধু ওই তালিকায় দেশ কত ধাপ এগোল, তা যথেষ্ট নয়। তার বাইরেও বহু বিষয় থাকে, সেগুলিতে এগোনোর উপরেও জোর দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি বণিকসভা ফিকির এক সভায় ভারতে বিশ্বের অর্থনীতি শ্লথ হওয়ার প্রভাব নিয়ে মত জানানোর সময়ে সহজে ব্যবসার প্রসঙ্গ তোলেন কৌশিকবাবু। ওই মাপকাঠিতে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তবে সেই সঙ্গে তাঁর মত, ‘‘পরিসংখ্যানগত সুবিধার জন্য সাধারণত ১০টি ভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে সহজে ব্যবসার পরিবেশের বিষয়টি দেখা হয়। কিন্তু একটি দেশে প্রশাসনিক আরও হাজার দশেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকতে পারে। তাই শুধু বিশ্ব ব্যাঙ্কের মাপকাঠিতে উন্নতিই লক্ষ্য হলে বাদবাকি সূচকগুলি নজরের বাইরে থেকে যেতে পারে। আমিও সেই ভুল করেছিলাম।’’

বিশ্ব ব্যাঙ্কে থাকার সময়ে সহজে ব্যবসার মাপকাঠি বিষয়টিও দেখতেন কৌশিকবাবু। ওই ক্রমতালিকায় গত বছর ভারত ছিল ৭৭ নম্বরে। এ বছর উঠে এসেছে ৬৩ নম্বরে। টানা তিন বছর ধরে তালিকায় উন্নতির কথা খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, নতুন ব্যবসা শুরুর কাঁটা না-সরলে ওই অগ্রগতিতে আখেরে লাভ কতটা হবে? কৌশিকবাবুরও দাবি, ভারতে আমলান্ত্রিক খরচ এখনও অনেক চড়া।

ব্যবসার পরিবেশের সঙ্গেই দেশের মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়া নিয়েও সতর্ক করেছেন কৌশিকবাবু। সম্প্রতি ১০২ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কৌশিকবাবুর মতে, তা ভাল প্রস্তাব। কিন্তু কী ভাবে সেটি কার্যকর হচ্ছে, তার উপরই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে। ঠিক মতো প্রকল্প কার্যকর না-হলে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন আর্থিক উপদেষ্টা টেনে এনেছেন জিএসটির কথাও। তিনি বলেন, জিএসটি খুব ভাল নীতি হলেও সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই তড়িঘড়ি চালু করায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাঁর দাবি, ছোট ব্যবসা ও অস‌ংগঠিত ক্ষেত্রের কথা মাথায় রেখে তা ধাপে ধাপে চালু করা উচিত ছিল। পাশাপাশি নোট বাতিলেও সমালোচনা করে কৌশিকবাবু বলেন, সেই ভুল পরের বছর স্বীকার করা যেত।

সামগ্রিক ভাবে ভারতের অর্থনীতির হাল নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কৌশিকবাবু। বলেছেন, বৃদ্ধির হার টানা কমছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচক আরও উদ্বেগের। নোটবন্দির পরের বছর বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ৪৫ বছরে সর্বাধিক। ধাক্কা খেয়েছে শিল্পোৎপাদন। কমেছে রফতানি। অবস্থা ভাল নয় কৃষি ক্ষেত্রে। ব্যাঙ্ক ঋণও কমেছে। বিশেষত চিন্তার কথা গ্রামীণ অর্থনীতি। এনএসএসও-র ২০১৭-১৮ সালের পরিসংখ্যান বলছে,

গ্রামে কেনাকাটা কমেছে ৮.৮%। ৬০ বছরে সর্বোচ্চ। গ্রামে দারিদ্রও ২০১১-১৮ সালের মধ্যে ৬০ বছরে সর্বাধিক।

গাড়ি বিক্রি কমা নিয়ে কৌশিকবাবু বলেন, অনেকে ‘শেয়ার’ বা ভাড়া গাড়ির (অ্যাপ-ক্যাব) চাহিদা বাড়ার যুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও বিক্রি এতটা কমতে পারে না। বিদ্যুতের চাহিদাও কমেছে। তা তো অন্যের সঙ্গে ভাগ করা যায় না! আসল কারণ ভারতের বড় অংশই সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। তাঁর মতে, দেশে আয়ের সাপেক্ষে সঞ্চয় ও লগ্নি টানা কমছে। অথচ ওই দুই সূচক দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য জরুরি।

অন্য বিষয়গুলি:

World Bank GST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy