গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
স্তব্ধ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্যাকেজে রয়েছে ঢালাও ঋণের ব্যবস্থা। ঋণের কিস্তি স্থগিতের সুবিধাও। পাশাপাশি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কও টানা কমিয়ে চলেছে সুদের হার। মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত রেপো রেট (যে সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্পমেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) কমেছে ১১৫ বেসিস পয়েন্ট। এর মধ্যে শেষ দফাতেই ৪০। রেপো রেট এতটা কমায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও সুদের হার ছাঁটাই করছে। যার ফলে ঋণের উপরে দফায় দফায় কমে আসছে মাসিক কিস্তি। শিল্প ছাড়াও সুবিধা হচ্ছে বাড়ি-গাড়ি ক্রেতাদের। কী সুদে ঋণ দেওয়া হবে, তার অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হল তহবিল সংগ্রহের খরচ। সেই খরচের ভিত্তিতে স্থির করা সুদের হার (এমসিএলআর) গত সপ্তাহেও কমিয়েছে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, গৃহঋণ সংস্থা ও এনবিএফসি। এতে কিছুটা হলেও চাপ কমবে ঋণগ্রহীতাদের।
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ঋণের সুদ কমলে পণ্যমূল্যও কিছুটা কমার কথা। বস্তুত, সেটা হলেই সুদ কমার সুফল সামগ্রিক ভাবে পাবেন সাধারণ মানুষ। বাস্তবে কিন্তু তা হচ্ছে না। আবার অন্য দিকে, নাগাড়ে সুদ কমানো সত্ত্বেও প্রাণ ফিরছে না শিল্পে। বাড়ছে না পণ্যের চাহিদা, কর্মসংস্থান। অর্থাৎ, সুদ ছাঁটাইয়ের সরাসরি সুবিধা পাচ্ছেন শুধু বাড়ি-গাড়ির ঋণগ্রহীতারা। কিন্তু তাঁরা জনসংখ্যার আর কত শতাংশ?
উদ্বেগের দিক আরও আছে। ঋণে সুদ কমলে তা কমে জমার উপরেও। যার উপরে নির্ভর করে সংসার চালান সমাজের একটি বড় অংশের মানুষ। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তেরা। জমায় সুদ প্রতিনিয়ত কমতে থাকায় এঁরা কিন্তু বেশ চাপে। তিন-চার বছর আগে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে সুদ পেতেন ৮.৭%। প্রধানমন্ত্রী বয়োবন্দনা প্রকল্পে ৮%। এই দুই প্রকল্পেই সুদের হার নেমে এসেছে ৭.৪ শতাংশে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কে প্রবীণদের সর্বাধিক সুদ কমে হয়েছে ৬.৫%। বাকিদের ক্ষেত্রে তা বড়জোর ৫.৭%। যা কিনা আবার করযোগ্যও। অর্থাৎ করের হার যে ক্ষেত্রে ৩১.২%, সেখানে লগ্নিকারীর নিট প্রাপ্তি ৩.৯২%। সুদ এই হারে কমতে থাকলে কিন্তু কমতে পারে সঞ্চয়ের প্রবণতাও।
আরও পড়ুন: আমপানে ভেঙেছে মৌমাছির ঘর, রাজ্যে মধু সংগ্রহে ধাক্কা
একটি কাল্পনিক হিসেবের দিকে চোখ রাখা যাক। ধরা যাক বছর পাঁচেক আগে অবসর নেওয়া কোনও ব্যক্তি ৫০ লক্ষ টাকা লগ্নি করে বার্ষিক গড়ে ৮.৫% হারে সুদ পেতেন। ফলে মাসে আয় হত ৩৫,৪১৬ টাকা। মেয়াদ ফুরোনোর পর একই টাকা লগ্নি করে গড়ে ৭% সুদ পেলে, তাঁর মাসিক আয় দাঁড়াবে ২৯,১৬৬ টাকা। অর্থাৎ মাসে আয় কমতে পারে ৬৩০০ টাকা। বছরে প্রায় ৭৫,০০০ টাকা। অথচ এই সময়ের মধ্যে পণ্যমূল্য বেড়েছে।
জমায় সুদ কমায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণপত্রের ইল্ডও নেমে এসেছে ৫.৭৯ শতাংশে। এতে অবশ্য আগে ইসু করা বন্ডের বাজার দর বেড়ে থাকবে। এ বার চোখ রাখা যাক গত সপ্তাহের অন্যান্য খবরে।
• শেয়ার বাজারে অস্থিরতা বহাল। বৃহস্পতিবার ৭০৯ পয়েন্ট পড়েছিল সেনসেক্স। শুক্রবারও একটা সময়ে পড়ে গিয়েছিল প্রায় ১১০০ পয়েন্ট। শেষ বাজারে লগ্নিকারীরা সস্তায় শেয়ার কেনায় ২৪৩ পয়েন্ট ওঠে সূচক।
• এখন যা যা পরিসংখ্যান আসবে, তার প্রায় কোনওটিকেই স্বাগত জানাবে না বাজার। এই কারণে সরকার এপ্রিলের শিল্পোৎপাদন সূচক প্রকাশ করেনি। লকডাউনের জেরে ওই মাসে উৎপাদন কার্যত বন্ধই ছিল।
• মে মাসে ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি হয়েছে ৫২৫৬ কোটি টাকা। যা পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
• সাত সপ্তাহে ১০টি চুক্তির মাধ্যমে জিয়ো প্ল্যাটফর্মের খানিকটা অংশীদারি বিক্রি করে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় সংগ্রহ করেছে ১.০৪ লক্ষ কোটি টাকা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইউনিয়নের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy