—প্রতীকী চিত্র।
সূচক উঁচুতে থাকলেও শেয়ার বাজার এখন প্রবল অস্থির। কিছুটা উপরে উঠলেই আসছে লগ্নিকারীদের মুনাফা তোলার চাপ। ফলে উত্থান-পতন অব্যাহত। তবে এর মধ্যেও মাঝে মাঝে নতুন নজির তৈরি করছে দুই সূচক। গত সপ্তাহে মোট তিন দিন নতুন রেকর্ড গড়েছে ৫০টি বড় শেয়ার নিয়ে তৈরি নিফ্টি। মুম্বই শেয়ার বাজারের ৩০টি বড় সংস্থার শেয়ার সম্বলিত সূচক সেনসেক্স শেষ নজির গড়েছিল গত ১৫ জানুয়ারি। গত শুক্রবার একটা সময়ে সূচকটি সেই গণ্ডি পার করে যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি। তবে দেখা যাচ্ছে, ওঠাপড়া চললেও একটু বড় মেয়াদে বাজারের মুখ উপরের দিকেই রয়েছে। ঠিক এক বছর আগে সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ৫৯,৬০৬ পয়েন্টে। নিফ্টির ১৭,৫১১। অর্থাৎ, গত এক বছরে সেনসেক্স বেড়েছে ২২.৭১%। বাজার এতটা মাথা তোলায় ভাল রকম বেড়েছে শেয়ার ভিত্তিক বিভিন্ন ফান্ডের ন্যাভ। বাঁধ ভাঙা জলের নতুন লগ্নিকারীরা ঢুকছেন শেয়ার ও ফান্ডের জগতে।
বাজার এতটা উঠলেও প্রথম সারির বেসরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ারগুলিকে কিন্তু গত এক বছরে তেমন বাড়তে দেখা যায়নি। বরং এইচডিএফসির সঙ্গে সংযুক্তিকরণের পরে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের শেয়ার কিছুটা মাথা নামিয়েছে। অর্থনীতি অতিমারির আগের জায়গায় ফিরে আসায় ব্যাঙ্ক ঋণের চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা মেটাতে বাড়তি তহবিল জোগাড় করার লক্ষ্যে ব্যাঙ্কগুলিকে জমায় সুদ বাড়াতে হয়েছে। ফলে তাদের লাভের অনুপাত বা মার্জিন কমেছে। তা ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকে মোটা আমানত বার হয়ে যাচ্ছে শেয়ার এবং ফান্ডের দুনিয়ায়। ছোট ব্যাঙ্কগুলির আবার সমস্যা অসুরক্ষিত ঋণের পরিমাণ ভাল রকম বেড়ে যাওয়া। আশঙ্কা, এর ফলে আগামী দিনে অনাদায়ি ঋণের বোঝা বাড়তে পারে। ক্রেডিট কার্ড এবং অসুরক্ষিত ব্যক্তিগত ঋণের ব্যাপারে এরই মধ্যে ব্যাঙ্কগুলিকে সতর্ক করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তুলনায় শেয়ার বাজারে ভাল রকম উত্থান দেখা গিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির শেয়ারের। অনেক দিন ঝিমিয়ে থাকার পরে গত দু’সপ্তাহে ভাল রকম বেড়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার দর। পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়।
বেশ কিছু দিন ধরে শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলি ভাল রিটার্ন দেওয়ায় বহু সাধারণ মানুষ তাঁদের তহবিলের একাংশ ব্যাঙ্ক থেকে সরিয়ে লগ্নি করছেন এই দুই জায়গায়। এ ছাড়াও যাঁরা সর্বোচ্চ করের (৩০%) আওতায় পড়েন তাঁরা কম কর গুনে বেশি আয়ের লক্ষ্যে বাজারমুখী হচ্ছেন। স্থির আয়যুক্ত প্রকল্পগুলিতে সুদ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তা সত্ত্বেও কর দেওয়ার পরে ঘরে যে আয় আসে তা মূল্যবৃদ্ধির হারের তুলনায় কম। ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতে ৭.৫% সুদ থেকে কর বাবদ ৩০% বাদ দিয়ে নিট আয় দাঁড়ায় মাত্র ৫.২৫%। যা দীর্ঘদিন খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হারের চেয়েও কম ছিল। খাদ্যপণ্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার তো আরও বেশি (৮%-১০%)। এই কারণে যে সমস্ত মানুষকে আয়করের উপরের স্তর অনুযায়ী কর গুনতে হয়, তাঁরা দ্রুত সরে আসছেন বাজার নির্ভর লগ্নিতে। একুইটি নির্ভর প্রকল্পের লগ্নি এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করে লাভ হলে তার প্রথম ১ লক্ষ টাকার উপরে কর দিতে হয় না। লাভ এর চেয়ে বেশি হলে কর দিতে হয় ১০% হারে। আর এক বছরের মধ্যে বিক্রি করে মুনাফা হলে করের হার ১৫%।
এখন প্রশ্ন হল, বাজার এতটা উঁচুতে থাকাকালীন লগ্নি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে! এটা ঠিক যে, ছোট মেয়াদে সাময়িক পতন আশ্চর্যজনক ঘটনা নয়। ফলে এই বাজারে একলপ্তে বড় পুঁজি লগ্নি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বরং ছোট ছোট অঙ্কে নিয়মিত লগ্নি করতে হবে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপিতে। বড় মেয়াদে ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞেরা আশাবাদী। আগামী ১০ বছরের মেয়াদে ভারতই শ্রেষ্ঠ একুইটির বাজার বলে বিশ্বাস করেন ব্রোকার সংস্থা জেফ্রিজ়ের বিশেষজ্ঞ ক্রিস উড। ভারতীয় অর্থনীতি বছরে গড়ে ৭% হারে এগোবে বলে সরকারি মহলেও জোর গলায় দাবি করা হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে সুদ কমতে শুরু করলে তা বাজারকে নতুন শক্তি জোগাবে। এই কথা মাথায় রেখে এখনকার উঁচু বাজারেও ধারাবাহিক ভাবে ছোট ছোট লগ্নি করা যেতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy