কেন্দ্রীয় বাজেটে দেশ জুড়ে বন্দর পরিকাঠামো উন্নয়নে মোটা তহবিল গঠনের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। জাহাজ শিল্প ও আনুষঙ্গিক শিল্পের উন্নয়নে ‘মেরিটাইম ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’-এ আগামী পাঁচ বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে সে ভাঁড়ার থেকে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের জন্য বরাদ্দ নগণ্যই। তাজপুর-সহ বঙ্গের প্রস্তাবিত বন্দরগুলি নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই বাজেটে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহি বলেন, “যে ‘মেরিটাইম ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ গঠন হয়েছে, সেটি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। সবে তহবিল গঠন করা হয়েছে। আশা করি, আগামী দিনে বড় প্রকল্প বন্দরে আসবে।” হলদিয়া বন্দরের কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশ জানান, প্রতি বছর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের হলদিয়া চ্যানেলের জন্য ভর্তুকি মেলে। গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় তা-ই রয়েছে। বাড়তি প্রাপ্তি হয়নি।
তমলুকের তৃণমূল নেতা শিবনাথ সরকারের দাবি, “বঙ্গে বিজেপির এত বিধায়ক, সাংসদ থাকলেও রাজ্যের একমাত্র বন্দরের যা জুটেছে, তা দূরবীনেও দেখা যাবে না।’’ বিএমএস-এর রাজ্য সভাপতি প্রদীপকুমার বিজলি বলেন, “অন্য বন্দরের সঙ্গেই হলদিয়ার পরিকাঠামো উন্নয়ন হবে।” নানা সময়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তিনটি ও সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে নয়া বন্দর তৈরি নিয়ে কথা হলেও বাজেটে তার উল্লেখ নেই।
২০১০-এ গঙ্গাসাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ার ঘোষণা করে কেন্দ্র। ২০১৫-১৬ নাগাদ জাহাজ মন্ত্রকের উদ্যোগে ‘ভারতমালা’ প্রকল্পে বরাদ্দের ঘোষণা হয়। ঠিক হয়, বন্দর তৈরিতে কেন্দ্র ৭৬ ভাগ ও রাজ্য ২৪ ভাগ টাকা দেবে। রাজ্যের থেকে ১১ একর জমি কেনা হয়। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, তাজপুর বন্দর হলেই সাগর বন্দরও হবে। সে জন্য জোকা থেকে কাকদ্বীপ জাতীয় সড়ককে চার লেনে সম্প্রসারণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক থেকে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলে কেন্দ্র। বলা হয় ডানকুনি-কাকদ্বীপ ও কাকদ্বীপ থেকে প্রস্তাবিত বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ গড়ার কথাও। কার্যত কিছুই হয়নি।
১৯৯৯-২০০০ নাগাদ বেসরকারি উদ্যোগে কুলপিতে নদী-বন্দর ও কাকদ্বীপের জম্মুদ্বীপের কাছে সমুদ্র বন্দর তৈরির ঘোষণা তৎকালীন বাম সরকার করলেও কাজ এগোয়নি। মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ বাপি হালদার বলেন, ‘‘কেন্দ্রের অসহযোগিতায় বন্দর হয়নি।’’
(তথ্য সহায়তা: সৌমেন মণ্ডল, দিলীপ নস্কর ও সমরেশ মণ্ডল)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)