প্রতীকী ছবি।
যাবতীয় জল্পনায় দাঁড়ি। রবিবার ভোডাফোন আইডিয়া, এয়ারটেল ও রিলায়্যান্স জিয়ো ঘোষণা করল প্রিপেড গ্রাহকদের জন্য বর্ধিত মাসুলের কথা। পাঁচ বছর পরে এই প্রথম। সেই অনুযায়ী, কাল থেকেই গ্রাহকের মোবাইলের খরচ ৫০% পর্যন্ত বাড়ছে ভোডাফোন ও এয়ারটেলে। কথা বলার খরচ আগের থেকে কতটা বেশি লাগবে, অনলাইনে তথ্য আদানপ্রদান করতে গেলে এ বার কত টাকা বাড়তি গুনতে হবে, নিখরচায় সীমাহীন কলের প্ল্যানে আখেরে কী পাবেন গ্রাহক— সব জানিয়েছে তারা। জিয়োর নতুন মাসুল চালু হচ্ছে শুক্রবার। ডেটা ও কথা বলার খরচ নিয়ে এ দিন বিশদে কিছু জানায়নি তারা। তবে তিন সংস্থারই দাবি, দাম বাড়ালেও অনেক বাড়তি সুবিধা নাকি দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য প্রশ্ন, সুবিধা যা-ই দেওয়া হোক, বাজারে চাকরি বা খরচ নিয়ে যে ভাবে অনিশ্চয়তা দানা বেঁধেছে তাতে আচমকা মোবাইলের খরচ বাড়ায় গ্রাহকরা চাপে পড়বে না কি? যদিও গ্রাহকদের একাংশ বলছেন, উন্নত পরিষেবা পেতে কিছুটা বেশি মাসুল গুনতে রাজি অনেকেই। কারণ মোবাইলের সংযোগ পাওয়া বা কথার মাঝখানে কল কেটে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তিতিবিরক্ত তাঁরা।
কল ও ডেটার খরচ বাড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস। এ দিন দিল্লিতে এআইসিসি মঞ্চ থেকে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরার অভিযোগ, ইউপিএ জমানায় ১৩টি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা ছিল। সঙ্গে ছিল বিএসএনএল-এমটিএনএল। সকলের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত। কিন্তু এখন সর্বসাকুল্যে তিনটি বেসরকারি সংস্থা। তার মধ্যে আবার ভোডাফোন সঙ্কটে। আর সরকারি সংস্থার স্বাস্থ্যের কথা সকলেরই জানা। খেরার তোপ, তিন বেসরকারি সংস্থাই মাসুল বাড়িয়ে আমজনতার পকেট থেকে প্রতি মাসে কল চার্জ বাবদ বাড়তি ১২,০০০ কোটি ও ডেটা থেকে বাড়তি ২৪,০০০ কোটি টাকা আদায় করবে।
ভোডাফোন, এয়ারটেলের অবশ্য দাবি, মাসুল যুদ্ধে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার তাগিদে, মূলত জিয়ো বাজারে আসার পরে কল ও ডেটার খরচ কম রাখতে বাধ্য হয়েছিল সকলেই। হিসেব বলছে, যার নিট ফল ছিল প্রায় নিখরচায় ফোনের সুবিধা ও প্রতি জিবি ডেটার খরচ ২৬৯ টাকা থেকে ১১.৭৮ টাকায় নামা। অথচ সংস্থার মতে, টেলি শিল্পে মূলধনী লগ্নির প্রয়োজন অনেক বেশি। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির জন্য নিয়মিত পুঁজি ঢালাও জরুরি। গ্রাহকদের সুষ্ঠু পরিষেবা দিতেই তাই মাসুল বাড়ানো জরুরি এখন। তার উপরে গলা পর্যন্ত ডুবে লোকসানে তারা। ঘাড়ে বিপুল ঋণের বোঝা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি বাবদ কেন্দ্রকে বিপুল বকেয়া মেটাতে হবে। জিয়ো যদিও টেলি শিল্পে আর্থিক সঙ্কটের কখনওই মানেনি। তবে মাসুল বাড়ানোর পথে এ বার শরিক হল তারাও।
নতুন ঘোষণা
• প্রিপেড সংযোগে ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেলে ডেটা ও কলের খরচ বাড়ছে ৫০% পর্যন্ত।
• ভোডাফোনে সীমাহীন (আনলিমিটেড) প্ল্যানের খরচ বছরে ১৬৯৯ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ২৩৯৯ টাকা। এয়ারটেলের ১৬৯৯ টাকা থেকে ২৩৯৮ টাকা।
• রিলায়্যান্স জিয়োর দাবি, তাদের ডেটা ও কলের মাসুল বাড়বে ৪০% পর্যন্ত।
• এয়ারটেলের প্রিপেড গ্রাহকদের দৈনিক খরচ বাড়বে ৫০ পয়সা থেকে ২.৮৫ টাকা।
• এয়ারটেলে সীমাহীন কলের বিভিন্ন প্রিপেড প্ল্যানে নিখরচায় অফুরন্ত কথা বলার সুবিধা মিলবে শুধু নিজেদের সংযোগের মধ্যে হওয়া ফোনেই। ভোডাফোন থেকে ভোডাফোন বা ভোডাফোন থেকে আইডিয়ায় কথা বলতে গেলেও মিলবে সেই সুবিধা। কিন্তু দুই সংস্থাই অন্য সংযোগে নিখরচায় কথা বলার সময় বেঁধে দিয়েছে। যা পেরোলে মিনিটে ৬ পয়সা গুনতে হবে।
• সব প্ল্যানেই দৈনিক ডেটা ব্যবহারের সীমা ও সর্বাধিক এসএমএস নির্দিষ্ট থাকে।
• জিয়ো থেকে অন্য সংস্থার সংযোগে অবশ্য নিখরচায় কথা বলার সুযোগ এখন নেই। ফোন করলেই মিনিটে ৬ পয়সা লাগে। সংস্থা জানিয়েছে, সীমাহীন প্রকল্প এনে তারাও অন্য সংস্থার সংযোগে নিখরচায় কথা বলার সীমা বাঁধবে।
• ভোডাফোন ও এয়ারটেলে বর্ধিত মাসুল চালু হচ্ছে ৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার থেকে। ৬ ডিসেম্বর থেকে চালু করছে জিয়ো।
• তার পর থেকে ভোডাফোন ও এয়ারটেলে অন্তত এক মাস সংযোগ চালু রাখতে হলে ন্যূনতম ৪৯ টাকা খরচ করতে হবে।
• এখন যে প্ল্যানের আওতায় যার যত টাকা ভরানো আছে ফোনে, মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
ঘাড়ে বোঝা
• ভোডাফোন আইডিয়ার ঋণ প্রায় ১.১৭ লক্ষ কোটি।
• জুলাই-সেপ্টেম্বরে সংস্থার লোকসান ৫০,৯২১ কোটি।
• সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি বাবদ তাদের কেন্দ্রকে দিতে হবে ৪৪,১৫০ কোটি টাকা।
• দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এয়ারটেলের নিট ক্ষতি ২৩,০৪৫ কোটি।
• লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি বাবদ ২১,৬৮২ কোটি ধরে মোট দায় ৩৫,৫৮৬ কোটি।
বিএসএনএল প্রসঙ্গেও এ দিন কেন্দ্রকে সরাসরি বিঁধেছে কংগ্রেস। তুলেছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। বলেছে, পাঁচ বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলি সংস্থাকে ৪জি পরিষেবা নিতে দেয়নি মোদী সরকার। ফলে তারা ধুঁকছে। অন্য দিকে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বেসরকারি সংস্থাগুলির যে ১.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা জানুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রকে মেটানোর কথা ছিল, তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করিয়ে আরও দু’বছর সময় দিয়েছে কেন্দ্র। তাদের প্রশ্ন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে যেখানে প্রধানমন্ত্রী আরও দুর্বল করছেন ও লাভজনক হলেও বেচে দিচ্ছেন, সেখানে বেসরকারি সংস্থার প্রতি এত সদয় কেন? নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে গোপনে চাঁদা নেওয়ার বিনিময়ে বেসরকারি ক্ষেত্রকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন কি?
এ দিকে, বণিকসভা সিআইআই এবং ফিকি টেলিকম সংস্থাগুলির জন্য ত্রাণের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, মুকেশ অম্বানীর জিয়োকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই এই উদ্যোগ।
বস্তুত, আর্থিক সঙ্কটের প্রশ্নে এই মুহূর্তে দু’ভাগ দেশের টেলিকম শিল্প। সম্প্রতি এয়ারটেল ও ভোডাফোন দাবি করেছে, লোকসানে ডুবে কাহিল তারা। সঙ্কটের সঙ্গে লড়াইয়ের পথ করে দিতে তাদের ত্রাণ দিকে কেন্দ্র। আর জিয়ো বলেছে,
অবস্থা যথেষ্ট ভাল। ফলে করদাতার টাকায় ত্রাণ দেওয়ার মানেই হয় না। অনেকের অবশ্য প্রশ্ন, তা হলে কেন গ্রাহককে চাপে ফেলে মাসুল বাড়াচ্ছে জিয়ো-ও? সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সস্তার পরিষেবায় গ্রাহকদের একাংশ অভ্যস্ত হয়েছে। তবুও দেওয়ালে পিঠ ঠেকায় কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই মাসুল বাড়ানোর ‘অপ্রিয়’ পথে হাঁটছে ভোডাফোন, এয়ারটেল। কার্যত টিকে থাকার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy