প্রতীকি ছবি
কোভিডের কারণে বিপর্যস্ত জীবন। চেহারা বদলে গিয়েছে গোটা বিশ্বের। অর্থনৈতিক দূর্দশার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু সংস্থা। ছাঁটাই হয়েছে অথবা বেতন কমেছে বহু মানুষের। এর পাশাপাশি শরীর এবং স্বাস্থ্যের প্রতি একটু বেশিই ঝুঁকি পড়েছে সাধারণের। আর সেখানেই প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে জীবন বিমার।
যদিও বিমা নিয়ে আমাদের অনেকেরই কিছু না কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই ঠিকমতো জানেন না বিমা ঠিক কী ভাবে সাহায্য করতে পারে। অথবা এর সঠিক প্রয়োজনীয়তা কী? অন্তত এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে বিমা কী ভাবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতেই সম্প্রতি আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে যৌথভাবে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছিল পিএনবি মেটলাইফ। ওয়েবিনারে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সম্পাদকীয় পরামর্শদাতা সূপর্ণ পাঠক।
বিমা করুন। কারণ জীবনের প্রতিটি মূহূর্তেই কোনও না কোনও অনিশ্চয়তা লুকিয়ে রয়েছে। এই বার্তা দিয়েই শুরু হয় ওয়েবিনারের সেশন। ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিএনবি মেটলাইফের এমডি এবং সিইও আশিষ কুমার শ্রীবাস্তব। এছাড়াও ছিলেন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কলকাতা জোনাল অফিসের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অশ্বিনী কুমার ঝা, পশ্চিমবঙ্গে পিএনবি মেটলাইফের আর্থিক উপদেষ্টা নিখিল শাহ এবং ইউরেকা ইনসিওরেন্স ব্রোকিং প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর অনুরাগ সোমানি।
কোভিড কালে দাঁড়িয়ে জীবন বিমার সেক্টরে ঠিক কী প্রভাব পড়েছে?
আশিষবাবু জানান, এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে গুগল সার্চে টার্ম লাইফ ও প্রোটেকশন ইত্যাদির সার্চ অনেক বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সচেতনতা বেড়েছে। সঞ্চয় পন্থা থাকলেও বিমা এই মুহূর্তে অপরিহার্য। গত এপ্রিল-মে মাসে টার্ম প্রোডাক্টের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি গ্যারেন্টিড রিটার্ন দেয় এমন বিমা কিনেছেন প্রচুর মানুষ। টার্ম ইন্সিওরেন্স যেমন আপনার কিছু হলে আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দেবে, তেমনই গ্যারেন্টিড রিটার্ন জাতীয় বিমার শেষে আপনি একটি বিশাল অঙ্কের টাকা পাবেন।
মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ করেছে পিএনবি মেটলাইফ?
এই প্রশ্নের উত্তরে আশিষবাবু জানান, গত কয়েক বছরের পূর্ব ভারতে প্রচুর পরিমাণে পিএনবি-র শাখা খোলা হয়েছে। প্রচুর এজেন্ট রয়েছেন, যাঁরা প্রতিনিয়ত মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। মানুষের আগ্রহ দেখে নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসা হচ্ছে। একই সঙ্গে অনলাইনেও সক্রিয়তা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে পিএনবি মেটলাইফের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ১১,০০০-এর বেশি পার্টনার ব্যাঙ্ক, এজেন্টস, ব্রোকার এবং অন্যান্য পার্টনারশিপস যারা ইতিমধ্যেই ১ কোটিরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। পিএনবি-র বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেই মানুষ আগ্রহী হচ্ছে।
ব্যাঙ্ক ব্রাঞ্চ থেকে বিমা কেনা কতটা সহজ? আর কী ভাবেই বা নিজের জন্য আদর্শ বিমা পলিসি বেছে নেবেন গ্রাহকেরা? ক্লেম সেটেলমেন্টের প্রক্রিয়াটাও কেমন?
উত্তরে অশ্বিনী কুমার জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরে পিএনবি-র ব্র্যাঞ্চের সংখ্যা ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ১১০০০ ব্র্যাঞ্চের সঙ্গে এই মুহূর্তে ১৮ কোটি গ্রাহক যুক্ত রয়েছে। তাঁদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই পিএনবি মেটলাইফ বিভিন্ন প্রোডাক্ট বাজারে নিয়ে এসেছে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ বিমা সম্বন্ধে আগ্রহী। আমাদের রিলেশনশিপ ম্যানেজাররা গ্রাহকদের সমস্যার কথা ভাল করে শুনেই কোনও বিমা কেনার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে ক্লেম সেটেলমেন্টের পরিকাঠামোকেও পোক্ত করেছে তারা। সেটেলমেন্ট যাতে দ্রুত, সহজ এবং সরল হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রাহকের ক্লেম সেটেলমেন্ট নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
কোনও ব্যক্তি কী ভাবে তাঁর জন্য সবথেকে ভাল বিমা পলিসি বেছে নেবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে অশ্বিনী কুমার ঝা জানান, এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে গ্রাহকদের চাহিদার উপরে। প্রচুর পলিসি রয়েছে যা সন্তানের পড়াশুনার খরচ থেকে শুরু করে পেনশন কিংবা সম্পদ সঞ্চয়ের পথ প্রশ্বস্ত করে এবং তা ভাল রিটার্নও দেয়। পাশাপাশি, কম বয়সী এবং নতুন প্রজন্মের গ্রাহকেরা বিমা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং তাঁরা এমন প্রোডাক্ট চান, যা তাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম।
বিমা কেনার সময়ে তথ্য গোপণ থাকলে তা কী ভাবে ক্লেম সেটেলমেন্টের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে?
উত্তরে অশ্বিনী কুমার জানান, বিমার ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে বিশ্বাসের উপর। যদি কোনও তথ্য গোপণ রাখা হয় এবং পরবর্তী সময়ে তা সামনে আসে, তবে তা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উপর প্রভাব ফেলবে।
গ্যারেন্টেড রিটার্ন কী? কেনই বা গ্রাহকদের এটি কেনা উচিৎ?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে, নিখিল শাহ জানান, কোভিডের সময়ে গ্রাহকেরা প্রায়শই এমন পলিসি চাইছেন যার গ্যারেন্টেড রিটার্ন রয়েছে। এটি সমস্ত বয়সের গ্রাহকের জন্য প্রযোজ্য। তবে বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করে গ্রাহকের বয়স, তার আয় এবং তার রিস্ক নেওয়া ক্ষমতা কতটা তার উপর। এই ধরনের পলিসি দীর্ঘ মেয়াদি। এই পলিসির মজা হল, পলিসি করার প্রথম দিন থেকেই আপনি জানেন আপনি পলিসি শেষে ঠিক কত টাকা রিটার্ন পেতে চলেছেন। যারা একটু বেশি টাকা রিটার্ন চান এবং ট্যাক্স ফ্রি রিটার্ন চান, তাদের এই পলিসিতে ইনভেস্ট করা উচিৎ।
বয়স্কদের কি ইউলিপ কেনা উচিৎ?
উত্তরে নিখিল শাহ জানান, যাদের বয়স কম, চাকরি করছে, একটি সুনির্দিষ্ট আয় রয়েছে, অর্থাৎ যুবক যারা, তারা ইউলিপ কিনতেই পারেন। কারণ তাঁদের রিস্ক নেওয়ারও ক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে এও জানিয়েছেন যে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের তিনি ইউলিপ কেনার জন্য কোনও ভাবেই উৎসাহিত করবেন না, যদি না তাঁদের কাছে কোনও বিশাল অঙ্কের টাকা থাকে। এর আরও একটা কারণ হল এই ধরনের পলিসি দীর্ঘমেয়াদি হয়। কম বয়সে ইউলিপ করলে, তার ফল পরবর্তী সময়ে ভোগ করতে পারেন সেই ব্যক্তি।
কেন জীবন বিমা কেনা উচিৎ? কত টাকাই বা কভার নেওয়া উচিৎ গ্রাহকদের?
এর উত্তরে অনুরাগ সোমানি জানান, জীবন বীমা প্রত্যেকের জীবনেই অপরিহার্য। কারণ জীবন বড় অনিশ্চিত। ভবিষ্যৎ এঁকে নেওয়া মুশকিল। তাই বলা যায়, যে কোনও অঙ্কের কভারই কম পড়তে পারে। তবে হ্যাঁ, এই সমস্ত কঠিন সময়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে সাহায্য করতে পারে জীবন বিমা। অর্থাৎ জীবনকে ঘিরে একটা সুরক্ষাকবচ তৈরি করে দেয় জীবন বিমা। পলিসি কেনার নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই। এটি নির্ভর করে সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপরে। আমরা পরামর্শ দিই, যত কম বয়সে পারা যায়, তত কম বয়সে জীবন বিমা কেনা উচিৎ।
ওয়েবিনারটি দেখুন –
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy