সাহসী ১৩ জন নারীর তালিকায় বাংলাদেশের শারমিন। ছবি-সংগৃহীত
মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে নিজের বাল্য বিয়ে ঠেকিয়ে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের হাত থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’ নিলেন বাংলাদেশের ঝালকাঠির মেয়ে শারমিন আক্তার। বুধবার আমেরিকার রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস শ্যাননের উপস্থাপনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে শারমিন আক্তারের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মেলানিয়া ট্রাম্প। চলতি বছর বাংলাদেশের শারমিন আক্তার-সহ মোট ১৩ জন নারী পেলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’। বিশ্বব্যাপী শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে জোরালো ভূমিকা ও সাহসী পদক্ষেপের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে মার্কিন বিদেশ দফতর।
এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টি দেশের সাহসী শতাধিক নারী পেয়েছেন এ সম্মাননা। এর আগে বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে এই সম্মান পেয়েছিলেন সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন। ২০১৬ সালে পেয়েছিলেন আইনজীবী সারা হোসেন। শারমিন আক্তার জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, ‘‘২০১৫-র অগস্টে আমার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মা। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিয়েতে রাজি করার জন্য আমাকে শারীরিক অত্যাচার করা হয়। সেখান থেকে পালিয়ে স্কুলের বান্ধবীদের ঘটনার কথা বলে থানায় যাই। থানা প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। পরে সাংবাদিকদের সহায়তায় মামলা করি। মা এবং ৩২ বছর বয়সী ‘হবু স্বামী’ প্রতিবেশী স্বপন খলিফার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম।’’ এমন খবর জানাজানি হলে শারমিনের মা গোলনূর মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েও রাজি করাতে পারেননি বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এর পর মিথ্যা কথা বলে খুলনায় নিয়ে গিয়ে স্বপনের সঙ্গে মেয়েকে একঘরে আটকে রাখারও অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- তিস্তা নিয়ে চাপ বাড়াতে ঢাকার অস্ত্র চিন
শারমিন আক্তারের কথায়: ‘‘প্রথমে খুলনা থেকে কৌশলে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যাই। পরে আমাকে ঝালকাঠির বাড়িতে আবার আটকে রাখা হয়। ১৬ অগস্ট ফের বাড়ি থেকে পালিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে থানায় মামলা করতে যাই। এর পর পুলিশ মা ও স্বপনকে গ্রেফতার করলে আমাকে দাদির জিম্মায় রাখা হয়।’’ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মেলানিয়া বলেন, ‘‘যখনই নারীর অধিকার খর্ব করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী নিজেও অনেকটা খর্ব হয়ে পড়ে। আর যখনই পৃথিবীর কোথাও কোনও নারী ক্ষমতাশালী হন, আমরাও তাদের সঙ্গে শক্তিশালী হয়ে উঠি।’’
শারমিন আক্তারের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মেলানিয়া ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত
মার্কিন বিদেশ দফতরের ওয়েবসাইটে শারমিন আক্তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘মাত্র পনেরো বছর বয়েসেই শারমিন আক্তার সাহসিকতার সঙ্গে তার মায়ের বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন এবং নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার সুরক্ষিত করেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরনের চাপের মুখে থাকা বহু কিশোরীর জন্য তিনি একটি উদাহরণ তৈরি করেছেন।’ জানা গিয়েছে, শারমিন এখন রাজাপুর পাইলট স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বড় হয়ে তিনি আইনজীবী হতে চান এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে তাঁর প্রচার অব্যাহত রাখতে চান। সম্মান পাওয়া ১৩ জন নারীকে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে আমেরিকা ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল তাঁরা আটলান্টা, ডেনভার, মিনিয়াপোলিস, নিউ ইয়র্ক, পেনসাকোলা, পিটসবার্গ, পোর্টল্যান্ড-সহ বিভিন্ন শহরে ঘুরবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy