গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অশান্তি এবং ক্ষমতার পালাবদলের জন্য পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর বিভাগ আইএসআই-কে দুষলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র করেছে আইএসআই।’’
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া ছাত্রবিক্ষোভ ধীরে ধীরে যে ভাবে হাসিনার অপসারণের লক্ষ্যে ‘এক দফা দাবির’ আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল, তার নেপথ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মদত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আগেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সমানতালে উঠে এসেছে জামাতে ইসলামির নাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল ওই কট্টরপন্থী দল। জামাত কর্মীদের একাংশকেই পাক সেনা সপ্তাহ দুয়েকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে রাজাকার এবং আল বদর ঘাতক বাহিনী বানিয়েছিল বলে অভিযোগ।
স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশে বার বারেই জামাতের ‘পাক সংস্রব’ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মীর জেল, এমনকি মৃত্যুদণ্ডের সাজাও হয়েছে। কোটা আন্দোলন পর্বেই জামাত এবং তাদের জঙ্গি মনোভাবাপন্ন শাখা সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন হাসিনা সরকার। যদিও তত দিনে পরিস্থিতি হাসিনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। শুধু আইএসআই নয়, লস্কর-ই-তইবা-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামাতের যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত শাসনের সময়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গিরা বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করত, এই অভিযোগ বার বার উঠেছে। পরে হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সেই জঙ্গিদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পর হাসিনা নিজেও দেশ ছেড়েছেন। আপাতত তিনি রয়েছেন ভারতে। জয় আগেই দাবি করেছেন, তাঁর মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন কে? আমেরিকা নিবাসী জয় আগেই তাঁর ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা খারিজ করেছেন। যদিও তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগ ফের ঘুরে দাঁড়াবে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই কূটনৈতিক মহলের একাংশের মত। তাঁদের মতে, আইএসআই মদতপুষ্ট জামাতের সক্রিয় হয়ে ওঠা এক দিকে যেমন বাংলাদেশের প্রগতিশীল ধ্যানধারণার জন্য বিপজ্জনক, অন্য দিকে ভারতের জন্য খুবই প্রতিকূল।