গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দিল্লির দূষণের মাত্র ১০ শতাংশ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে খড়বিচালি পোড়ানো ফলে। যানবাহন এবং শিল্প থেকে বায়ু দূষণের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকার কী ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, সোমবার তা জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় সোমাবার দিল্লি সরকার বলে, ‘স্থানীয় স্তরে দূষণের মাত্রা কমাতে সম্পূর্ণ লকডাউনের মতো কড়া পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত দিল্লি। তবে এই পদক্ষেপ তখনই সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য হবে যখন সমগ্র জাতীয় রাজধানী ক্ষেত্র (এনসিআর) এবং তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতেও একই পদক্ষেপ করা হবে। দিল্লির যা আয়তন, তাতে শুধু সেখানে লকডাউন করলে তার তেমন প্রভাব পড়বে না।’
কেন্দ্র এবং পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলির উপর দূষণের দায় চাপানোর এই প্রবণতায় সোমবার উষ্মা প্রকাশ করে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ দিল্লি সরকারের কৌঁসুলিকে বলেন, ‘‘অনর্থক দোষারোপ বন্ধ করুন।’’
আগামী ১৭ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করতে কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারকে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। দূষণ ঠেকাতে দিল্লি এবং লাগোয়া রাজ্যগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশও দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। কেন্দ্র, দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির কর্মীদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের কৌঁসুলী তুষার মেহতাই সোমবার হলফনামায় শীর্ষ আদালতকে জানান, দিল্লিতে দূষণের জন্য খড়বিচালি পোড়ানোর অংশীদারি ১০ শতাংশ।
সোমবার কেন্দ্রের তরফে দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে তিন দফা পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে শীর্ষ আদালতকে। প্রথমত, আগেকার মতো সপ্তাহের দিন নির্দিষ্ট করে জোড়-বিজোড় নম্বর প্লেটের গাড়িকে রাস্তায় নামার অনুমতি দেওয়া। দ্বিতীয়ত, দিল্লিতে ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করা। তৃতীয়ত, লকডাউন শুরু করা।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে দিল্লির দূষণ কমাতে প্রথম জোড়-বিজোড় তত্ত্ব প্রয়োগ করেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় দিনে প্রায় ১৫ লক্ষ গাড়ি চলাচল কমে। কিছুটা নির্মল হয় রাজধানীর বাতাস।
প্রতি বছরই নভেম্বরের গোড়ায় দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে। দীপাবলির বাজি পোড়ানো, পরিবহণ এবং অন্য দূষণের পাশাপাশি অন্যতম কারণ পড়শি উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার কৃষি জমিতে খড়বিচালি পোড়ানো। প্রতি বছরই শীত আসার আগে সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে নতুন ফসল ওঠার সময় পর্যন্ত খেতখামারে শুকনো খড়বিচালি পুড়িয়ে দেন চাষিরা।
গত কয়েক বছরে কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারের জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খড়বিচালি জ্বালানোর সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রের দূষণ চলতি বছর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, দিল্লি লাগোয়া এলাকাগুলিতে এখনও অজৈব বর্জ্য পোড়ানো হয়। ফলে বাড়ে ধোঁয়াশা।
গত সপ্তাহের দেশের রাজধানী এবং আশপাশের এলাকায় বায়ু মান সূচক ৪৫০-এ পৌঁছে গিয়েছে। বায়ু মান সূচক ০-৫০ হলে তা ‘ভাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৫১-১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’, ১০১-২০০ হলে ‘মোটামুটি’, ২০১-৩০০ হলে ‘খারাপ’, ৩০১-৪০০ ‘খুব খারাপ’ এবং ৪০১-৫০০ হলে ‘গুরুতর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।