ধোঁয়াশায় ঢেকেছে দিল্লি। ছবি: রয়টার্স।
ফের দূষণের দখলে দিল্লি। দীপবলির পর থেকে দেশের রাজধানীর বাতাস ক্রমশ দূষণের শিকার হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে পরিবেশবিদদের অনেকেই ১৯৫২ সালের লন্ডনের গ্যাস চেম্বার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা টানতে শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লক ডাউন অস্ত্র প্রয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে কি না, জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
শনিবার দিল্লিতে বায়ু দূষণ সংক্রান্ত একটি মামলায় শুনানিতে লকডাউনের বিকল্পের কথা উঠে আসে। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা কেন্দ্রের কৌঁসুলিকে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ক্রমশ গুরুতর হচ্ছে। আপনারা কী ভাবে মোকাবিলার কথা ভাবছেন? দু’দিনের জন্য লকডাউন করবেন?’’ দূষণ মোকাবিলায় আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সুপারিশ মেনে ইতিমধ্যেই পরিবহণ ব্যবস্থায় রাশ টানা-সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন। পাশাপাশি দূষণ মোকাবিলায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলার কথা বলা হয়েছে দিল্লিবাসীকে। বাইরে বেরলে গলায় স্কার্ফ এবং চোখের জ্বলুনি কমাতে সানগ্লাস পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, ঘরে থাকাকালীনও প্রয়োজন বুঝে মাস্ক পরার কথাও বলা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে দিল্লির বায়ু মান সূচক ছিল ৪৭১। গাজিয়াবাদে ৪৮৬, গ্রেটার নয়ডায় ৪৭৮, গুরুগ্রামে ৪৪৮-এ। প্রসঙ্গত, বায়ু মান সূচক ০-৫০ হলে তা ‘ভাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৫১-১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’, ১০১-২০০ হলে ‘মোটামুটি’, ২০১-৩০০ হলে ‘খারাপ’, ৩০১-৪০০ ‘খুব খারাপ’ এবং ৪০১-৫০০ হলে ‘গুরুতর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রতি বছরই নভেম্বরের গোড়ায় দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে। দীপাবলির বাজি পোড়ানো, পরিবহণ এবং অন্য দূষণের পাশাপাশি অন্যতম কারণ পড়শি উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার কৃষি জমিতে খড়বিচালি পোড়ানো। প্রতি বছরই শীত আসার আগে সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে নতুন ফসল ওঠার সময় পর্যন্ত খেতখামারে শুকনো খড়বিচালি পুড়িয়ে দেন চাষিরা।
গত কয়েক বছরে দিল্লি সরকারের জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খড়বিচালি জ্বালানোর সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রের দূষণ চলতি বছর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, দিল্লি লাগোয়া এলাকাগুলিতে এখনও অজৈব বর্জ্য পোড়ানো হয়। ফলে বাড়ে ধোঁয়াশা।
শুক্রবার দিল্লি সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিসের জন্য নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, শীঘ্রই পরিবহণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা হোক। খুব প্রয়োজন না পড়লে বাইরে বেরোতেও নিষেধ করা হয়েছে শহরের বাসিন্দাদের। দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, প্রয়োজনে লকডাউন ঘোষণা করে যানবাহন এবং শিল্প-দূষণ নিয়ন্ত্রণেরও বিকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।