Ear Cleaning Tips

কাঠি দেওয়া যাবে না, ইয়ারবাড-ও নিরাপদ নয়! কী ভাবে কান পরিষ্কার করতে হবে, জানালেন চিকিৎসক

কাঠ বা প্লাস্টিকের কাঠির মুখে তুলো জড়িয়ে তৈরি করা হয় ইয়ারবাড। তাই আপাত ভাবে এই বাডগুলিকে নিরীহ, নিরাপদ মনে হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন, আসলে এগুলি তেমনটা নয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ১১:১৫
Image of Ear

‘ইয়ারওয়্যাক্স’ বা কানের নিজস্ব ময়লা কিন্তু কানের শক্র নয়। ছবি: সংগৃহীত।

দেশলাই, ধূপ, দাঁত খোচাঁনোর কাঠি কিংবা সেফটি পিন দিয়ে কান খোঁচানো মোটেও ভাল নয়। তাই স্নান সেরে এসে রোজই ইয়ারবাড দিয়ে কান পরিষ্কার করেন। কানে সেই বাড প্রবেশ করানো মাত্রই সারা শরীরে অদ্ভুত আরাম লাগে। সঙ্গে কানে জমা জল, ঘাম, মৃত কোষ, ধুলো, ময়লা, ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গি— সবই পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে কাঠ বা প্লাস্টিকের কাঠির মুখে তুলো জড়িয়ে তৈরি করা হয় ইয়ারবাড। তাই আপাত ভাবে এই বাডগুলিকে নিরীহ, নিরাপদ মনে হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন, আসলে এগুলি তেমনটা নয়। কান, নাক এবং গলার চিকিৎসক উত্তম আগরওয়াল আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “সঠিক পদ্ধতি না জেনে কানে ইয়ারবাড গুঁজলে কানের পর্দার ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরা কখনওই ইয়ারবাড দিয়ে কান পরিষ্কার করার পরামর্শ দিই না।”

Advertisement

আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও নিজের কর্ণকুহর দেখা যায় না। তাই রাস্তার ধারে ছোটখাটো দোকানে ধাতব যন্ত্র দিয়ে কান পরিষ্কার করিয়ে আসেন অনেকে। এই ভাবে কান পরিষ্কার করানো কি ভাল? উত্তমের কথায়, “এখনও পর্যন্ত এমন কোনও যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি, যার সাহায্যে কানের মধ্যে জমা ময়লা বা ওয়্যাক্স পিছন থেকে টেনে বার করা যায়। কান কিন্তু নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখতে পারে। কর্ণকুহরের ভিতর চোয়ালের সঙ্গে কানের যে সংযোগস্থল, খাবার খাওয়ার সময়ে সেখানে একটা দেওয়াল তৈরি হয়। যার ফলে ময়লা বা ওয়্যাক্স কানের আরও গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। চিবোনোর সময়ে মুখের পেশি নড়াচড়া করলে নিজে থেকেই সেই ওয়্যাক্স কানের বাইরে চলে আসে।”

তা হলে কি কান পরিষ্কার করবেন না?

প্রথমেই যে কথাটি মাথায় রাখতে হবে, তা হল— ‘ইয়ারওয়্যাক্স’ বা কানের নিজস্ব ময়লা কিন্তু কানের শক্র নয়। কানের পর্দা সুরক্ষিত রাখার জন্যই শরীর নিজে থেকে ওয়্যাক্স তৈরি করে। কাঠি বা ইয়ারবাড দিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে সেই ময়লাকে ঠেলে নিজেরাই আরও ভিতরে পাঠিয়ে দিই। আর সমস্যার শুরু কিন্তু সেখান থেকেই। তাই কানের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চাইলে কোনও কিছু না করাই ভাল। উত্তম বলেন, “কানের ওয়াক্স সাধারণত তৈলাক্ত প্রকৃতির হয়। প্রকৃতিগত ভাবে কর্ণকুহর আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে এই ওয়্যাক্স। নিয়মিত ইয়ারবাড ব্যবহার করলে কানের ভিতরের চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়ে। নরম, চটচটে ওয়্যাক্স শুকিয়ে যায়। কাঠির খোঁচা লেগে তা কানের আরও গভীরে ঢুকে যেতে পারে। সেখান থেকে সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া অসাবধানে কানের পর্দায় খোঁচা লেগে তা ছিঁড়ে যেতে পারে। কানে কম শোনা, পাকাপাকি ভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।”

Image of Earbuds

‘ইয়ারবাড’ কিন্তু কর্ণকুহরের আর্দ্রতা নষ্ট করে। ছবি: সংগৃহীত।

তবে, কানের ভাঁজে ভাঁজেও তো ময়লা জমে! স্নান করার সময়ে সাবানের ফেনা লেগে তা শুকিয়ে গেলে সেখান থেকে খোসার মতো চামড়া উঠতে থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা পরিষ্কারও করতে হয়। আবার অনেকের কানেই নিজে থেকে ওয়্যাক্স তৈরি হয় না। তা-ও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে কর্ণকুহরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে কী করবেন? এ বিষয়ে চিকিৎসকের মত, বাড়িতে যদি কান পরিষ্কার করতেই হয়, তা হলে নারকেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, রোজ নয়, সপ্তাহে এক বার। এক ফোঁটা করে দু’কানে দু’ফোঁটা তেল দিলে কানের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। কিন্তু কানে যদি আগে থেকেই কোনও সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে তেল একেবারেই নিষিদ্ধ।

কানের ক্ষতি এড়াতে চাইলে কী করবেন, কী করবেন না?

১) কানের বাইরের অংশ সুতির ভিজে কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে সেই কাপড় যেন নরম হয়। চাইলে ওয়েট ওয়াইপ্‌সও ব্যবহার করতে পারেন।

২) কান কিন্তু নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখতে পারে। তবে সেই কাজে সাহায্য করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ কিছু ইয়ার ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩) ইদানীং অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কিনতে পাওয়া যায়। শৌখিন হলেও কানের জন্য সে সব জিনিস একেবারেই নিরাপদ নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement