— প্রতীকী চিত্র।
অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরের জন্য ভাল নয়। তাই ক্যাফেতে গেলেও চায়ের খোঁজ করেন। পারতপক্ষে কফির কাপে চুমুক দেন না। অথচ শরীরের কথা ভেবেই রাতে ঘুমোনোর আগে একটু টুকরো ডার্ক চকোলেট খেয়ে নেন। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, কফি না খেলেও শরীরে ক্যাফিন প্রবেশ করার হাজার একটা উপায় রয়েছে। সময়ে-অসময়ে চা, চকোলেট কিংবা ঠান্ডা নরম পানীয় খেয়েই থাকেন। এই সব খাবারের মাধ্যমেও শরীরে ক্যাফিন প্রবেশ করতে পারে। তবে ক্যাফিন মানেই যে খারাপ তা কিন্তু নয়। তবে কতটা ক্যাফিন খাওয়া যায়, সে বিষয়ে জেনে রাখা ভাল।
কতটা ক্যাফিন শরীরে প্রয়োজন? আর কতটুকুই বা অতিরিক্ত?
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পরিমাপটা ৪০০ মিলিগ্রামের আশপাশে। সেই অনুযায়ী, সারা দিনে যত বারই কফি খান না কেন, তা ৯৫ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ তিন বা চার কাপ। তবে চকোলেটে যে পরিমাণ ক্যাফিন থাকে তার পরিমাণ কিন্তু আলাদা করে ধরতে হবে। আবার, ছোটদের অর্থাৎ চার থেকে ছ’বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপটা দিনে ৪৫ মিলিগ্রাম ধার্য করা হয়েছে। সারা দিনে এক টুকরো ডার্ক চকোলেটে যে পরিমাণ ক্যাফিন থাকে, তাই তাদের জন্য যথেষ্ট। বয়স সাত থেকে ১২ হলে ক্যাফিনের পরিমাণ হবে ৭০ মিলিগ্রাম। কৈশোর অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সিরা ১০০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফিন রোজ খেতে পারে। তবে, তার বেশি একেবারেই নয়।
ক্যাফিনজাতীয় খাবার খাওয়ার পর শরীরে তার প্রভাব কত ক্ষণ পর্যন্ত থাকে?
কফির কাপে চুমুক দেওয়ার পর কিংবা এক টুকরো ডার্ক চকোলেটে কামড় দেওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে ক্যাফিন তার কাজ শুরু করে দিতে পারে। যতটা পরিমাণ ক্যাফিন শরীরে যাচ্ছে তার অর্ধেক পরিমাণের প্রভাব শরীরে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। অর্থাৎ ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন খাওয়ার তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরেও ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফিনের প্রভাব শরীরে থেকে যায়। শরীর পুরোপুরি ক্যাফিনমুক্ত করতে কম-বেশি ১০ ঘণ্টা মতো সময় লেগে যেতে পারে।
অতিরিক্ত ক্যাফিন খাওয়ার খারাপ দিকগুলো কী?
১) রাতে সিরিজ় দেখতে দেখতে বেশ খানিকটা ডার্ক চকোলেট খেয়ে ফেললে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা চলতে থাকলে নিদ্রাহীনতা বা ইনসোমনিয়া কিন্তু আপনার সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে।
২) অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরে গেলে তা বুক ধড়ফড়ানির মতো উপসর্গ বাড়িয়ে তুলতে পারে। যা শারীরিক অস্বস্তি তো বটেই, মনকেও অশান্ত করে তোলে। কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হতে পারে।
৩) অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে? ক্যাফিনজাতীয় খাবার এবং পানীয় কিন্তু গলা-বুক জ্বালার সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফিন হজম ক্ষমতাও দুর্বল করে দেয়।
তা হলে কি জীবন থেকে কফি, ডার্ক চকোলেটের মতো খাবার একেবারে বাদ দিয়ে দিতে হবে?
এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে পছন্দের ক্যাপুচিনো, লাতে কিংবা আমেরিকানো থেকে একেবারে নিষেধ করছেন না পুষ্টিবিদেরা। তবে মাথায় রাখতে বলছেন তিনটি বিষয়। কোন সময়ে খাচ্ছেন, ক্যাফিনের পরিমাণ কতটা এবং শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে কি না। অর্থাৎ কফি খেয়ে ঘুম চোখ খোলার অভ্যাস থাকলে তা ছাড়তে হবে। সকালে এই পানীয় না খেয়ে বিকেলের দিকে আমেরিকানো খেলে রাতে ঘুমের কোনও সমস্যা হবে না। কতটা পরিমাণ ক্যাফিন শরীরে যাচ্ছে তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে দিতে পারে। তাই শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে কি না সেই দিকেও নজর রাখা জরুরি।