কালো প্লাস্টিক কেন বিপজ্জনক? কী কী থাকে এতে? ছবি: ফ্রিপিক।
দোকান-বাজার করা থেকে শুরু করে রান্নার হাতা-খুন্তি বা পাত্র, বেশির ভাগই কি কালো প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি? রোজ যত রকম প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করেন, তার মধ্যে যদি কালো প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি হয়, তা হলেই বিপদ। সম্প্রতি ‘সায়েন্টিফিক জার্নাল অফ কেমোস্ফিয়ার’ নামে বিজ্ঞানপত্রিকায় একটি গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেছেন, কালো প্লাস্টিকে প্রায় ১৬ হাজার রকম রাসায়নিক থাকে যার সিংহভাগই মানব শরীরের জন্য বিষ। এই সব রাসায়নিকের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে হার্ট, কিডনি ও মস্তিষ্কে। এমনকি, তা মারণ রোগ ক্যানসারেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বিডিআর ফার্মাসিউটিক্যালসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর অরবিন্দ বাডিজার জানিয়েছেন, কিছু প্লাস্টিকের ব্যাগে ইচ্ছাকৃত ভাবে কালো রং করা হয়। কারণ, বার বার প্রক্রিয়াকরণের ফলে ওই প্লাস্টিকের অবস্থা এমনই হয় যে, কালো রং না করলে ক্রেতারা তা নিতেই চাইবেন না। অর্থাৎ প্লাস্টিকের গুণমানের ত্রুটি ঢাকতে তাতে কালো রং করা হয়। আর সেই রঙে থাকে ক্যাডমিয়াম, লেড, নিকেল, ক্রোমিয়াম ও পারদের মতো ভারী ধাতু। কালো রঙের প্লাস্টিকের ব্যাগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাঁচা আনাজ বা মাছ-মাংস বহন করেন অনেকে। এতে প্লাস্টিকের রাসায়নিক সহজেই খাবারে মিশে যেতে পারে। আবার কালো রঙের প্লাস্টিকের পাত্রে রান্না খাবার রাখলে অথবা সেই খাবার বার বার প্লাস্টিক-সমেত মাইক্রোঅয়েভ অভেনে গরম করলে, তাতে বিষক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্বের অন্য দেশে ১০-১৫ শতাংশ প্লাস্টিকের খুব বেশি হলে এক থেকে দু’বার পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ হয়। সেখানে এ দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ প্লাস্টিকই পুনর্প্রক্রিয়া কৃত। সেই সংখ্যা অনেকসময় দশ বারও ছাড়িয়ে যায়। কালো রঙের প্লাস্টিক হল প্রক্রিয়াকরণের একেবারে শেষ ধাপ। বার বার প্লাস্টিক গলানোর ফলে তার গুণমান শুধু নষ্ট হয় না, তা দুর্বলও হয়ে পড়ে। তখন সেই প্লাস্টিককে শক্তিশালী করতে তাতে ফের কার্বন ও অন্য উপকরণ মেশানো হয়। তখন ওই প্লাস্টিক আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অথচ বাজারে এমন প্লাস্টিকের ব্যাগই রমরমিয়ে চলছে। রান্নার হাতা-খুন্তি থেকে টিফিন বাক্স— বেশির ভাগই তৈরি হচ্ছে কালো বা রঙিন প্লাস্টিক দিয়েই। আর এই ধরনের প্লাস্টিকই ক্যানসার, হার্টের রোগ, কিডনির জটিল অসুখের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেই দাবি গবেষকদের।