WB School Teachers

স্কুলের নামে অন্য কাজে ব্যস্ত শিক্ষকরা? নজরদারি শিক্ষা দফতরের, চিঠি প্রধান শিক্ষকদের

শিক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়নি, কী অভিযোগ রয়েছে, কেন এই নজরদারি? পাশাপাশি, প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সেখানে, এই নির্দেশ নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ছে।

Advertisement
অরুণাভ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ১৫:২৪

প্রতীকী চিত্র।

স্কুল চলাকালীন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা অন্য কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এই মর্মে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিই সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ আকারে জেলা পরিদর্শকরা পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

অতীতে দেখা গিয়েছে, স্কুল শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ স্কুলের কাজের বাইরেও অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই মর্মে শিক্ষা দফতরের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এরকমই একটি অভিযোগ হল, স্কুলে এসেও শিক্ষকরা ক্লাসে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন নিয়ে অতোটাও আগ্রহ দেখান না। বরং প্রাইভেট টিউশন, ভোকেশনাল টিউশন বা বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার ক্ষেত্রে তাঁদের বেশি আগ্রহ দিতে দেখা যায়। তাতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় পড়ুয়াদের।

এ প্রসঙ্গে, বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “২০১৮ সালে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের জন্য যে আচরণ বিধি চালু করা হয়েছিল তাতে এ ধরণের কথা বলা আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার এই আচরণবিধি নতুন করে কার্যকরী করার ক্ষেত্রে কতটা আগ্রহী? কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, শাসক ঘনিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরাই এই ধরণের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে। তাই সরকারের উচিত নিজেদের সমর্থক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের আগে সংযত করা, তাহলেই বাকিরা শুধরে যাবে।”

তবে শিক্ষক মহলের একাংশের এও বক্তব্য, যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে পরিষ্কার উল্লেখ নেই কী অভিযোগ রয়েছে, কেন এই নজরদারি? পাশাপাশি, প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সেখানে, এই নির্দেশ নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “এই বিজ্ঞপ্তির ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন। অনেক বিদ্যালয় প্রধান নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে শিক্ষকদের অন ডিউটি দিয়ে তাঁদের পেশাগত সমস্যা মেটানোর জন্য জেলা পরির্দশকদের অফিসে পাঠায়। স্বাভাবিক ভাবেই সেই শিক্ষকের ক্লাসগুলি ‘প্রভিশনাল রুটিন’-এর নামে নথিভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে, এই পন্থা অবলম্বন করার পথও বন্ধ করা প্রয়োজন। ক্লাস যাতে সঠিক ভাবে হয়, সে ব্যাপারে সকলের উদ্যোগী হওয়া দরকার।”

বিভিন্ন জেলা পরিদর্শকদের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর স্কুলের কাজ বাদ দিয়ে এমন কিছু কাজ করছেন, যা তাঁদের পেশাগত ভাবে করা উচিত না। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের এর জন্য বিভিন্ন সময়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তাই শিক্ষা দফতরের তরফে থেকে কড়া পদক্ষেপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর জন্য জেলা পরিদর্শকের নেতৃত্বে ছোট ছোট দল তৈরি করে স্কুলগুলিতে নজরদারি চালানো হবে। এ বিষয়ে নদিয়ার জেলা পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, “উচ্চস্তরে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল থেকে এই ধরনের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। তার ভিত্তিতেই এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে, যাতে স্কুলে কাজের সময় পঠনপাঠনের বাইরে শিক্ষকরা অন্য কোথাও মনোনিবেশ না করে।”

অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক শিক্ষাকর্মীরা তাদের প্রাপ্য ছুটি নিয়ে কোথায় কী করবে, সেই বিষয়টির নজরদারি প্রধান শিক্ষকরা করবেন কী ভাবে? স্কুলের সময় কাজ ফাঁকি দিয়ে কে কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে, এই বিষয়ে নজরদারি স্কুল জেলা পরিদর্শকদেরই চালাতে হবে। প্রধান শিক্ষকরা এই নজরদারির কাজ করলে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।”

এই বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার করে উল্লেখ করা রয়েছে, সরকারি কোনও নির্দেশ, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজ ছাড়া অন্য কোনও কারণ দর্শিয়ে ছুটি নিলে, প্রধান শিক্ষক বা স্কুলের কার্যকরী সমিতির কাছে তাঁকে অনুমতি নিতে হবে। কেউ এই নিয়ম না মানলে তাঁকে বিভাগীয় তদন্তের আওতায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি, প্রত্যেক মাসে প্রধান শিক্ষকদের সেই শিক্ষক বা শিক্ষককর্মীকে এই সংক্রান্ত তথ্য স্যালারি রিকুইজেশন স্লিপের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের কাজ শিক্ষা দান করা। তার বাইরে স্কুল চলাকালীন অন্য কাজের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত হওয়াই উচিত নয়। আশা করি শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল।”

আরও পড়ুন
Advertisement