হুল বিদ্রোহ থেকে সাঁওতালি সংস্কৃতির প্রদর্শনী কলকাতায়, উদ্যোগী যাদবপুরের গবেষকরা

সাঁওতাল উপজাতির ১৭০ বছরের ইতিহাসে সাঁওতালি ভাষা সংক্রান্ত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, নথির পাশাপাশি খেলাধুলো এবং সংস্কৃতি চর্চার বিবরণ ফুটে উঠেছে।

Advertisement
অরুণাভ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫৪
সাঁওতালি ভাষা সংক্রান্ত  পাণ্ডুলিপি এবং নথির প্রদর্শন।

সাঁওতালি ভাষা সংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি এবং নথির প্রদর্শন। নিজস্ব চিত্র।

স্কুল অফ কালচারাল টেক্সট অ্যান্ড রেকর্ডস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে হুল এবং সাঁওতালি ভাষা সংস্কৃতি ও নথি নিয়ে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার যদুনাথ ভবন মিউজি়য়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারে। ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহের আগে ঘটা হুল বিদ্রোহ কী ভাবে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে সাঁওতাল জনজাতিকে যুক্ত করেছিল, তার সবিস্তার বিবরণ থাকছে সেখানে। গত ৩০ জুন থেকে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। চলবে ৬ জুলাই, অর্থাৎ আগামীকাল, শনিবার পর্যন্ত।

Advertisement

সাঁওতাল জাতির ১৭০ বছরের ইতিহাসে সাঁওতালি ভাষা সংক্রান্ত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, নথির পাশাপাশি খেলাধুলো এবং সংস্কৃতি চর্চার বিবরণ ফুটে উঠেছে। ব্রিটিশ লাইব্রেরির আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি নরওয়ের রাজধানী অসলোর জাতীয় গ্রন্থাগার থেকে সংগ্রহ করা সাঁওতালি ভাষার পাণ্ডুলিপি, নথিও প্রদর্শিত হচ্ছে এই প্রদর্শনীতে।

প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ কালচারাল টেক্সট অ্যান্ড রেকর্ডস-এর চার গবেষক অমৃতেশ বিশ্বাস, রাহি সরেন, সীতারাম বাস্কে এবং শ্রুতকৃতি দত্তের গবেষণায় এই তথ্যগুলি সামনে এসেছে।

প্রসঙ্গত, ২০ বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল অফ কালচারাল টেক্সট অ্যান্ড রেকর্ডস-এর প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এই বিভাগের ডিরেক্টর অধ্যাপক অভিজিৎ গুপ্ত। সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিভিন্ন অডিয়ো তথ্য নিয়ে গবেষণা করলেও এই প্রথম পাণ্ডুলিপি ও নথি নিয়ে গবেষণার আয়োজন করেছে।

২০২১ সাল থেকে গবেষণার কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং বাংলার বিভিন্ন স্থানে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান চলে। সাঁওতালি ভাষা-সংস্কৃতি এবং হুল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নথি বা ইতিহাস সংরক্ষণ করছেন, এমন শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এই চার গবেষক। মুখ্য গবেষক রাহি সরেন বলেন, “শুধু প্রদর্শন নয়, এই পাণ্ডুলিপি বা নথি ডিজিটাইজও করা হয়েছে। ইএপি ১৩০০ কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে এই ডিজিটাল নথি মানুষ পড়তে এবং জানতে পারবেন। প্রায় ৫,০০০-এর বেশি নথি সংগ্রহ করা হয়েছে।”

১৯৩১ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন নথি এবং পাণ্ডুলিপি রয়েছে প্রদর্শনীতে। রাহীর কথায়, "আমরা মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করি, কিন্তু একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত থাকি না। এই গবেষণা একটা পরিসর একে অপরকে জানার। সে বিদ্রোহের কাহিনি হোক বা কোনও জাতির ইতিহাস, তার সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল হতে পারি।"

প্রসঙ্গত, নরওয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার পরিদর্শন করা হয় এই গবেষণা চলাকালীন। যেখানে সাঁওতালি ভাষার সবচেয়ে বড় আর্কাইভ রয়েছে।

১৯০৫ সালের একটি চুক্তিতে বলা হয়েছে, সাঁওতালি ভাষা কী ভাবে লেখা হয়েছিল, তা সোনা মুর্মু এবং সংগ্রাম মুর্মুর হাতে লেখা নথিতে পাওয়া যায়। নরওয়ে মিশনারিজ়দ্বয় লার্স ওলসেন স্ক্রেফসার্ড এবং পল ওলাফ বডিং-এর লেখাতেও নরওয়েজিয়ান, ড্যানিশ এবং সাঁওতালির উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়াও এ রকম আরও কিছু নথি সংগ্রহ করেছেন বহরমপুরের ডাবলু সোরেন এবং বান্দোয়ানের মহাদেব হাঁসদা। সেই নথিগুলি ডিজিটাইজ় করে প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, সাঁওতালি সাহিত্যে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু এবং সাধু রামচাঁদ মুর্মুর অবদানের বিভিন্ন নির্দশনও দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেবনাগরী, বাংলা, রোমান উইথ ডায়াক্রিটিক্স এবং অলচিকি— এই চারটি লিপিতে সাঁওতালি ভাষা লেখা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন
Advertisement