বলিউডে ‘বহিরাগত’ ছিলেন তিনি। পরিবারের কেউ ফিল্মজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি নিজেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু অর্থাভাবে সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। উপার্জনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রও সারাই করতে হয়েছিল ইরফান খানকে।
১৯৬৭ সালের জানুয়ারি মাসে রাজস্থানে জন্ম ইরফানের। শৈশব থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন তিনি।
জয়পুরের ক্রিকেট দলে খেলতেন ইরফান। টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে সেই সুযোগ হারাতে হয়েছিল তাঁকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ইরফান বলেছিলেন, ‘‘টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে গেলে ৬০০ টাকা দিতে হত। কিন্তু আমার কাছে তখন যাতায়াতের জন্যও টাকা ছিল না। কার কাছে টাকা চাইব তা-ও বুঝতে পারছিলাম না। অর্থাভাবে আর ক্রিকেট খেলা হল না আমার। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নও অধরা থেকে গেল।’’
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল ইরফানের। তাঁর মামা নাট্যজগতের শিল্পী ছিলেন। জোধপুরে একটি নাটকের দল ছিল ইরফানের মামার। মামাকে দেখেই অভিনয়ের নেশা তৈরি হয়েছিল ইরফানের।
জয়পুর থেকে কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮৪ সালে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন ইরফান। অভিনয় শিখবেন বলে সেখানে গিয়ে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ইরফান জানিয়েছেন, ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় ভর্তিবাবদ ৩০০ টাকা দিতে হত। তাঁর কাছে সেই টাকাও ছিল না। অথচ অভিনয় শেখার প্রবল ইচ্ছা ছিল তাঁর। শেষ পর্যন্ত তাঁর দিদি টাকা দিয়ে সেখানে ভর্তি করিয়েছিলেন ইরফানকে।
অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন বলে দিল্লি থেকে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন ইরফান। উপার্জনের জন্য এসি সারাইয়ের কাজও করতেন তিনি।
১৯৮৭ সালে দিল্লির কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর মীরা নায়ার পরিচালিত ‘সালাম বম্বে!’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রেখেছিলেন ইরফান। কিন্তু ছবি মুক্তির আগে তাঁর অভিনীত কিছু দৃশ্য কাঁচি চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
একাধিক হিন্দি ধারাবাহিক এবং হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ইরফানকে। ২০০৫ সালে ‘রোগ’ ছবির হাত ধরে প্রথম মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন ইরফান।
‘দ্য নেমসেক’, ‘লাইফ ইন অ্যা…মেট্রো’, ‘পিকু’র পাশাপাশি বহু ছবিতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন ইরফান। ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়র’, ‘লাইফ অফ পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’-এর মতো হলিউডি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
শাহরুখ খান, সলমন খান এবং আমির খান ছাড়াও বলিউডের ‘খান’দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন ইরফান। তিন দশক বলিপাড়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ইরফান। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে সমগ্র বলিপাড়া।
পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে পদার্পণ করেন ইরফানের পুত্র বাবিল খান। ইতিমধ্যেই ওটিটির পর্দায় ‘কলা’, ‘ফ্রাইডে নাইট প্ল্যান’ নামের ছবির পাশাপাশি ‘দ্য রেলওয়ে মেন’ নামের ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাবিল।
সব ছবি: সংগৃহীত।