Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Hazaribagh Folk Art

হাজারিবাগের লোকশিল্পের স্বতন্ত্রতা আজও অক্ষত, মুগ্ধ করে দেওয়াল চিত্রের কারুকাজ

হাজারিবাগের অরণ্য গ্রামগুলিতে চিত্রিত শিল্পের বেশিরভাগ আধা-হিন্দু বর্গের অন্তর্গত হলেও দেওয়াল চিত্রগুলিতে কোনও হিন্দু দেব-দেবীর উপস্থিতি দেখা যায় না।

ছবি সংগৃহিত

ছবি সংগৃহিত

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪০
Share: Save:

হাজারিবাগের লোকশিল্প হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। হাজারিবাগের অরণ্য গ্রামগুলিতে চিত্রিত শিল্পের বেশিরভাগ আধা-হিন্দু বর্গের অন্তর্গত হলেও দেওয়াল চিত্রগুলিতে কোনও হিন্দু দেব-দেবীর উপস্থিতি দেখা যায় না। আদিম উপজাতিরা ধর্মনিরপেক্ষভাবে নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছে। এদের মধ্যে রয়েছে মুণ্ডা, ওরাওঁ, অসুর, আগরিয়া, সাঁওতাল, খারওয়ার, হো, সাওরা, ভুইয়া, বিরহর, কোল, কোরওয়া প্রমুখ। গাঞ্জু এবং অন্যান্য উপজাতীয় গোষ্ঠী যেমন প্রজাপতি এবং কুমহার (কুমার) এবং অন্যান্য সম্প্রদায় যেমন কুর্মি, প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী দেওয়ালচিত্র শিল্প রয়েছে।

মহিষ প্রথম পশু, যার পূজা প্রচলিত হয়। সোহরাই বা ফসল কাটার উৎসবের সময়ে ষাঁড়, গরুর এবং বিভিন্ন গবাদি পশুদের উদ্দেশ্যে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। দুর্গাপুজোর সময়ে মহিষকে মহিষাসুর হিসাবে চিহ্নিত করে দুর্গাকে দিয়ে হত্যা করানো হয়। আবার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে গ্রামের মহিলারা মহিষকে সাজিয়ে পুজো করে!

ছবি সংগৃহিত

ছবি সংগৃহিত

সোহরাই-এর প্রাচীনতম অর্থ হল গবাদি পশু ধরা। প্রোটো-অস্ট্রেলয়েড মুন্ডারিক ভাষায় 'সোরো' মানে একটি ছোট লাঠি দিয়ে দরজা আটকানো। 'সোহ' অর্থ একটি ছোট লাঠি, যা গবাদি পশু চড়ানোর সময়ে পাখি বা প্রাণীদের তাড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

সোহরাই পেইন্টিং-এ জ্যামিতিক চিত্র, প্রাণী, ফুল এবং উদ্ভিদের মতো মোটিফগুলি ব্যবহৃত হয়, সেই সঙ্গে পশুপতি, প্রাণীদের অধিপতি, জুমরফিক চিত্র ব্যবহৃত হয় যা শিবের একটি রূপ।

সোহরাই উৎসবে প্রভু রামকে অযোধ্যায় স্বাগত জানানো হয়। গ্রামীণ চেতনায় তিনিই প্রথম বন্য গবাদি পশুকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। আমাদের বনের গ্রামগুলির অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে গরু, ষাঁড় এবং মহিষের উপর নির্ভর করে। লাঙল চালায় ষাঁড়, গবাদি পশুর দুধ ব্যবহৃত হয়, গরুর গোবর ক্ষেতের ফসলের জন্য সার হিসাবে অপরিহার্য। গ্রামীণ জীবনের অর্থনীতিতে গবাদি পশু অপরিহার্য। এই কারণেই সারা ভারতে গরুকে দেবতা হিসাবে পুজো করা হয়।

ছবি সংগৃহিত

ছবি সংগৃহিত

জোরাকাঠের কুর্মি কম্ব আর্ট- হাজারিবাগের পার্বত্য গ্রামে কালো কালীমাটি দিয়ে মাটির দেওয়াল ঢেকে মাটি প্রস্তুত করা হয়। এই অঞ্চলের ধূসর-হলুদ মাটির আবরণকে 'পিলা-মাটি' বলা হয়। তার পর চিরুনি দিয়ে বড় প্রাণীর আকারের টুকরো কেটে বন্য প্রাণীর রূপ দেওয়া হয়, যেমন হাতি, বাঘ, হরিণ, ময়ূর। এই বিশেষ শিল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল 'এক্স-রে ফর্ম', যেখানে পশুশাবকগুলিকে মায়ের ভিতরে দেখানো হয়েছে। মানুষ-প্রাণীর দ্বন্দ্ব দৃশ্যও এখানে দেখা যায়।

পুতলি গাঞ্জুর শিল্পকলা- গাঞ্জু চিত্রকলার নিজস্ব স্বতন্ত্র বন্য ও গৃহপালিত প্রাণীর রূপ এবং অনন্য জঙ্গল উদ্ভিদের রূপ। ফসল কাটার পাশাপাশি বিয়ের মরসুমে তারা জঙ্গলের প্রাণী ও পাখির সুন্দর বড় চিত্র এবং বিদেশি উদ্ভিদের চিত্র দিয়ে তাদের ঘর সাজায়। গাঞ্জু ঘরগুলি বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী এবং ময়ূর, হাতি, বাঘ, কুমির, সাপ, শেয়াল, গাছপালা ইত্যাদির মতো পাখির রূপ দিয়ে আঁকা হয়ে থাকে।

ওড়িয়া গ্রামের ঘাটওয়াল সোহরায় আঁকা বাড়ি- ঘাটওয়াল শিল্প অনন্যতার দাবি রাখে। ঘাটওয়ালরা তাদের মাটির দেওয়াল ঘেরা টালির ছাদের ঘরগুলিতে লাল, সাদা, কালো এবং নীলরঙের বড় পিপল পাতা, ষাঁড় এবং অন্যান্য প্রাণীর সমন্বয়ে একটি চিত্রশিল্প সৃষ্টি করে। ষাঁড়ের পিঠে শিবের ছবি দেখা যায়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কুকুরের পিঠেও দেখা যায়। ঘাটোয়ালরা শিব-ভৈরব সম্প্রদায়ভুক্ত, যারা ভৈরব এবং ভবানীকেs কুকুরের পিঠে পুজো করে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE