ছবি: লেখক
হরিদ্বার থেকে গাড়ি নিন। রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে চোপতার পথে, উখিমঠ পেরিয়ে সারি গ্রামে গাড়ির দৌড় শেষ। এবার পালা চোট্ট হাঁটা। সারি গ্রামে অনেক ভ্রমণ-পরিচালক (ট্যুর অপারেটর) পাবেন, যারা দেওরিয়া তালে তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। তাঁবুতে থাকতে আপত্তি থাকলে সারিতে অনেক হোটেল পাবেন একটা রাত কাটানোর মতো।
কিছু মুখে দিয়ে হাঁটা শুরু করুন, ২.৫ কিমি দূরে দেওরিয়া তালের পথে। পাথুরে রাস্তা, মোটামুটি চড়াই। সবচেয়ে সমস্যা এলোমেলো ছড়ানো পাথর। একটু অন্যমনস্ক হলে পা মচকানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে ধীরে ধীরে চলুন। কেউ এগিয়ে গেলে যাক, রাস্তা একটাই, পথ হারানোর ভয় নেই।
সারি নিজেও খুব সুন্দর। শুধু সারি গ্রাম থেকে কেন, পুরো হাঁটা রাস্তাতেই আন্দাজ করা যায় না ধীরে ধীরে যে শৈলশিরাকে আপনি টপকাতে টপকাতে হাঁটছেন তার পিছনে কী বিস্ময় লুকিয়ে আছে! গন্তব্যে পৌঁছে জঙ্গলে ঘেরা বরফ-চূড়ার ছবি বুকে নিয়ে উজ্জ্বল দেওরিয়া তালের রূপ বাকরুদ্ধ করে দেয়।ছবি
সারিতে কথা বলে নিলে আপনি দেওরিয়া তাল পৌঁছনোর আগেই তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, টয়লেট-টেন্ট, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। রাতের খাবারও তাঁবুতে পাবেন। সামনেই হ্রদ। হ্রদটাকে এক চক্কর ঘুরে নিন পায়ে পায়ে। তার জলে আধডোবা গাছের কঙ্কাল এক অপূর্ব শিল্প। বিদায়ী সূর্যের নরম আলোয় টলটলে জল, চারপাশের জঙ্গল মিলিয়ে এক দড় চিত্রকরের ছবি বুঝি! সূর্য ডুবতেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। কিন্তু তাঁবুতে থাকবেন কী করে! নিঝুম অন্ধকারে আকাশ ভরা তারা যে হাতছানি দেবে, কী করে এড়াবেন তাকে। মনে হয় আকাশটা যেন নীচে নেমে এসেছে! পায়ের নীচে ঘাস শিশিরে জবজবে ভিজে, উপেক্ষা করে বসে পড়ুন। নিঃশব্দ সময় অপলকে চেয়ে থাকে তারার আলোয়। কতটা সময় এ ভাবে কেটে যাবে কে জানে! খেয়ে এসে ও বসে থাকুন যতক্ষণ না ঠাণ্ডা অসহনীয় হয়।
যারা দেওরিয়া তাল যাবেন তাদের অনুরোধ করব, একটা রাত অবশ্যই কাটান, সারা জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে। সন্ধে আর রাত কেটে সকাল হবে তার আপন মহিমায়। একটু একটু করে সূর্যের আলো মেখে খুলে যাবে চৌখাম্বা সহ আরও কত শৃঙ্গ, লেকের জলে তাদের ছায়া পড়বে, আকাশের নীল আর ঘাসের, জঙ্গলের সবুজ আলো মেখে সগর্বে তাকিয়ে থাকবে আপনার দিকে। নাম জানা না জানা কত পাখির ডাক, তারা আপনাকে পাত্তাই করবে না। তাকিয়ে থাকতে থাকতে সময় কেটে যায়, এক সময় সকালের খাবার ডাক জানান দেয় ফেরার সময় হল। একই পথে ধীরে ধীরে নেমে আসুন। রাস্তায় দেখা পাবেন নীল গিরগিটির। তাদের সাথে দেখা করতে করতে ২.৫ কিলোমিটার রাস্তা হুশ করে ফুরিয়ে যাবে। বাজি ধরতে পারি ততক্ষণে আপনি দেওরিয়ার প্রেমে পড়ে গেছেন।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy