Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Shaktipeeth in Bangladesh

মেয়ে পরল শাঁখা, চির এয়ো হয়ে রইল করতোয়াতট, জেনে নিন ভবানীপুরের করতোয়াপট শক্তিপীঠের কথা

ভবানীপুরের পোড়ো মন্দিরের পাশের পুকুরে বসে ঝোলা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন শাঁখারী। সিঁথি জোড়া সিঁদুর নিয়ে ছোট এক মেয়ে তার সামনে। ভারী মায়া সে মুখে। সে নাকি নাটোর রাজবাড়ির রাজকন্যা।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫৮
Share: Save:

“তুমি রাজবাড়ি গিয়ে দাম নাও না কাকা। মা-কে বলো না, মা দাম দেবে গো…” অনেক প্রশ্ন আসছিল মনে, কিন্তু এমন মায়াময় মুখখানা দেখে কথা জোগাল না। সামনেই রাজবাড়ি। এগিয়ে চললেন শাঁখারি।

ভবানীপুরের পোড়ো মন্দিরের পাশের পুকুরে বসে ঝোলা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন শাঁখারী। অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন, জঙ্গল পাতলা হয়েছে। এই বার গ্রাম শুরু। নাটোর রাজবাড়ি সামনেই। ভাবতে ভাবতে শরীর ভারী হল। ঘুম এল চোখ জুড়ে। একটু তন্দ্রা এসেছে কেবল, চুড়ির রিনরিন আওয়াজে তন্দ্রা ভেঙে গেল।

সিঁথি জোড়া সিঁদুর নিয়ে ছোট এক মেয়ে তার সামনে। ভারী মায়া সে মুখে। সে নাকি নাটোর রাজবাড়ির রাজকন্যা। বিয়ের পরে বাপের বাড়ি এসে সখীদের সঙ্গে বেড়াতে বেড়িয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে শাঁখা বাড়িয়েছে। এখন লজ্জায়, ভয়ে আর ঘরে ফিরতে পারছে না। করুণ করে তাকাল মেয়ে শাঁখাওলার দিকে। শাঁখাওয়ালা মুগ্ধ হয়ে কন্যাকে দেখছিলেন। তাঁরও যে অমন এক মেয়ে আছে ঘরে। কী ভেবে একজোড়া শাঁখা দিয়ে দিলেন। কিন্তু মেয়ে তো রাজরানি। শাঁখার দাম না দিয়ে ছাড়বে কেন! বলল, রাজবাড়ি গিয়ে তার নাম করে দাম নিয়ে আসতে। শাঁখাওয়ালা দোনামনা করে গেলেন রাজবাড়িতে।

মা ভবানী মন্দির

মা ভবানী মন্দির

ভাগ্যক্রমে দেখা পেলেন রানির। শাঁখাওয়ালার মুখ থেকে ছোট মেয়েটির কথা শুনে রানি তো অবাক! তাঁর মেয়ে কই! লোকলস্কর সেই শাঁখাওয়ালাকে পুকুরপাড়ে নিয়ে গেলেন। কোথায় কী? রানিকে মিথ্যে বলা! ক্রোধে লাল হল রানির মুখ।

শাঁখাওয়ালা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন কী ঘটেছে! কেঁদে পড়লেন মায়ের কাছে। মহারানী ও সমবেত জনগণ পরম বিস্ময়ে দেখলেন, সেই পুকুর থেকে শাঁখা পরা দুই হাত উঠে আসছে৷ সে হাতের আঙুল মৃণালের মতো, পদ্মরঙা হাতের তালু… এ যে মানুষের নয়। জয়ধ্বনি উঠল মা ভবানীর…

নাটোর রাজপরিবার থেকে এই পুকুরের সংস্কার করা হল। পুকুর খ্যাত হল শাঁখা পুকুর নামে। মা-কে শাঁখা পরিয়ে অমর হলেন সেই শাঁখারি।

পীঠনির্ণয়তন্ত্রে বলছে –

"করতোয়াতটে তল্পং বামে বামনভৈরবঃ।

অপর্ণা দেবতা তত্র ব্রহ্মরূপা করোদ্ভবঃ।।"

অর্থাৎ,

এখানে দেবী সতীর বামতল্প ( পৃষ্ঠদেশ) পতিত হয়েছিল। দেবী এখানে অপর্ণা নামে বিরাজ করছেন। দেবীর ভৈরব হলেন বামন।

কবি ভারতচন্দ্র অন্নদামঙ্গলে লিখেছেন-

"করতোয়াতটে পড়ে বামকর্ণ তার।

বামেশ ভৈরব দেবী অপর্ণা তাহার।।"

ভারতচন্দ্রের মতে এখানে দেবীর বামকর্ণ পতিত হয়েছিল। তবে, পীঠনির্ণয় তন্ত্রের ভাষ্যটিই নেওয়া হোক। এখানে দেবী সতীর পৃষ্ঠদেশ/ পঞ্জর পতিত হয়েছিল।

মা অপর্ণা

মা অপর্ণা

অধুনা বগুড়া- শেরপুরের এই ভবানী পীঠ সম্পর্কে ধারণা এতটুকুই পাওয়া যায় যে, এটি খুব প্রাচীন। তন্ত্রসাধনার কেন্দ্র কাছিমাবস্থান। বর্তমানে কেবল এখানে দেবী অপর্ণার বস্ত্রে আচ্ছাদিত সোনার মুখমণ্ডল দেখা যায়। তবে এই মূর্তি প্রাচীন কালীকা।

মন্দিরের কাছে ভূমিতল থেকে কিছুটা নীচে কুয়োয় ভৈরব বামনের অবস্থান করছেন। এঁকে পাতাল ভৈরব নামেও ডাকা হয়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE