যোগীন্দ্র মনীন্দ্র ইন্দ্র
যে পদ না ধ্যানে পায়,
নির্গুণ কমলাকান্ত
তবু সে চরণ চায়/ শ্যামাধন কী সবাই পায়। - সাধক কমলাকান্ত
কালী লেপা গভীর রাত্রি। সাধনায় নিমগ্ন হয়ে মাসের পর মাস নিদ্রাহীন রাত কাটে সাধকের।
এই ভীষণ শ্মশানের রাত্রিকালীন ভীষণ শৃগাল
-রব, অচেনা ভীতিকর শব্দ আর বিদ্ধ করে না দয়ালঠাকুরকে।
মাতৃ চেতনা তাঁর ভয় কেড়েছে। কেবল, মা'কে একটি বার দেখতে চান। আর কিচ্ছু নয়।
সহসা তাঁর সেই পর্ণ কুটিরে টোকা জাগে। সাধনার গভীর হতে দেহ খোলসের বাইরে আসতে সময় লাগে। ততক্ষণ অস্থির টোকা জেগেছে তাঁর দরজায়।
প্রদীপ হাতে বেরিয়ে আসেন ঠাকুর। এরা কারা!
সমবেত জনতার বেশভূষা বলে দিচ্ছে তারা, দুর্দান্ত ডাকাত!
ডাকাত ছাড়া এই গভীর রাত্রিতে এ প্রচন্ড শ্মশান ভূমিতে আসার সাহস তো কারও হবে না।
মৃত্যু ভয়-টয় তাঁর নেই। আগে ছিলেন বৃটিশদের সঙ্গে, এখন মায়ের চরণে।
আর তা ছাড়া তিনি সাধক, তাঁর কাছে আছেই বা কী?
কিন্তু এরা তবে চায় কী? এরা কী তাঁকে দিয়ে মায়ের পূজা দিতে চায়?
বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। ডাকাত সর্দার এগিয়ে আসেন। ভীত, উদভ্রান্ত দৃষ্টি। গায়ে হাত লাগতে বুঝলেন, সর্দারের সর্ব শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। থর থর করে কাঁপছে সে। আর সেই কাঁপা হাতে কম্পিত হচ্ছে একখানি কাঁসার থালা!
সেই থালার উপরে কালো কষ্টি পাথরের এক হাত পরিমাণ মাতৃ বিগ্রহ! সূক্ষ্ম কিন্তু অপূর্ব! অপরূপা, মনোহারা মা কালিকা!
নিমিষে বুঝে জান, সাধক কী ঘটেছে।
আর্তনাদের স্বরে বললেন, "ওরে ডাকাতি করে মা'কে এনেছিস কিন্তু মাকে জল বাতাস টুকু দিয়েছিস? না মা অভুক্ত!"
ডাকাত সর্দার বুঝতে পারল তার ভুল। কাঁপতে কাঁপতে মা'কে তুলে দিল সেই সাধকের হাতে।
"এ রক্ত মাখা হাতে ভোগ দিলে মা নেবে না ঠাকুর " বলেই অন্ধকারে মিলিয়ে গেল ডাকাতের দলটা।
মা রইলেন দয়াল ঠাকুরের হাতে। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। হায়রে ভাগ্য, অব্রাহ্মণ বলে তন্ত্রবিদ্যা থাকতেও মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। শুধু আকুল হয়ে মা'কে ডেকে গিয়েছেন। মায়ের কী নির্দেশ আসে...
মা সেই আকুল ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর কাছে এলেন! মা তো মা-ই, মায়ের কাছে সন্তানের জাত তো হয় না। যে ডাকে তিনি তাঁর।
নাহলে সাধক কমলাকান্তের এই মাতৃমূর্তি আসে দয়াল ঠাকুরের কাছে!
হ্যাঁ, এ সেই কমলাকান্ত ঠাকুরের মা, শিবহীন কালিকা, মা পরমেশ্বরী।*
কথিত, সাধক নিজ বক্ষোপরি মা'কে স্থাপনা করে পূজা করতেন! অবশ্য কমলাকান্ত ঠাকুর বলেই পারতেন মায়ের সে তেজ সহ্য করতে।
কমলাকান্ত ঠাকুরের অমৃতলোক যাত্রার পর তাঁর মন্দিরে ডাকাতি পড়ে, সেই ডাকাতের হাত ধরে মূর্তি আসে দয়াল ঠাকুরের কাছে। মা ছেলের নড়ের টান এমনই।
বজবজে মা প্রতিষ্ঠা পেলেন দয়াল ঠাকুরের মন্দিরে। পুরোহিত হয়ে এলেন ফুল্লরা পীঠের রামজী সাধু। ছোট্ট বলে মায়ের নাম দিলেন 'খুকি মা'। সেই থেকে মা আজও রয়ে গেছেন....
মা মা-ই হন। প্রাচুর্য নয় সন্তানের আকুলতায় তিনি নরম, তিনি মঙ্গলময়ী আবার সময়ে তিনিই শাসন-বারণ এলোকেশি।
ঋণ: প্রহর ও লোকসমীক্ষা
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy