ছবি: সংগৃহীত
সিমলা ভ্রমণে গিয়ে অনেকে দেখেন সারহান পক্ষী উদ্যান, ভাভা ভ্যালি, হাওয়া ঘর এবং বুশাহর প্যালাস। এই বুশাহর বাজবংশের কুলদেবী হলে ভীমাকালী। একান্ন সতী পীঠের অন্যতম এই ভীমাকালী মন্দির। কথিত আছে, যেখানে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত সেখানে সতীর কান পতিত হয়েছিল।
হিমাচল বেড়াতে গেলে ভীমাকালী দর্শনে যান না এমন বাঙালির সংখ্যা খুবই কম। সিমলা থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরে কিন্নর যাওয়ার পথে, সারহানে প্রকৃতির কোলে অবস্থিত হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপত্যে মিশ্রণে গড়ে ওঠা অপূর্ব সুন্দর এই মন্দিরটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০০ ফুট উপরে অবস্থিত মন্দিরটির একদিকে পাইন বন, অপরদিকে আপেল, অর্কিডে ভরা। আর মন্দিরটিকে যেন ঘিরে রেখেছে দুধ সাদা বরফের চূড়া।
পরবর্তীতে পৌরাণিক যুগের নানা গল্পকথা এই জায়গাটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। মনে করা হয় বলিরাজের পুত্র বাণাসুরের রাজত্ব ছিলো সারহানের এই অঞ্চলে। তিনিই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে কৃষ্ণ বাণাসুরকে হত্যা করলে বাণাসুরের দেহ এই মন্দিরের প্রবেশদ্বারে সমাধিস্থ করা হয়।
বাণাসুরের কাহিনির মধ্যে জানা যায় উষা ও অনিরুদ্ধর কথা। ঊষা হলেন বাণাসুরের কন্যা আর অনিরুদ্ধ হলো কৃষ্ণপুত্র প্রদ্যুম্নর পুত্র। মনে করা হয়, বাংলার বিখ্যাত কাব্য মঙ্গলকাব্যের বেহুলা ও লখিন্দর আসলে ঊষা আর অনিরুদ্ধ। মঙ্গলকাব্যের কাহিনি অনুসারে ঊষা এবং অনিরুদ্ধ বেহুলা ও লখিন্দর হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিল।
আবার চণ্ডীতে শুম্ভ-বধের পর দেবতাদের কাছে আদিশক্তি মহাদেবী নিজের যে ভবিষ্যতের রূপগুলির কথা বলেছেন সেখানে বিন্ধ্যবাসিনী, রক্তদন্তিকা ও শাকম্ভরীর পরেই আছে দেবী ভীমার প্রসঙ্গ। মহাদেবী বলছেন দানবদের অত্যাচারে পীড়িত ঋষিদের রক্ষা করতে নীলবর্ণা পর্বতপ্রমাণ বিশাল কলেবর নিয়ে তিনি হিমাচলে আবির্ভূত হবেন এবং দুরাচারী দৈত্যদের ভক্ষণ করে জগত রক্ষা করবেন। তখন তাঁর নাম হবে ভীমা।
ভীমাদেবীর এই বর্ণনা মা কালীর জগতব্যাপী আদি রূপের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। এই কালীপীঠের ঐতিহাসিক উল্লেখ হিউয়েন সাঙ এবং উত্তর পশ্চিমের পথে ভারতে আগত বিভিন্ন বৈদেশিক পর্যটকগণের লেখাতে পাওয়া যায়। এই মাতৃপীঠ যে অত্যন্ত প্রাচীন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy