Advertisement
E-Paper

আষাঢ়ে রথবাহিনী, শরতে দুর্গতিনাশিনী, চৈত্রে তুমি হও মা বাসন্তী

ত্রিগুণধারিণী জগজ্জননী মর্ত্যধামে আবির্ভূত হয়েছেন নানা রূপে। উত্তর কলকাতার হেদুয়া পার্কের কাছে সাহা পরিবারে মা অধিষ্ঠিত। অষ্টধাতুতে গড়া মা জগজ্জননী দেড়শো বছর ধরে নিত্য সেবা গ্রহণ করেন এই পরিবারে।

মা  জগজ্জননী

মা জগজ্জননী

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২২ ১৪:১৮
Share
Save

সন ১২৭৮। মা জগজ্জননী যেন স্বেচ্ছায় এলেন উত্তর কলকাতার সাহা বাড়িতে। তত দিনে ডালহৌসি চত্বরে পাঁচটি পাকা বাড়ি-সহ একাধিক সম্পত্তির মালিকানা- যেন এলাহি ব্যাপার ব্যবসায়ী গুরুপ্রসাদ সাহার। শোনা যায়, সে সময়ে তাঁর বাড়ির উঠোনে নাকি পড়ে থাকত জাহাজের মাস্তুল। গুরুপ্রসাদের জীবনে মা জগজ্জননীর কৃপাতেই ক্রমে প্রতাপ, প্রতিপত্তি বাড়ে । শোনা যায়, মা জগজ্জননী আজও নাকি নিজের সেবার আয়োজন করেন নিজেই।

এই বসন্তে ১৫০ বছরে পা রাখবে সাহা পরিবারের জগজ্জননী মন্দির। গত দু'বছর মহামারির কারণে আড়ম্বরহীন ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে তাঁর আরাধনা। এ বছর জাঁকজমক করেই হবে মাতৃপূজা, জানালেন সাহা পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম ও জগজ্জননী মন্দিরের সেক্রেটারি, সঞ্জীব সাহা।

সিপাহী বিদ্রোহ কালে সামাজিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করলে গুরুপ্রসাদ উত্তর ভারতের মিরাট অঞ্চল ছেড়ে কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য হন। সে সময়ে সৈন্যদের খাদ্য সরবরাহের কাজ করতেন তিনি। জাতে শুঁড়ি ওই ব্যবসায়ী সেই সময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়েছিল।

মিরাটের এক মন্দিরে, মহা সমারোহে জগজ্জননীর আরাধনা করতেন গুরুপ্রসাদ। সে মন্দিরের স্থাপত্য ছিল উত্তর ভারতের মন্দিরগুলির আদলেই। কথিত, সাহা পরিবারের পূর্ব পুরুষরাই সে মন্দির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে সদা জাগ্রত ছিলেন মা জগজ্জননী, তেমনটাই বিশ্বাস ছিল গোটা সাহা পরিবারের। ব্যবসা থেকে শুরু করে যে কোনও কাজ, সবই এই পরিবার পালন করতেন দেবীর অনুমতি নিয়েই। ফলে মিরাট ছেড়ে চলে আসার সময়ে সম্ভবত মা জগজ্জননীর অনুমতিতেই উত্তর কলকাতার হেদুয়া অঞ্চলে আবারও স্থাপিত হয় মায়ের বাড়ি। তখন ১৮৭১ সাল। সে সময়ে যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছিলেন গুরুপ্রসাদ সাহার যোগ্য উত্তরসূরি জনার্দন সাহা ও মুকুন্দমুরারী সাহা।

উত্তর কলকাতার হেদুয়া অঞ্চলে আবারও স্থাপিত হয় মায়ের বাড়ি

উত্তর কলকাতার হেদুয়া অঞ্চলে আবারও স্থাপিত হয় মায়ের বাড়ি

কলকাতার এই মন্দিরের স্থাপত্য উত্তর ভারতের জগজ্জননী মন্দিরের আদলেই। সিঁড়ি দিয়ে উঠে সুবিস্তৃত দালান, দু'পাশে ঘর। দালানের এক পাশে অধিষ্ঠিত মা জগজ্জননী। তাঁর পাশেই রুপোর সিংহাসনে বিরাজমান নারায়ণ, মাথায় তাঁর সোনার মুকুট। মায়ের পরনে বেনারসী ও সোনার গয়না। মায়ের সমস্ত অস্ত্র তৈরি হয়েছে সোনা দিয়েই। মন্দিরের সেবায়েতরাও থাকেন মন্দির সংলগ্ন বাড়িতেই। নিত্য পুজোয় মা-কে ফল, মিষ্টি, লুচি, দুধ, সুজির ভোগ নিবেদন করা হয়। বিশেষ দিনের পুজোয় নিষ্ঠা মেনেই সাজানো হয় বাইশ বারকোসের নৈবেদ্য। মায়ের প্রিয় ভোগ দুধ, ক্ষীর, রাবড়ি-সবই থাকে তাতে।

শ্রীরামের অকালবোধনের সময়ে নয়, বরং এই মন্দিরে দেবী জগজ্জননী পূজিত হন বসন্ত কালে, মা বাসন্তী রূপে। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ নিজের রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে মেধা মুনির কথা মতো এক বসন্তে মা দুর্গার পুজো করেন। কাল অনুযায়ী মায়ের নাম হয় বাসন্তী। মনে করা হয়, দেবী বাসন্তী হলেন আদি দুর্গা। তবে পুরাণে বাসন্তী দেবীর পুজোর নিয়ম নিয়ে সেই ভাবে কোনও উল্লেখ নেই বলেই মনে করা হয়। পাশাপাশি এ তথ্যও জানা যায় যে, রাজা সুরথের অনেক আগেই দেবী দুর্গা পূজিত হয়েছেন কোনও এক বসন্তে।

ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, গোলোক ধামে রাসমণ্ডলে শ্রীকৃষ্ণ সর্বপ্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন এক বসন্তকালেই। পরে মধু কৈটভ যুদ্ধের সময়ে যোগমায়া রূপে দেবী পূজিত হন ভগবান বিষ্ণু কর্তৃক। তৃতীয় বার, দেবী পূজিত হন ব্রহ্মার হাতে। ব্রহ্মার প্রাণসংশয় ছিল সেই মুহূর্তে। ত্রিপুরাসুর বধ কালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব। এর পরে, বেত্রাসুর বধ কালে দেবতারা সঙ্কটে পড়লে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন তাঁরা। রাজা সুরথের দুর্গাপূজার অনেক আগে থেকেই দেবীর আরাধনা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়, মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী।

সাহা পরিবারে আদি দেবী দূর্গা পূজিত জগজ্জননী রূপেই

সাহা পরিবারে আদি দেবী দূর্গা পূজিত জগজ্জননী রূপেই

সাহা পরিবারে আদি দেবী দূর্গা পূজিত জগজ্জননী রূপেই। পরিবারে তাঁকে নিয়ে অলৌকিক গল্প কম নেই। কথিত, ভোরে মা জগজ্জননী নিত্য গঙ্গাস্নানে যান। অনেকেই নাকি ওই সময়ে ওঁনার পদধ্বনি, নুপূরের শব্দ শুনেছেন। পরিবারের মানুষ খেয়াল করেছেন সাদা শাড়ি পরা, গায়ে গামছা, কাঁখে কলসী নিয়ে সুন্দরী রমণীর গমন। জনশ্রুতি আরও বলে, মা নাকি নিজেই নিজের সেবার আয়োজন করেন। ব্রিটিশ সংস্থা অ্যান্ড্রু ইউল-এর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল জগজ্জননী মন্দিরের। আসলে মন্দিরের সম্পত্তিতেই এক কালে প্রতিষ্ঠিত স্থাপত্য ভাড়া নেয় ওই সংস্থা। সে সময়ে সুসম্পর্কের সুবাদে ব্রিটিশ আয়োজিত ক্রুজ পাটিতে আমন্ত্রণ পেত গোটা সাহা পরিবার। বাহারি খাবার আর বিদেশি সুরার ফোয়ারা ছুটত সেই পার্টিতে। ক্রমে প্রশাসনিক বদল হয়েছে। তৎকালীন চুক্তি ভেঙে এই মুহূর্তে মন্দির কর্তৃপক্ষকে বিশাল অঙ্কের ভাড়া দিতে নারাজ সংস্থা। এই নিয়ে আইনি জটিলতা চলছে দীর্ঘকাল ধরেই। তবে থেমে থাকেনি জগজ্জননীর সেবা। আড়ম্বর না থাকলেও নিয়ম নিষ্ঠা ও ভক্তির অভাব নেই মায়ের সেবায়। আজও রীতি মেনেই ষষ্ঠীতে হয় বোধন। দশমীতে নবপত্রিকা বিসর্জন। পাঁচ দিন ধরে চলে জগজ্জননীর আরাধনা।

পুরাণ সংক্রান্ত তথ্য ঋণ– নবকুমার ভট্টাচার্য

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

ananda utsav 2022 Durga Puja 2022 Basanti Puja Kolkata north kolkata Hedua park

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।