মাকে কি এ বার আদৌ আনা সম্ভব হবে? এই ভাবনায় একের পর এক বৈঠক। লাগাতার আলোচনা। একটা সময় মনে হয়েছিল আর বোধহয় এ বার শারদোৎসব করা গেল না। কিন্তু করা গেল। যাঁদের মনের জোরের কাছে হার মানল অতিমারি-আতঙ্ক, তাঁদের সকলের বয়স পেরিয়েছে দীর্ঘ কয়েক বসন্ত। শহুরে ভাষায় তাঁদের পোশাকি নাম, ‘সিনিয়র সিটিজেন’। নিউটাউনে তাঁদের আয়োজিত দুর্গোৎসবের পরিচয় ‘প্রবীণদের শারদোৎসব’ হলেও এই পুজোর নিজের বয়স মাত্র ২ বছর।
পুজোর উদ্যোক্তা ‘স্বপ্নভোর’ এবং ‘স্নেহদিয়া’। নিউটাউনের এই সংগঠন শুধুমাত্র প্রবীণ নাগরিকদের জন্যই। তাঁদের জন্য আছে মনোরম উদ্যান। সেই পার্কেই হয়েছে এ বারের শারদোৎসব। পার্কের ঠিক উল্টো দিকে ‘স্নেহদিয়া’ বৃদ্ধাবাস। তার আবাসিকরাও এই পুজোর অন্যতম অঙ্গ। বোধন থেকে বিসর্জন, সর্বত্র তাঁদের উপস্থিতি সক্রিয়। স্বপ্নভোর-এর সদস্য এবং স্নেহদিয়ার আবাসিকদের আয়োজনেই ছিমছাম ঘরোয়া পরিবেশে মা দুর্গা আসেন সপরিবারে।
শুধু পরিচয়েই ‘ঘরোয়া’ নয়। মেজাজের দিক দিয়েও এই আয়োজন ‘বাড়ির পুজো’। বাইরে থেকে কোনওরকম চাঁদা তোলা হয় না। নেই কোনও স্পনসরও। সংস্থার সদস্যরাই পুজোর দায়িত্ব ভাগ করে নেন। জানালেন এই পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা ভাস্কর সরদার। বললেন, ‘‘ হিডকো-র সহায়তায় স্বপ্নভোর-এর সদস্য এবং স্নেহদিয়ার আবাসিকদের প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি এই আয়োজন।" সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে ঠিক করে নেন কে কোন দিকটা দেখবেন। তাঁদের পরিবারের বাকি সকলের জন্যেও থাকে শারদোৎসবে অংশগ্রহণের সাদর আমন্ত্রণ।
আরও পড়ুন: ডালিম গাছতলায় পুজোয় অঞ্জলি দিয়ে যান রানি ভবানী
সাবেক সাজের প্রতিমার পুজো হয় সনাতন রীতিনীতি মেনে
সাবেক সাজের প্রতিমার পুজো হয় সনাতন রীতিনীতি মেনে। এ বছর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিমারি-সতর্কতা। শাস্ত্রের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতাও এ বার পুজোর গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাইরের দর্শনার্থীদের প্রবেশ এ বার কার্যত ছিল নৈব নৈব চ। পুজোয় অংশগ্রহণকারীরাও পুজো মণ্ডপে আগাগোড়া ছিলেন মাস্কের আড়ালে। ঢাক এবং কাঁসর হাতে কিশোরের মুখও ঢেকে ছিল মাস্ক। অসুবিধে হবে বলে মন্ত্রোচ্চারণের সময়টুকু পুরোহিতের মুখ ছিল মাস্কহীন। কিন্তু তাঁর সামনে মাইক্রোফোন ঢাকা ছিল আবরণে। স্যানিটাইজ করে নেওয়া হয়েছে পুজোর ফুল, মালা থেকে প্রসাদের ফলও। প্রতি দিন অঞ্জলির সময় কোনও ফুল দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যারতির পরে উপস্থিত দর্শককে যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে, তা’ও ছিল প্যাকেটবন্দি।
আরও পড়ুন: গোটা গ্রামই এখন মাতে রায়েদের পুজোয়
অধিবাস থেকে ধুনুচিনাচ। সতর্ক থেকেই পুজোর প্রতি ধাপে আনন্দ করলেন ‘প্রবীণদের শারদোৎসব’-এর চিরতরুণরা। বৃদ্ধাবাসের আবাসিকরাও শরিক এই প্রাণের পুজোর আনন্দধারার। গত বছর পুজো হয়েছিল ‘স্নেহদিয়া’-র প্রাঙ্গণেই। এ বার অতিমারি পরিস্থিতির জন্য পুজো করা হয়েছে স্বপ্নভোর পার্কে। উদ্যোক্তাদের আশা, আগামী বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তাঁদের দুর্গাপুজো ফিরে যাবে বৃদ্ধাবাসের অঙ্গনেই। তত দিন অবধি প্রতীক্ষার প্রহর গোনার পালা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy