‘‘আমি ভাগ্যবান, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি আর আমার বাড়ির দেওয়াল এক!’’
ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে পুজো দেবে বলে লোকে হাপিত্যেশ করে। আমি ভাগ্যবান, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি আর আমার বাড়ির দেওয়াল এক! একেবারে লাগোয়া বাড়িতে জন্মেছি। চারপাশে শাঁখ, কাঁসর-ঘণ্টার শব্দ, দেবীর নামগান। এক এক সময়ে নিজের বাড়ি আর কালীবাড়ির মধ্যে কোনও পার্থক্যই বুঝতে পারতাম না। কালীপুজোর সময়ে তো সে ফারাক আরও মুছে যেত। সারা দিনই ঘুরেফিরে মন্দিরে। উৎসব উপলক্ষে বাড়ি ভর্তি আত্মীয়। তাঁরাও পুজো দিতে মন্দিরে পা যেতেন। সব মিলিয়ে কালীপুজোয় ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি যেন আমারই বাড়ি হয়ে উঠত।
২০২১-এ দীপাবলির খাতায় জুড়ে গেল রোমন্থন করার মতো আরও এক স্মৃতি। আতসবাজি ‘অতীত’ হয়ে গেল। বাজি পোড়াতে প্রচণ্ড ভালবাসতাম। চকলেট বোমা, দোদমা নিজে হাতে করে ফাটিয়েছি। রকেটও খুব ভালবাসতাম। আর ভাল লাগত তুবড়ি। আসলে পুজো, উপোস, দেবী কালিকার কাছে একান্তে প্রার্থনার চেয়েও আমার কাছে তার উদযাপন আনন্দের। আত্মীয়দের ভিড়, সবাইকে নিয়ে হইহই, বাড়িতে সবাই মিলে প্রদীপ দেখানো--- সব মিলিয়ে এক অন্য রকম ভাল লাগা। যৌথ পরিবারে যাঁরা বড় হয়েছেন, একমাত্র তাঁরাই এর মর্ম বোঝেন।
তা বলে কি কোনও দিন দেবীর কাছে প্রার্থনা জানাইনি বা পুজো দিইনি? আমার সব কাজেই মা-কে লাগে। আগে ছোট-বড় কিছু ঘটলেই এক ছুটে দেবী প্রতিমার কাছে। হাঁটু মুড়ে বসে এক মনে প্রার্থনা, ‘‘আমার এটা চাই। পূরণ করে দেবে?’’ কিংবা ‘‘এই বিষয়টা একটু দেখো।’’ তখন অত বুঝতাম না। এখন মনে হয়, দেবী মা শুনতেন।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ একটু একটু করে কমতে থাকল। কাজের সূত্রে মধ্য কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে হল দক্ষিণ কলকাতায়। সেই আমারই এখন শ্বশুরবাড়ি আসামে। যেখানকার কামাখ্যা মন্দির জগৎ বিখ্যাত। দৈব যোগ বোধহয় একেই বলে! এই একটি জায়গায় আমার সত্যিই অন্য রকম অনুভূতি হয়। তাই সুযোগ পেলেই দর্শন করে আসি।
অদ্ভুত ব্যাপার, না চাইতেই আমার দেবী দর্শন ঠিক হয়ে যায়। এ বছরের বিশ্বকর্মা পুজো যেমন। ওই দিন আমি কামাখ্যা দর্শনে গিয়েছিলাম। অতিমারির প্রকোপ তখনও রয়েছে। তাই মাস্কে মুখে ঢেকে গিয়েছি। ইচ্ছে ছিল, বাইরে থেকে পুজো দিয়ে চলে যাব। দেবী মা বোধহয় কাছে টানলেন। মন্দিরের কিছু সেবায়েত ঠিক চিনতে পারলেন। সঙ্গে সঙ্গে আপ্যায়ন করে নিয়ে গেলেন ভিতরে। যত্ন করে পুজো দেওয়ালেন। ফিরিঙ্গি কালীর মতোই দেবী কামাখ্যাও আমায় ঠিক আপন করে নিয়েছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy