মিস জোজো
গত দু’বছর শিল্পীরা কী ভাবে কাটিয়েছেন, সেটা বলে বোঝানো মুশকিল। করোনার প্রথম বছরটা ঘরে বসেই ছিলাম। পরের বছরটা তা-ও কলকাতা, শহরতলিতে পুজোর অনুষ্ঠান করেছি। এ বছর বেঙ্গালুরু যাওয়া। পরে পুণে হয়ে কলকাতা ফিরব। পুজোর সময়টায় এ শহর ছাড়তে ভাল লাগে না ঠিকই। তবে এটাও ঠিক যে, কলকাতায় থাকলে আমার ওই একে-তাঁকে ফোন করে ভিআইপি পাস জোগাড় করে ঠাকুর দেখা হয় না। বেশ কয়েক বার সিঁদুরখেলার আমন্ত্রণ পেয়ে বাগবাজারের রাজবল্লভ পাড়ার পুজোতে গিয়েছিলাম অবশ্য। তবে আমার মনে হয় টেলিভিশনে অনেক ভাল ভাবে পুজো দেখা যায়। ওই ভিড়ে যাওয়ার চেয়ে তা অনেক সহজ আর আরামের।
ছোটবেলাটা অবশ্য দেদার মজায় কেটেছে। উত্তর কলকাতার পাড়ায় ওই সর্বজনীন মাঠের পুজোটাই ছিল আমাদের সব। সারাদিন কী ভাবে যে হই হই করে কেটে যেত, টেরই পেতাম না। সারা দিন মণ্ডপে। শুধু নতুন জামা পরতে বাড়িতে ফিরতাম। ভাইবোনেরা সব হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখতে যেতাম মহম্মদ আলি পার্ক, খুব বেশি দূর হলে কলেজ স্কোয়্যার। এর বেশি যাওয়ার অনুমতি ছিল না। তখন থিম পুজোর এত রমরমা ছিল না। দিদার একটা নিয়ম ছিল, পুজোর ক’দিন সকলকে একসঙ্গে থাকতেই হবে। তাই মামারা, মাসিরা সবাই মিলে পুজোর পাঁচ দিন একসঙ্গেই থাকা হত। বিজয়া দশমীর প্রণাম সেরে মিষ্টি খেয়ে তবে বাড়ি ফিরতাম।
আর পুজোর প্রেম?
মা যা রাগী ছিল, প্রেমের কথা ভাবতেও আমার গায়ে জ্বর আসতো। তার মধ্যেও ওই ঋষি কপূর-ডিম্পল গোছের চোখ চাওয়াচাওয়ি অনেক হয়েছে। এখনকার মা-বাবারা অনেক বেশি স্বাধীন মনের। অনেক ছাড় দেন সন্তানদের। আমি তো বাগবাজার সর্বজনীন মণ্ডপেও সর্বক্ষণ মায়ের সিসি ক্যামেরার নজরবন্দি থাকতাম।
আমার মেয়ে মাইসোরে বড় হয়েছে। ওর বয়স যখন সাত, সে বছরই ওকে নিয়ে কলকাতার মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম। সে বার মুখে ওড়না চাপা দিয়ে আমাকেই বলতে হয়েছে- নিজে দেখুন, অন্যদেরও দেখার সুযোগ করে দিন। মেয়ের সেই শেষ বার কলকাতার পুজো দেখা আমার সঙ্গে। ফলে ও পুজোয় প্রেম করছে কি না, তা নিয়ে আমাকে খুব বেশি চিন্তা করতেই হয়নি। আর এখন তো মেয়ে চাকরি করছে বেঙ্গালুরুতেই। যদি প্রেম করে, ভেবেই করবে নিশ্চয়ই। ও অনেক ম্যাচিওরড। ওর বয়সে আমি অনেক বোকা ছিলাম। এই সময়ের ছেলেমেয়েরা সব অনেক বেশি ফোকাসড।
নয় নয় করে আমারও বহু বছর হয়ে গেল গানের জগতে। ছবির গান যতই করি, লাইভ শো দিয়েই তো জীবন শুরু, পরিচিতি। মা দুর্গার কাছে তাই অবশ্যই চাইব, যাতে আরও অনেক শো করতে পারি। মানুষকে বিনোদন দিতে পারি। শ্রোতা-দর্শকদের যেন মনে না হয়, যে জোজো বোরিং হয়ে গেছে। চাইব, আমি ও প্রত্যেকে যেন সুস্থ থাকি, আর যেন করোনা না আসে। আর আমার ছেলেটা যাতে তাড়াতাড়ি একটু বড় হয়। আমার বয়সটাও তো চল্লিশের কোঠায়, তাই এটাই আমার সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy