Advertisement
E-Paper

ফিলাডেলফিয়ায় বাজে ‘প্রগতির’ সুর, ষোলআনা বাঙালির প্রবাসে শারদোৎসব পঞ্চাশ বর্ষে

এই প্রবাসে দুর্গাপুজো শুরু করার পর প্রথম কাজ ছিল দুর্গাপুজোর জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করা। পশ্চিম ফিলাডেলফিয়ার একটি গির্জার বেসমেন্টে প্রথম তিন বছর প্রগতির দুর্গাপুজার আয়োজন করা হয়। প্রথম তিন বছর সাফল্যের পর ধর্মনিরপেক্ষ কোন জায়গায় এই দুর্গাপুজার আয়োজন করা জরুরি হয়ে পড়েছিল

আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার 'প্রগতি শারদ উৎসব'

আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার 'প্রগতি শারদ উৎসব'

কৃষ্ণা লাহিড়ী

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:২৫
Share
Save

ফিলাডেলফিয়ার প্রগতি দুর্গাপুজো বহু বছর ধরেই বাঙালি ও ভারতীয়দের এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। ১৯৭০ সালের ড্রেকসেল হিলে ফিলাডেলফিয়া এবং সাদা নিউ জার্সির কিছু মুষ্টিমেয় বাঙালিকে নিয়ে একটি ঘরোয়া সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। কোন আনুষ্ঠানিক জমায়েত নয় এটি ছিল একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান। এর আগে অখানে এরকম কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি কিন্তু এই সমস্ত বাঙালিরা দুর্গাপুজায় অংশগ্রহণ করার পর উজ্জীবিত হয়েছিল এবং সমস্ত ইচ্ছেশক্তি দিয়ে তারা অনুভব করেছিল ফিলাডেলফিয়াতেও তো এমন একটি দুর্গাপুজোর আয়োজন করাই যায়। এই চিন্তা ভাবনা থেকে ১৯৭২ সালে ফিলাডেলফিয়ার ঐতিহাসিক দুর্গাপুজো সোসাইটি প্রগতির জন্ম হয়।

সেই সময়ে ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে অমল ও সবিতা ঘোষ, বিশ্বনাথ ও মৈত্রেয়ী মুখার্জি, সুরেশ ঘোষ ও জেনিস, রঞ্জিত ও বাণী চক্রবর্তী, ইভা ও দিলীপ রায়, সুনীল নিয়োগী, প্রকাশ চৌরাশি, চন্দ্র মুখার্জি, কমলা বোস, সুখময় ও কৃষ্ণা লাহিড়ী- এই উৎসাহী ও উজ্জীবিত বাঙালি ও ভারতীয়দের উদ্যোগে প্রগতি দুর্গাপুজো শুরু হয়। কুমারটুলির দুর্গা মূর্তি বুকিং থেকে পুজোর সবকিছু এই বাঙ্গালীদের উদ্যোগেই সম্পন্ন হয়। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা, বাঙালিয়ানা ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এই প্রবাসে দুর্গাপুজো শুরু করার পর প্রথম কাজ ছিল দুর্গাপুজোর জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করা। পশ্চিম ফিলাডেলফিয়া এর একটি গির্জার বেসমেন্টে প্রথম তিন বছর প্রগতির দুর্গাপুজার আয়োজন করা হয়। প্রথম তিন বছর সাফল্যের পর ধর্মনিরপেক্ষ কোন জায়গায় এই দুর্গাপুজার আয়োজন করা জরুরি হয়ে পড়েছিল তাই ড্রেকসেল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক শ্যামলেন্দু বোসের সহায়তায় ড্রেকসেল বিশ্ববিদ্যালয়েই দুর্গাপুজার আয়োজন করা হয়। নতুন অভিবাসন আইন পাশ হওয়ার পর সে সময় আমেরিকায় বাঙালি সংখ্যাও বাড়তে থাকে। পরবর্তীকালে এই দুর্গা পূজা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রবাসী ভারতীয় বাঙালি সোমনাথ দে সরকারের উদ্যোগে এই দুর্গা পুজো এখন অন্যত্র চলে গিয়েছে।

যে গির্জার বেসমেন্টে সে সময় দুর্গাপূজা হত সে গির্জার ভারতীয় খ্রিস্টান ধর্মের লোকজন মূর্তি পুজোর তীব্র বিরোধিতা করায় এই দুর্গাপূজো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রগতি দুর্গাপুজোয় সে সময় প্রচুর বাধা এসেছিল। গির্জা লোকেরা দুর্গপুজো নিয়ে অসম্ভব অসহিষ্ণু এবং অসহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছিল। মা দুর্গার "অর্ধনারীশ্বর" রূপ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি।

দুর্গা পূজার গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য সকলেরই জানা উচিত। প্রতিবছর মা দুর্গা কৈলাশ থেকে পৃথিবীতে আসেন লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক এবং গণেশকে নিয়ে। বসন্তকালে বাসন্তী পুজো দিয়ে যে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল, ভগবান রামের অকালবোধনের পর শরৎকালে দুর্গাপূজা শুরু হয়। কথিত আছে রামের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে মা দুর্গা রাবণের বিরুদ্ধে রাম কে যুদ্ধে জিততে শক্তি দান করেছিল। সেই থেকেই এছাড়াও প্রগতির দুর্গ পুজো প্রতিবছর মহিষাসুর বধ, মহিষাসুরমর্দিনী আয়োজন করে। মা দুর্গা তার দশ হাতে দশ রকমের অস্ত্র সাজিয়ে সিংহের উপর বসে যে অসুর দমন করেন সেই মূর্তিকেই ভক্তিরূপী পূজো করা হয় প্রগতির দুর্গাপুজোয়। নৈবেদ্য ও আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই পুজোর চারদিন সকলে মা দুর্গার কাছে ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও সুস্থতা কামনা করে। প্রবাসী ভারতীয়দেরকে পুজোর এই কয়েকটা দিন এক টুকরো বাঙালিয়ানা ফিরিয়ে দিতে প্রগতি দুর্গাপুজা অঞ্জলি আরতী এবং ভোগ বিতরণ করে। প্রবাসী ভারতীয় প্রভাত ভট্টাচার্য প্রগতি দুর্গাপুজোয় পৌরহিত করেন। মা দুর্গার পুজো শুরু। শক্তি ভক্তি ইচ্ছে এবং সুরক্ষার জন্য প্রতিবছর মা দুর্গার পুজো করে সকলে।

দুর্গা পুজোর আমেজ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রগতি বাঙ্গালীদের জন্য পুজো বার্ষিকী প্রকাশ করে। প্রবাসী বসবাসকারী শিশুদের শৈল্পিক প্রতিভা বিকাশের এক সুযোগ পাওয়া যায় এই পুজোর সময়। রান্নাঘর থেকে সবাইকে ছুটি দেওয়ার জন্য পুজো প্রাঙ্গনেই এই চার পাঁচ দিন খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সকলে মিলে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া খেলা গল্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরো অনেক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কলকাতা বা ভারতবর্ষের অন্যান্য জায়গা থেকে শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য। সব মিলিয়ে ফিলাডেলফিয়ায় প্রগতি দুর্গাপুজো পূজোর এই কয়েকটা দিন সৌহার্দ্য, আতিথেয়তা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রতিবছর পুজো সাফল্যমন্ডিত করে তোলে।

এই প্রতিবেদনটি আনন্দ উৎসব ফিচারের একটি অংশ।

Durga Puja 2024 NRI Nostalgia NRI Puja Philadelphia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।