টুম্পা
বাঙালি নারীর কাছে শাড়িই হল সৌন্দর্যের চিরকালীন ব্যকরণ। যে কোনও পার্বণে সর্বপ্রথম সে দিকেই ঝোঁকেন বঙ্গললনা। আর সেই উৎসব যদি হয় দুর্গা পুজো, তা হলে পছন্দের তালিকায় অবশ্যই সব থেকে উপরে থাকে শাড়িই। শাড়ির নানা রকমফের রয়েছে। তবে অষ্টমীর অঞ্জলি বা নবমীর সান্ধ্য আড্ডায় জামদানি না হলে কি জমে? কলকাতায় বসে বাংলাদেশের আসল ঢাকাই জামদানি শাড়িতেই বৈচিত্রের সম্ভার নিয়ে হাজির ‘সাজ বাহারি’। নেপথ্যে টুম্পা।
বর্তমানে ‘সাজ বাহারি’র নাম হয়তো অনেকেই শুনেছেন। অনেকে আবার অজান্তেই তাঁদের শাড়ি কিনে সযত্নে সাজিয়ে রেখেছেন আলমারিতে। বর্তমানে ব্যবসার রমরমা হলেও শুরুটা কিন্তু ততটাও সহজ ছিল না। কী ভাবে শুরু হল তাঁদের যাত্রা? উত্তরে টুম্পা বলেন, “প্রায় সাত বছর আগে আমরা বাংলাদেশে ঘুরতে যাই। সেই সময়ে শখের বশেই কিছু ঢাকাই জামদানি শাড়ি কিনে আনি। কলকাতা ফিরতেই সেগুলি খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। তা দেখেই ব্যবসার কথা মাথায় আসে।”
ব্যবসা যখন শুরু হয়, হাতে পুঁজি ছিল না। পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের থেকে ধার করে স্বপ্ন পূরণের পথে যাত্রা শুরু করেন টুম্পা। সেই শুরু। তার পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জামদানিতে বেশ কিছু বৈচিত্র এনেছেন তাঁরা। শাড়ি তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে ওয়ান পিস। যেগুলি কুর্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন মহিলারা। পাঞ্জাবি বানিয়েও পরা যায়। রয়েছে জামদানি টু-পিস হাফ সিল্কের পোশাক এবং সুতির পোশাকও। বলা ভাল, জামদানি দিয়ে যা যা তৈরি করা যায়, তার সব কিছুই রয়েছে সম্ভারে।
অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশের ঢাকাই জামদানি মানেই দামি শাড়ি। কেনার খরচও অনেক। সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে 'সাজ বাহারি'। মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি রয়েছে তাঁদের সংগ্রহে। ট্যাগলাইনও সেই কথাই বলে— ‘সাধ্যের মধ্যে সাধপূরণ’। এমনকি, সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, যে দামে যে গুণমানের শাড়ি এখানে পাওয়া যায়, তা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। টুম্পা বলেন, “এখানে শাড়ির সঙ্গে থাকে ব্লাউজ় পিসও। বাজারে বর্তমানে কম দামে জামদানির ব্লাউজ় পিস পাওয়া যায় হয়তো। কিন্তু এই ভাবনার সূত্রপাত কিন্তু সাজ বাহারির হাত ধরেই। আমরা সব সময়ে চেষ্টা করি বাজেটের মধ্যে গ্রাহকদের হাতে জামদানি শাড়ি তুলে দিতে। এর জন্য আমাদের পার্ট পেমেন্টের সুবিধাও রয়েছে।”
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ব্যবসা। শহর পেরিয়ে দেশ, দেশ পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে পা রেখেছে এই সংস্থা। শুধু পাইকারিই নয়, হোলসেলও করে তারা। প্রায় ১৫০০ মহিলা ‘সাজ বাহারি’র থেকে পোশাক কিনে নিজেরা ব্যবসা চালান। তা ছাড়াও আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি জায়গায় শাড়ি সরবরাহ করেন তারা। এমনকি বিদেশেও বহু মানুষ এই সংস্থা থেকে শাড়ি কিনে চুটিয়ে ব্যবসা করছেন।
ব্যবসা শুরুর সময়ে সমস্তটাই একা হাতে সামলাতেন টুম্পা। শাড়ি পছন্দ করা থেকে তা দেশে আমদানি করা, প্যাকেজিং, ফের রফতানি— সবটাই। প্রাথমিক পর্ব, ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে শাড়ির ছবি পোস্ট করা এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলার বিষয়গুলিও দেখতেন তিনি। কিছু দিন হল মা হয়েছেন টুম্পা। কোল আলো করে এসেছে ফুটফুটে সন্তান। মাতৃত্ব সামলেও গোটা ব্যবসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যবসায় তিনি এখন আর একা নন। ব্যবসার জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে সম্প্রতি নিজের চাকরি ছেড়ে কাজে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন টুম্পার স্বামীও। তাঁদের স্বপ্ন, দেশের সব থেকে বড় জামদানি কাপড়ের ব্যান্ড তৈরি করা। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছেন দু’জনে।
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy