‘হার্ড ইমিউনিটি’ বা গোষ্ঠীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। অতিমারির গোড়া থেকে এত দিনে অতি পরিচিত এই শব্দ। একে গোষ্ঠী সংক্রমণও বলেন অনেকে। অর্থ— কোনও জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ করোনা সংক্রমিত হয়ে গিয়ে যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। যদিও অর্থ মিলিয়ে এত দিন যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ‘হার্ড ইমিউনিটি’-কে, তা নস্যাৎ করে দিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন।
সৌম্যা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক ভাবে সংক্রমিত হয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা ও কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার যে ধারণা অনেকের রয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ‘নির্বুদ্ধিতার’ পরিচয়। এই ভাবনা নিয়ে চললে, তার বড় দাম দিতে হবে। সৌম্যা জানিয়েছেন, এটি শুধু তাঁর বক্তব্য নয়, হু-এর অবস্থানও এ ব্যাপারে একই।
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলি এখনও প্রতিষেধকহীন অবস্থায় ধুঁকছে। গড়ে মাত্র ৫ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে এই সব দেশে। উল্টো দিকে, আমেরিকা-ইউরোপের ধনী দেশগুলির গড় টিকাকরণ হার ৭২ শতাংশের বেশি। কিন্তু এ সব দেশের বাসিন্দাদের একাংশ আবার প্রতিষেধকের বিরোধী। টিকাকরণের পিছনে তাঁরা রাষ্ট্র তথা বিশ্বের চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন। ব্রিটেন, ফ্রান্স-সহ ইউরোপের অনেক দেশে টিকা-বিরোধী বিক্ষোভ চলেছে। সম্প্রতি কানাডায় প্রতিষেধক-বিরোধী বিক্ষোভ এমন আকার নিয়েছিল যে পরিবার নিয়ে গোপন স্থানে ‘গা ঢাকা’ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এই ধরনের পরিস্থিতিগুলির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞেরা বারবারই বলছেন, প্রাকৃতিক ভাবে সংক্রমিত হয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার ভাবনাচিন্তা অর্থহীন। তাতে বহু প্রাণ অকালে চলে যাবে। হু-এর প্রধান বিজ্ঞানীর কথাতেও ওই একই আভাস পাওয়া গিয়েছে।
একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌম্যা করোনার ‘নয়া মুখ্য চরিত্রটিকে’ নিয়েও কথা বলেছেন। গোটা বিশ্বে এখন মূল সংক্রামক ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন। তার একটি সাব-ভেরিয়েন্ট নিয়ে এখন চিন্তিত বিশেষজ্ঞেরা। যার নাম বিএ.২। ওমিক্রনের একাধিক সাব-ভেরিয়েন্ট চিহ্নিত হয়েছে গোটা পৃথিবীতে। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক বিএ.২। সৌম্যাও জানিয়েছেন, ওমিক্রনের প্রথম যে সাব-ভেরিয়েন্টটি চিহ্নিত হয়েছিল, তার থেকে বিএ.২ বেশি সংক্রামক। তিনি এ-ও জানান, বেশ কিছু দেশে বিএ.২-র সংক্রমণ মারাত্মক হারে বাড়ছে। যেমন, ডেনমার্ক ও ভারত।
গত বছর নভেম্বরের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম চিহ্নিত হয় ওমিক্রন। এর পরে ঝড়ের গতিতে গোটা বিশ্বে বয়ে গিয়েছে ওমিক্রন। সংক্রমণ ঢেউ নয়, একে সংক্রমণের ‘সুনামি’ বলেছেন অনেকে। কিন্তু এ সবের পরেও ‘মাত্র দু’মাসে’ ওমিক্রন নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে নারাজ হু। সৌম্যা জানিয়েছেন, এটি নতুন ভেরিয়েন্ট। এটিকে নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তিনি বলেন, ‘‘দু’মাস খুবই অল্প সময়। এতে পুনরায় সংক্রমণ ঘটতে পারে কি না, কেমন ইমিউনিটি তৈরি হয়, এখনই সে সব বলা সম্ভব নয়।’’ তবে একটি উৎসাহব্যঞ্জক খবরও জানিয়েছেন হু-এর প্রধান বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘‘ওমিক্রন থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির রক্ত ডেল্টা সংক্রমিতকে দিয়ে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি কাজে দেবে কি না, তা
দেখতে হবে।’’
এরই পাশাপাশি, সৌম্যা জানিয়েছেন, ওমিক্রনকে ঠেকাতে খুব একটা কাজ দিচ্ছে না কোভিড টিকা। তবু টিকাকরণে জোর দিচ্ছেন তাঁরা, কারণ টিকা নেওয়া থাকলে রোগীর বাড়াবাড়ি কম হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীর ভিড় নিয়ন্ত্রণে থাকছে।