—প্রতীকী ছবি।
চাবাহার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইরানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পরেই আমেরিকার নিশানা করল ভারতকে! মঙ্গলবার আমেরিকার বিদেশ দফতরের সহকারি মুখপাত্র বেদান্ত পটেল জানান, ইরানের সঙ্গে কোনও ব্যবসায়িক চুক্তি ভাল ভাবে দেখে না ওয়াশিংটন। তিনি বলেন, ‘‘গত তিন বছরে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য প্রায় ছ’শো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আমরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি।’’
সেই তালিকা প্রয়োজনে দীর্ঘায়িত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন বেদান্ত। বার্তা দিয়েছেন, যে দেশ বা সংস্থা ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখবে, ভবিষ্যতে তাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও সরাসরি নয়াদিল্লির নাম নেননি। চাবাহার চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি ইরানের সঙ্গে ভারত চাবাহার বন্দর চুক্তি করেছে। আমরা চাই ভারত সরকার তার বৈদেশিক এবং ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সক্রান্ত নীতি স্পষ্ট করবে।’’
প্রসঙ্গত, সোমবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের জাহাজ ও বন্দরমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল তেহরানে ইরানের সড়ক ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী মেহেরদাদ বাজ়রপাশের উপস্থিতিতে ভারতের ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল এবং ইরানের পোর্ট অ্যান্ড ম্যারিটাইম অরগানাইজ়েশনের মধ্যে চাবাহার বন্দর চুক্তি হয়েছে। তার পরেই ওই হুঁশিয়ারি এল ওয়াশিংটনের তরফে।
২০১৫ থেকে চাবাহারের শহিদ বেহেস্তি বন্দর ব্যবহারের জন্য প্রতি বছর ভারত-ইরানের চুক্তি নবীকরণ হচ্ছিল। নতুন চুক্তির ফলে টানা ১০ বছর বন্দরের পরিচালনভার পেল ভারত, যা মেয়াদ পার হলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে নবীকরণ হবে। সূত্রে খবর, চাবাহারের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় ভারত আফগানিস্তান, ইরান হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত জলপথ পরিবহণে আধিপত্য কায়েম করতে পারবে। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে সেটিকে। বৃহত্তর ইউরেশিয়ান (ইউরোপ-এশিয়া) অঞ্চলেও বন্দরটি দেশের প্রধান সংযোগস্থল হতে চলেছে।
কূটনীতি এবং বাণিজ্য মহলের একাংশের মতে, পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর ও চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর সঙ্গে টক্কর নিতে অদূর ভবিষ্যতে চাবাহার বন্দর চুক্তি তুরুপের তাস হতে পারে নয়াদিল্লির। অস্ত্র চাবাহারের নিকটতম বন্দর গুজরাতের কান্দালা। দূরত্ব ৫৫০ নটিক্যাল মাইল। মুম্বইয়ের দূরত্ব ৭৮৬ নটিক্যাল মাইল। সোনোয়াল জানিয়েছেন, ৭২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত আন্তর্জাতিক ‘নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর’-এর সঙ্গে চাবাহারকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। ভারত, পশ্চিম এশিয়া, ইউরেশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং পরিবহণ খরচ ও সময় কমানোর নিরিখে ওই প্রকল্প ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে।