হামাসের হামলা বর্ণনা করেছেন ইজ়রায়েলি তরুণী। ছবি: এএফপি।
বিয়ের পোশাক এখনও ঝুলছে আলমারিতে। সামনের এপ্রিলেই চার হাত এক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হামাসের হামলায় সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। হবু স্ত্রীকে বাঁচাতে হামাসের রাখা বোমায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নেট্টা এপস্টেইন। ২২ বছরের যুবকের দেহ মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বিয়ের পোশাকের সামনে বসে তাই হাহুতাশ করছেন তাঁর বাগদত্তা ইরেন শ্যাভিট।
ইজ়রায়েলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১৪০০-র বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। ইজ়রায়েল প্রশাসনের দাবি, মৃতেরা অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। সেই মৃতের তালিকাতেই ছিলেন এপস্টেইন। তাঁর স্মৃতি আঁকড়েই বাঁচার চেষ্টা করছেন শ্যাভিট। ইজ়রায়েলি তরুণী জানিয়েছেন, তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতেই তাঁর সঙ্গী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে।
তরুণীর কথায়, ‘‘আমাকে ও বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিল। না বাঁচলে প্রতারণা করা হবে। আবার বেঁচে থেকেও আমি প্রতারণা করছি বলেই মনে হচ্ছে। ওর কথা খুব মনে পড়ছে।’’
শ্যাভিট জানিয়েছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর সঙ্গে এপস্টেইনের দেখা হয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে গাঢ় হয়েছিল বন্ধুত্ব। ৭ অক্টোবর একসঙ্গে শহরের ঘুড়ির উৎসবে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল যুগলের। হামাসের হামলায় সব ঘেঁটে যায়। তরুণী জানান, ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ আচমকা ‘রেড অ্যালার্ট’-এর তীব্র শব্দে ঘুম ভাঙে তাঁদের। প্রথমে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারেননি কেউ। পরে প্রত্যেকের ফোনে সতর্কবার্তা আসে। ঘরের কোনায় লুকিয়ে থাকা ছাড়া তাঁদের আর কোনও উপায় ছিল না। হামাসকে ঠেকানোর সাধ্যও ছিল না। চোখের সামনে যুবকের দিদাকে খুন হতে দেখেন তাঁরা। মারা যান পরিবারের আরও সদস্য। কোথা থেকে কিসের হামলা, কারা আক্রমণ করেছে, কিছুই তখন জানা ছিল না। ছিল না আত্মরক্ষার কোনও উপায়। শুধু গোলাগুলির শব্দে চমকে চমকে উঠছিলেন দু’জন।
বিভীষিকা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তরুণী। তিনি জানান, তাঁদের ঘরে গ্রেনেড ছুড়েছিল হামাস বাহিনী। তাঁকে বাঁচাতে সেই গ্রেনেডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন যুবক। তার পর ঘরে আগুন ধরিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই কোনও রকমে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন তরুণী। কয়েক ঘণ্টা পরে ইজ়রায়েলি উদ্ধারকারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু শ্যাভিট জানিয়েছেন, তাঁর জীবন ওই ধোঁয়া ওঠা ঘরের ভিতরেই থমকে গিয়েছে। সে দিনের পর থেকে জীবনকে কেবল বয়ে চলেছেন তিনি।