Iran Hijab Row

মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে! নতুন হিজাব আইন চালু ইরানি মহিলাদের জন্য, শঙ্কা মানবাধিকার নিয়ে

ইরানে মহিলাদের পোশাকবিধি নিয়ে আরও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। পোশাকবিধি না-মানার জন্য এ বার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে ইরানি মহিলাদের। কোনও বাণিজ্যিক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে ‘প্রশ্রয়’ দিলে, শাস্তি হতে পারে তাদেরও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:০৯
Share:

আরও কড়া হচ্ছে ইরানে মহিলাদের জন্য পোশাকবিধি। ছবি: রয়টার্স।

পোশাকবিধি না-মানলে এ বার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে ইরানি মহিলাদের। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহে নতুন আইন চালু করেছে ইরান। নতুন আইনে মহিলাদের পোশাকবিধি না-মানার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কেউ ‘অশোভন পোশাক’ কিংবা ‘নগ্নতা’-কে তুলে ধরছেন বলে মনে করা হলে ১২ হাজার ৫০০ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা) আর্থিক জরিমানা হতে পারে। বার বার একই ‘অন্যায়’ করলে পাঁচ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে। যদি কোনও মহিলার অপরাধকে ‘পৃথিবীর প্রতি অনাচার’ বলে মনে করে প্রশাসন, তা হলে ইরানের ইসলামীয় দণ্ডবিধি অনুসারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

Advertisement

নতুন আইন অনুসারে, যাঁরা এই পোশাকবিধি লঙ্ঘনকে সমর্থন করবে, তাঁদের উপরেও নেমে আসবে শাস্তির খাঁড়া। কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, সংবাদমাধ্যম এমনকি কোনও ট্যাক্সিচালকও মহিলাদের ‘অশোভন’ পোশাকে দেখলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে হবে। না হলে সেটিকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

ইরানের হিজাববিধি নিয়ে অতীতে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সম্প্রতি এই হিজাববিধির প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হেঁটেছিলেন। এর পর তাঁকে আটক করে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ। পরে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। তাঁকে একটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনার পর পরই ইরানের নারী ও পরিবারকল্যাণ দফতর জানায়, হিজাব পরতে অনিচ্ছুক মহিলাদের জন্য বিশেষ ‘ক্লিনিক’ চালু করা হয়েছে। সেখানে ‘চিকিৎসা’ করা হবে হিজাব পরতে অনিচ্ছুক মহিলাদের। ইরানে যে ধরনের কড়া পোশাকবিধি কার্যকর রয়েছে মহিলাদের জন্য, তাতে ওই ‘ক্লিনিক’ তৈরির অভিপ্রায় নিয়ে আবার প্রশ্ন ওঠে। সেগুলি আদৌ কোনও চিকিৎসাকেন্দ্র, নাকি ক্লিনিকের নামে ‘জেলখানা’— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।

Advertisement

ইরানে দীর্ঘ দিন ধরে মহিলাদের জন্য কড়া পোশাকবিধি চালু রয়েছে। ইরানি মহিলাদের আবশ্যিক ভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাবে। এ ছাড়া রাস্তায় বার হলে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হয় তাঁদের। ইরানের প্রাক্তন ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনি এই নিয়ম চালু করেন। বর্তমান ধর্মগুরু আলি খামেনেইর আমলেও ইরানি মহিলাদের জন্য এই পোশাক ফতোয়া জারি রেখেছেন। নিয়ম না-মানলে কড়া শাস্তির নির্দেশও রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কড়াকড়ি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হয়েছে এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে। তবে ইরানের প্রশাসন তা কড়া হাতে দমন করেছে এবং শাস্তিকে আরও কড়া করেছে।

ইরানে হিজাব-বিরোধী প্রতিবাদের ক্ষেত্রে ২০২২ সালে মাহ্‌সা আমিনির প্রসঙ্গ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে হিজাব না-পরার ‘অপরাধে’ মাহ্‌সাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি পুলিশ। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চ তো বটেই, ইরানের মহিলারাও সরব হয়েছিলেন। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ইরানি মহিলারা। পোশাক ফতোয়া উড়িয়ে, চুল কেটে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন তাঁরা। সেই প্রতিবাদ কড়া হাতে দমন করে ইরান-প্রশাসন। হিজাব আইন আরও কড়া হয়েছে। আগে হিজাব আইন ভাঙলে ১০ দিন থেকে দু’মাস পর্যন্ত জেল-সহ আর্থিক জরিমানা হত। মাহ্সাকাণ্ড এবং তার পরবর্তী প্রতিবাদের পর, সেই মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ডের বিল পাশ করা হয় ইরানে। সঙ্গে ছিল আর্থিক জরিমানাও। এ বার সেই তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীর ঘটনার পর পোশাকবিধি সংক্রান্ত আইন আরও কড়া করল ইরান।

ইরানের নতুন আইন নিয়ে শঙ্কায় মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। ইরানি মহিলারা বিদেশি সংবাদমাধ্যমে নিজেদের মুখ দেখালে, বা অন্য কোনও ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ’ চালালে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অ্যামনেস্টি। মানবাধিকার সংগঠনের পশ্চিম এশিয়ার সহকারি অধিকর্তা ডায়ানা এল্টাহাওয়ে ইরানের এই আইনকে ‘ন্যক্কারজনক’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, নারীস্বাধীনতা এবং তাঁর অধিকারকে খর্ব করতে এই আইন চালু করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement