পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। — ফাইল ছবি।
আগামী নির্বাচনে তাঁর দলকে আটকানোই মূল লক্ষ্য। তাই রাষ্ট্রীয় অত্যাচার চালিয়ে তাঁর দলকে দুর্বল করতে মরিয়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। শুক্রবার একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে এমনই দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমরান খান।
লাহোরের জ়ামান পার্কের বাসভবনে বসে ব্লুমবার্গকে ইমরান বলেছেন, ‘‘অক্টোবরের মাঝামাঝির মধ্যে ভোট করাতেই হবে। শাসকের মনোভাব, হল তার মধ্যে পিটিআইকে যতটা দুর্বল করা যায়, করে দেওয়ার। তাতে দেশে আবার একটি দুর্বল সরকার আনতে সুবিধা হবে। যে দিন শাসক বুঝতে পারবে, পিটিআই আর ভোটে জেতার অবস্থায় নেই, সে দিনই ভোট ঘোষণা হবে।’’
সম্প্রতি ইসলামাবাদের আদালত চত্বর থেকে ইমরানের গ্রেফতারের ঘটনায় পাকিস্তান জুড়ে হিংসা ছড়ায়। পথে নেমে সেনা, সরকারি ভবনগুলিতে হামলা করতে শুরু করেন পিটিআই সমর্থকেরা। এই অবস্থায় পাল্টা ধরপাকড় শুরু করেছে সেনা। চাপের মুখে ইস্তফা দিতে বাধ্য হচ্ছেন ইমরানের বিশ্বস্তরা। ইস্তফা না দিলে কড়া আইনে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন করে পাকিস্তানের ক্ষমতায় ফেরা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে ইমরানের পক্ষে। যদিও হাল ছাড়তে রাজি নন ‘কাপ্তান’।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানের বিদেশ নীতি এবং অর্থনীতি নিয়েও শেষ কথা বলে সেনাই। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই পরম্পরায় দাড়ি টানতে মরিয়া ইমরান। আর তাই শুরু থেকেই পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত তিনি। তার মাসুলও গুনতে হচ্ছে তাঁকে। এই মুহূর্তে রাজনীতিতে কার্যত একা হয়ে গিয়েছেন ৯২ সালে পাকিস্তানকে প্রথম তথা শেষ বার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক। তার উপর একের পর এক নেতার ইস্তফা বা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার ঘটনাও চাপ বাড়াচ্ছে ইমরানের উপর। যদিও মচকানোর কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না ইমরানের মধ্যে। ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও সেই ভাবমূর্তিই ধরতে রাখতে সচেষ্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
ইমরান ইঙ্গিত করেছেন, দেশে দুর্বল সরকার প্রতিষ্ঠা করাই সেনার উদ্দেশ্য। যাতে সরকারের বকলমে সমস্ত বিষয়ে আগের মতোই ছড়ি ঘোরানোর অবসর পায় সেনা। ইমরানের দাবি, তিনি সেই দস্তুরই বদলানোর চেষ্টা করছেন। অর্থনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গোলমেলে অবস্থায় রয়েছে পাকিস্তান। দেনার দায়ে ঘটি বিকোনোর জোগাড় সে দেশের। মূল্যবৃদ্ধির দাপটে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। ইমরানের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সংস্কারের রাস্তায় হাঁটতে গেলে দেশে প্রয়োজন একটি মজবুত সরকারের। পিটিআই প্রধানের দাবি, তিনি ছাড়া এই মুহূর্তে পাকিস্তানের মজবুত সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। কিন্তু সেনার তাতেই আপত্তি বলে ইঙ্গিত ইমরানের। আর তাই, লাগাতার গ্রেফতার করে দল ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।