লাস্ট মিল। মৃত্যুর আগে শেষ খাবার। দণ্ডিতদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে তাদের শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়। তেমনই শেষ বারের মতো তারা কী খেতে চায়, সেটাও জানার একটা রীতি রয়েছে। সেটাই তাদের লাস্ট মিল।
সারা বিশ্বে দণ্ডিতদের নানা ধরনের লাস্ট মিল আবদারের সাক্ষ্য থেকেছে কারাগার। তারই কতকগুলি উল্লেখযোগ্য লাস্ট মিলের তালিকা তুলে ধরা হল।
ভিক্টর হ্যারি ফেগুয়ের: মাত্র ২৮ বছর বয়সে আমেরিকায় ১৯৬৩ সালে ফাঁসি হয় তার। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ছিল। মৃত্যুদণ্ডের ঠিক আগে তাকে যখন লাস্ট মিলের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, উত্তরে ভিক্টর একটা অলিভ খেতে চেয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষ তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন।
টিমোথি ম্যাকভে: ওকলাহোমা শহরে বিস্ফোরণে দণ্ডিত। ওই বিস্ফোরণে ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল, ৬৮০ জন জখম হয়েছিলেন। ৯/১১ হামলার আগে পর্যন্ত ওটাই ছিল আমেরিকার সবচেয়ে ভয়ানক সন্ত্রাসবাদী হামলা। বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। লাস্ট মিল-এ দুটো মিন্ট চকোলেট চিপ আইসক্রিম খেতে চায় সে।
অ্যাঞ্জেল নিভেস দিয়াজ: খুন, অপহরণ এবং ডাকাতির জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাকে। ফ্লোরিডার আদালত বিষ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ৫৫ বছরের এই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। লাস্ট মিল খেতে চায়নি অ্যাঞ্জেল। তাকে জেলের সাধারণ খাবার দেওয়া হয়, সেটাও খেতে চায়নি।
স্টিভেন মাইকেল উডস জুনিয়র: টেক্সাসে ২০১১ সালে বিষ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। জোড়া খুনে অপরাধী ছিল সে। লাস্ট মিল-এ কী আবদার করেছিল স্টিভেন? তার লাস্ট মিলের তালিকা ছিল লম্বা। দুই পাউন্ডের বেকন, বিশালাকার মাংসের পিত্জা, চারটি ফ্রায়েড চিকেন ব্রেস্ট, মাউন্টেন ডিউ, পেপসিস রুট বিয়ার আর মিষ্টি চা দুটো করে, দুটো আইস ক্রিম, পাঁচটা চিকেন ফ্রায়েড স্টিকস, দুটো হ্যামবার্গার উইথ বেকন, ফ্রাইস এবং এক ডজন গার্লিক ব্রেড স্ট্রিকস। সব খাবার খেয়েছিল সে।
জন ওয়েন গেসি: মার্কিন সিরিয়াল কিলার জন অন্তত ৩৩ জনকে খুন করেছিল। ১৯৯৪ সালে ৫২ বছরের জনকে বিষ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। লাস্ট মিল-এ সে ১২টা চিংড়ি মাছ ভাজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, এক পাউন্ড স্ট্রবেরি এবং কেএফসি-র একটা বাকেট খেতে চায়।
রবার্ট অ্যালটন হ্যারিস: ১৯৬৭ সালের পর থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত রবার্ট। ১৯৯২ সালে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সান দিয়োগোর দুই বালককে খুন করেছিল সে। লাস্ট মিল-এ ২১ টুকরো কেএফসি ফ্রায়েড চিকেন, দুটো বড় ডমিনোজ পিত্জা, আইসক্রিম, এক ব্যাগ জেলি বিনস, ছ’টা পেপসির ক্যান এবং এক প্যাকেট সিগারেট খায়।
সাদ্দাম হুসেন: জীবনের শেষ ছ’মাস বাগদাদের জেলে কেটেছিল ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের। সাদ্দামের উপরে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন আমেরিকার ৫৫১তম মিলিটারি পুলিশ কোম্পানির জনা ১২ সদস্য। ২০০৬ সালে ফাঁসি হয় তার। সাদ্দাম শেষ বারের মতো খেতে চেয়েছিলেন, মাংস-ভাত এবং এক কাপ মধু জল।
আজমল কসাব: ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার দোষী আজমলের ফাঁসি হয় ২০১০ সালে পুনের ইয়ারাদা জেলে। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লাস্ট মিলের কোনও আবদার রাখেনি। একটা টোম্যাটো এবং জেলের সাধারণ খাবার খেয়েছিল।
আফজল গুরু: আফজল গুরুর ফাঁসি হয় ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। ফাঁসির ঠিক আগে ভোরে আফজল কুঠুরিতে বসে চা খায়। এর পর আফজল আরও এক কাপ চা খেতে চায়, কিন্তু তার সেই অনুরোধ আর রাখা হয়নি।
নির্ভয়ার চার দণ্ডিত: নির্ভয়ার চার দণ্ডিত পবন, মুকেশ, অক্ষয় এবং বিনয় লাস্ট মিল খেতে চায়নি। এমনকি চার জনের কেউই স্নান পর্যন্ত করতে চায়নি। এর মধ্যে বিনয় শর্মার মা তাকে লাস্ট মিল-এ পুরী, সব্জি আর কচুরী বানিয়ে খাওয়াতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ রাখেননি।