চিনে নতুন ভাইরাসের হানা! শুক্রবার থেকে এমন খবরেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এর নেপথ্য কারণ অবশ্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়োগুলিতে দেখা গিয়েছে, চিনের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। মুখে মাস্ক পরে চিন্তিত মুখে বসে রয়েছেন রোগীর পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-পরিজন। রোগীরা শুয়ে রয়েছেন বিছানায়।
সেই ভিডিয়োগুলিতে দাবি করা হয়েছে যে, রোগীদের প্রায় প্রত্যেকেই হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)-এ আক্রান্ত। যদিও সেই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
চিনও স্পষ্ট করেছে, এইচএমপিভি নিয়ে চিন্তার মতো কিছু নেই। চিনের সরকার পুরো বিষয়টিকে ‘শীতকালীন সংক্রমণ’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। দায়ী করেছে মরসুমকেই। চিনের বিদেশ মন্ত্রকও পর্যটক এবং নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেছে, সে দেশে ভ্রমণ সম্পূর্ণ ভাবে নিরাপদ।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র মাও নিং জানিয়েছেন, নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁর কথায়, ‘‘শীতের মরসুমে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রবণতা খুব বেশি। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, সরকার চিনে আগত বিদেশিদের স্বাস্থ্য নিয়ে যত্নশীল।”
নয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি চিনের হাসপাতালগুলিতে রোগীদের থিকথিকে ভিড়ের যে ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেই প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের ওই মুখপাত্র। তাঁর দাবি, ভাইরাস মারাত্মক নয়। সংক্রমণের হারও গত বছরের তুলনায় কম।
কোভিড-১৯ ছড়ানোর পাঁচ বছর পরে চিনে ফের নতুন ভাইরাসের সংক্রমণের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। এই ভাইরাসের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ভারতেও উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
তবে দেশের নাগরিকদের অযথা আতঙ্কিত হতে বারণ করেছে ভারত। শুক্রবার কেন্দ্রের তরফে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, শ্বাসযন্ত্রের এই সংক্রমণ নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এইচএমপিভি-র সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তা দিয়েছেন ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেল্থ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস)-এর আধিকারিক অতুল গয়াল। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গয়াল বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” ভারতের হাসপাতালগুলি এই ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ভারতীয় চিকিৎসকেরাও বিষয়টি নিয়ে এখনই মাথাব্যথার কিছু দেখছেন না। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মেটানিউমোভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। এটির সংক্রমণ কোভিডের মতো ছড়াবে, এমন ভেবে আতঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই।
উল্লেখ্য, এইচএমপিভির সংক্রমণ নতুন নয়। সেই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল প্রায় দু’দশক আগে, ২০০১ সালে।
নেদারল্যান্ডসের বিশেষজ্ঞেরা ২০০১ সালে শিশুদের শ্বাসযন্ত্রে প্রথম এই ভাইরাসের নমুনা শনাক্ত করেন। তার পর ২৪ বছর কেটে গিয়েছে। তবে সেই ভাইরাসের কোনও টিকা তৈরি হয়নি।
অন্য দিকে, সেরোলজিক্যাল গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মেটানিউমোভাইরাস কমপক্ষে ৬০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান এবং সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের প্যাথোজেন হিসাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। মূলত শীতকালে এর সংক্রমণ লক্ষ করা যায়।
মেটানিউমোভাইরাসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি এবং কাশি। খুব কম সংখ্যক রোগী নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারেন। মৃত্যুর হারও নগণ্য।
কিন্তু এইচএমপিভির সংক্রমণ কী ভাবে সারে? সংবাদমাধ্যম নিউজ় ১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার অসরকারি সংস্থা ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’ জানিয়েছে, মেটানিউমোভাইরাসের চিকিৎসা হয় এমন কোনও ‘অ্যান্টিভাইরাল’ ওষুধ নেই।
‘চাইনিজ় সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ও তাদের ওয়েবসাইটে সেই ভাইরাসের কোনও টিকার কথা উল্লেখ করেনি।
এইচএমপিভি আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি বা শিশু গুরুতর অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাঁর শুশ্রূষা করা হয়। চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন, কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, সংক্রামিত ব্যক্তির নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত এবং ভিড় জায়গায় মাস্ক পরে থাকা উচিত। এ ছাড়াও, সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘন ঘন হাত ধোয়া আবশ্যক। জীবাণুমুক্তকরণের দিকেও বিশেষ নজর থাকা উচিত।