Chinese Flying Radar

মাথার উপর বনবনিয়ে ঘুরছে রাডার! ‘সুদর্শন চক্র’ লাগানো ফৌজি বিমান দেখিয়ে চমকাচ্ছে চিন

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি একের পর এক অত্যাধুনিক হাতিয়ার সামনে এনে শক্তি প্রদর্শন করছে বেজিং। ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেটের পর এ বার মালবাহী রাডার সম্বলিত বিমান দেখিয়ে চমকাচ্ছে চিন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০১
Share:
০১ ১৯

প্রথম লেজকাটা ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেট। আর এ বার রাডারযুক্ত মালবাহী বিমান। আকাশের লড়াইয়েও ‘সুপার পাওয়ার’ হওয়ার নেশায় আচ্ছন্ন ড্রাগন বাড়িয়েই চলেছে তাদের বায়ুসেনার শক্তি। সবটাই কি প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র দখলের ছক মাথায় রেখে? না কি নেপথ্যে অন্য কোনও ষড়যন্ত্র? উত্তর-পূর্বের চালবাজ প্রতিবেশীর নতুন হাতিয়ার প্রকাশ্যে আসতে ওয়াশিংটনের পাশাপাশি নয়াদিল্লির কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

০২ ১৯

নতুন বছরের গোড়াতেই নতুন মালবাহী বিমানের মডেল প্রকাশ্যে আনল চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’র (পিএলএ) বায়ুসেনা। বিমানটির পিঠে কুঁজোর মতো বসানো রয়েছে অত্যাধুনিক একটি রাডার। সেটা আবার দেখতে কতটা শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্রের মতো।

Advertisement
০৩ ১৯

বায়ুসেনার পরিভাষায় এই ধরনের বিমানগুলিকে বলা হয় ‘এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল এয়ারক্রাফ্‌ট’। শত্রুর যুদ্ধবিমান হোক বা কপ্টার, এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগাম হদিস পেতে এই ধরনের ফৌজি বিমানগুলির জুড়ি মেলা ভার। এগুলির পিঠে বসানো রাডার ৩৬০ ডিগ্রিতে নজর রাখতে সক্ষম। এর থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে আগাম সতর্কতা বা প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা যে চিনা জেনারেলরা করতে পারবেন, তা বলাই বাহুল্য।

০৪ ১৯

বেজিংয়ের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘গ্লোবাল টাইম্‌স’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অত্যাধুনিক এই বিমানের নাম ‘কেজে-৩০০০’ রেখেছে লালফৌজ। বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘ওয়াই-২০’ নামে কৌশলগত দিক থেকে উন্নত একটি মালবাহী বিমান ব্যবহার করে পিএলএ বায়ুসেনা। ‘কেজে-৩০০০’ তারই উন্নত সংস্করণ বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

০৫ ১৯

‘গ্লোবাল টাইম্‌স’ জানিয়েছে, ‘কেজে-৩০০০’ বিমানটিতে রয়েছে দু’টি ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনিক অ্যারে রাডার। দক্ষিণ চিন সাগর এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উপর নজরদারির কথা মাথায় রেখে এই বিমান তৈরি করেছে ড্রাগন সেনা। এই এলাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।

০৬ ১৯

বর্তমানে পিএলএর বায়ুসেনা বা নৌসেনা এই ধরনের কোনও বিমান ব্যবহার করে না ভাবলে ভুল হবে। তাদের হাতে রাডার সম্বলিত দু’টি বিমান রয়েছে। সেগুলির নাম ‘কেজে-৫০০’ এবং ‘কেজে-২০০০’। নতুন সংস্করণটি আরও উন্নত বলে জানা গিয়েছে।

০৭ ১৯

তবে সূত্রের খবর, ‘কেজে-৩০০০’ এখনই হাতে পাচ্ছে না চিনা লালফৌজ। এর আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা বাকি রয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে এটি পিএলএ বায়ু এবং নৌসেনায় যুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই নিয়ে সরকারি ভাবে বেজিংয়ের তরফে এখনও কিছু বলা হয়নি।

০৮ ১৯

সংবাদ সংস্থা ‘ফ্লাইটগ্লোবাল’ জানিয়েছে, ‘কেজে-৩০০০’ বিমানটিতে রয়েছে চারটি ‘শেনওয়াং ডব্লুএস-২০ হাই বাইপাস টার্বোফ্যান’ ইঞ্জিন। মাঝ আকাশে এটি জ্বালানি ভরতে সক্ষম। ফলে লম্বা সময় ধরে আকাশে ওড়ার ক্ষেত্রে এর কোনও বাধাই থাকছে না। এর ফলে বিমানটির শক্তি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

০৯ ১৯

নৌশক্তির নিরিখে ২১ শতকে আমেরিকাকে ছাপিয়ে গিয়েছে ড্রাগন। বেজিংয়ের বায়ুসেনাও কয়েক বছরের মধ্যে ওয়াশিংটনের সমকক্ষ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। দু’টি দেশই গত কয়েক দশকে উন্নত লড়াকু জেট, মালবাহী ফৌজি বিমান, বোমারু বিমান এবং ড্রোন নির্মাণে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

১০ ১৯

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রথম বার ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকাশ্যে এনে পেশি ফুলিয়েছে বেজিং। লালফৌজের বায়ুবীরদের অস্ত্রাগারে শামিল হতে চলা নতুন ওই হাতিয়ারের পোশাকি নাম ‘জে-৩৬’। চেয়ারম্যান মাও জে দংয়ের জন্মদিনে সিচুয়ান প্রদেশের চেংডুতে ‘ঝুহাই এয়ার শো’ আয়োজন করে পিএলএ বিমানবাহিনী। সেখানেই প্রথম বার আকাশে উড়তে দেখা গিয়েছে ষষ্ঠ প্রজন্মের ‘জে-৩৬’কে।

১১ ১৯

পৃথিবীর প্রায় সমস্ত লড়াকু বিমানে লেজের মতো একটি অংশ থাকে। ‘জে-৩৬’ জেটে সেটি রাখেননি বেজিংয়ের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। দীর্ঘ দিন ধরেই ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। কিন্তু, এখনও তাতে সাফল্য পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। নতুন প্রজন্মের অত্যাধুনিক লড়াকু বিমান হাতে পাওয়ায় যুদ্ধের ময়দানে ড্রাগন বেশ কিছুটা এগিয়ে গেল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

১২ ১৯

চিনের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করে ফেলা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ভারসাম্য নষ্ট করবে বলে অনুমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশের। ওই জায়গার ক্ষমতার ভরকেন্দ্র বেজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, এটির সাহায্যে ড্রাগন যে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৩ ১৯

এর আগে ‘জে-৩৫’ এবং ‘জে-৩৫এ’ নামের পঞ্চম প্রজন্মের দু’টি যুদ্ধবিমান তৈরি করে চিন। কিন্তু তখন ড্রাগনকে বিশেষ কেউ পাত্তা দেয়নি। কারণ বিশেষজ্ঞদের প্রায় সকলেরই বক্তব্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমানটির নকল করে ‘জে-৩৫’ জেট নির্মাণ করেছে বেজিং। শুধু তা-ই নয়, ড্রাগন নির্মিত বিমানের ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা।

১৪ ১৯

কিন্তু বেজিং ‘জে-৩৬’ যুদ্ধবিমানকে প্রকাশ্যে আনার পর পশ্চিমি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মুখে আর কথাটি সরছে না। আমেরিকার কাছে ষষ্ঠ প্রজন্মের কোনও হামলাকারী বিমান নেই। ফলে ড্রাগন কারও নকল করেছে, এ কথা মোটেই বলা যাবে না। উল্টে মাঝ আকাশের ‘ডগফাইটে’ যুক্তরাষ্ট্রের জেটগুলিকে চিনা যুদ্ধবিমানটি মাত দিতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

১৫ ১৯

‘ইউরেশিয়ান টাইম্‌স’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু বিমান তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বেজিং। মাঝে ২০১৯ সালে এই প্রকল্পে আরও গতি আনার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট শি। অবশেষে ২০২৪ সালের বিদায়বেলায় ক্ষমতা প্রদর্শন করলেন তিনি।

১৬ ১৯

সূত্রের খবর, নতুন প্রজন্মের চিনা যুদ্ধবিমানে রয়েছে তিনটি ইঞ্জিন। ফলে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু উড়ানগুলির থেকে এর গতিবেশ অনেকটাই বেশি। ‘জে-৩৬’ জেটে রয়েছে টার্বোফ্যান ইঞ্জিন। লেজের মতো অংশ না-থাকায় কোনও ভাবেই একে চিহ্নিত করতে পারবে না রাডার। অর্থাৎ যুদ্ধবিমানের ‘স্টেলথ’ শক্তি বাড়িয়েছে বেজিং।

১৭ ১৯

এ ছাড়া, এক বার জ্বালানি ভরে দীর্ঘ সময় আকাশে থাকতে পারবে ‘জে-৩৬’। পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু বিমানগুলির তুলনায় এর হাতিয়ার বহন করার ক্ষমতাও বেশি। আবার প্রয়োজনে মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরতে পারবেন ‘জে-৩৬’ জেটের পাইলট। শূন্যে কসরত দেখানোর ক্ষেত্রেও এর দক্ষতা আমেরিকা বা রাশিয়ার অতি শক্তিশালী যুদ্ধবিমানগুলির থেকে কোনও অংশে কম নয়।

১৮ ১৯

সম্প্রতি বর্ষশেষের ভাষণে তাইওয়ান নিয়ে ফের হুমকি দিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি বলেন, ‘‘তাইওয়ান প্রণালীর দু’পারের চিনা নাগরিকেরা একই পরিবারের অংশ। কেউ আমাদের রক্তের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। মাতৃভূমির পুনর্মিলনের ঐতিহাসিক ধারাও কারও পক্ষে রুখে দেওয়া সম্ভব নয়।’’

১৯ ১৯

অন্য দিকে লাদাখের কিছু অংশকে নিজেদের বলে দাবি করেছে ড্রাগন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতিতে একের পর এক অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানকে সামনে এনে বেজিংয়ের শক্তি প্রদর্শনকে মোটেই ভাল ভাবে দেখছেন না প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। তাইওয়ান হোক বা লাদাখ, আগামী দিনে দুই এলাকার প্রভুত্বকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। পাশাপাশি, দু’ক্ষেত্রেই সরাসরি বা আড়ালে থেকে যুদ্ধে আমেরিকার অংশ নেওয়ার আশঙ্কা নিয়েও দুনিয়া জুড়ে চলছে জোর জল্পনা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement