দিনের বেলাতেও ঢেকে থাকে ধূসর হলুদ রংয়ের ধোঁয়ায় ঢেকেছে ব্যাঙ্কক। ছবি: রয়টার্স।
শ্বাসের বাতাস কম পড়েছে তাইল্যান্ডে! প্রবল বায়ুদূষণে অসুস্থ হয়ে সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত দুই লক্ষ নাগরিক। অসুস্থতার এমন আশঙ্কাজনক হার দেখে উদ্বিগ্ন প্রশাসন।
২০২৩ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত কম করে ১৩ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দেখা গিয়েছে নানা ধরনের অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টের প্রকোপ। তবে, এক সপ্তাহে দুই লক্ষ মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়া অত্যন্ত গুরুতর, দাবি করছেন চিকিৎসকেরা। বুধবারই স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ঘর থেকে বেরনোর উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাকিদের বলা হয়েছে, এন৯৫ মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে এক পা নয়। দেশের নার্সারিগুলোতে বাচ্চাদের জন্য ‘বিশেষ ধুলোবিহীন ঘর’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে প্রায় সারা দিনই চালু বায়ুপরিশোধক যন্ত্র।
তাইল্যান্ডের বায়ুদূষণের মূলত রয়েছে তিনটি উৎস। প্রথমত, যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেশির ভাগ দূষণ ঘটে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উৎসে রয়েছে কল-কারখানা ও ফসলের গোড়া পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে নির্গত ধোঁয়া। এর প্রভাব ভাল ভাবে বোঝা যায় রাজধানী ব্যাঙ্কক শহরে। যে শহরে কম করেও ১.১ কোটি মানুষের বাস সে শহর দিনের বেলাতেও ঢেকে থাকে ধূসর হলুদ রংয়ের ধোঁয়ায়। এমন চিত্র দেশটির অন্য শহরেও। দূষণের প্রকোপে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। স্কুল-কলেজের ক্লাসও চলছিল বাড়ি থেকে। সেই নিয়ম ফের ফিরিয়ে আনা হতে পারে, ইঙ্গিত মিলেছে প্রশাসনের কথায়।
সপ্তাহের শুরু থেকেই বায়ুর গুণমান খারাপ হতে শুরু করলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, বুধবার ব্যাঙ্ককের ৫০টি জেলায় পিএম২.৫ কণার মাত্রা ছিল স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বিপজ্জনক ভাবে বেশি। বৃহস্পতিবারও বিশেষ উন্নতি হয়নি সেই পরিস্থিতির। দূষণের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম কণিকা, যার ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটার বা তারও কম, তাকে বলা হয় পিএম২.৫ কণা। ২.৫ মাইক্রোমিটার মানে মানুষের একটি চুলের ব্যাসের ৩০ ভাগ কম। বাতাসে এই অতিসূক্ষ্ম দূষণ-কণিকার মাত্রা বাড়তে থাকলে শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে তা রক্তে প্রবেশ করে। সেখান থেকে শুরু হয় অসুস্থতা।
২০১৯ সালে তাইল্যান্ড সরকার দাবি করেছিল, ২০২৪ সালের মধ্যে দূষণ কমানোই তাদের অগ্রাধিকার। সেই অনুসারে তৈরি হয় এক বিশেষ নির্দেশিকা, যাতে স্থানীয় প্রশাসকদের দূষণ মোকাবিলা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, নির্দেশিকা তৈরিই সার, প্রয়োগে বিস্তর গলদ।