দাউ দাউ করে জ্বলছে বিমানটি।
প্রশিক্ষণ চলাকালীন ভেঙে পড়ল বায়ুসেনার বিমান। তাতে ২৫ জন প্রাণ হারালেন ইউক্রেনে। ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়াতেই বিমানটি ভেঙে পড়ে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে হারকিভ ন্যাশনাল এয়ারফোর্স ইউনিভার্সিটির ক্যাডেট ও বেশ কয়েক জন বিমানকর্মী রয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ, চুহুইভ সেনা বিমানবন্দর থেকে দু’কিলোমিটার দূরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার সময় হারকিভ ন্যাশনাল এয়ারফোর্স ইউনিভার্সিটির ২০ জন ক্যাডেট এবং বিমানকর্মী মিলিয়ে বিমানটিতে মোট ২৭ জন যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস। তাঁদের মধ্য থেকে দু’জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বিকট শব্দে বিমানটি ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারিদিক। তার মধ্যেই ধ্বংসাবশেষ থেকে জ্বলন্ত অবস্থায় এক মানুষকে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেখেন তিনি। তত ক্ষণে আরও বেশ কয়েক জন ছুটে এসেছেন ঘটনাস্থলে। নিজেদের গাড়ি থেকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে আগুন নেভাতে ছুটে যান তাঁরা। পরে পুলিশ ও দমকলবাহিনী এসে পৌঁছয়।
আরও পড়ুন: মাদক মামলায় জেরা দীপিকাকে, এনসিবি-র দফতরে অভিনেত্রী
হারকিভের স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রশিক্ষণ চলাকালীন দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার আগে বিমানের একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পাইলট। তবে ইন্টারফ্যাক্স-ইউক্রেন সংবাদ সংস্থার দাবি, অবতরণের আগে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলেও, দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তবে দেশের পূর্বাঞ্চলে যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেখান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে চুহুইভে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাকামীদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনার সংঘর্ষ অব্যাহত। যদিও এই দুর্ঘটনার সঙ্গে তার কোনও সংযোগ এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি।
শুক্রবার বিমানটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে, সেটি আন্তোনভ এএন-২৬ বিমান বলে জানা গিয়েছে। ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন ১৯৬৯-’৮৬-র মধ্যে দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ওই বিশেষ ধরনের বিমান তৈরি হয় সেখানে। বায়ুসেনায় পরিবহণের কাজেই মূলত ওই বিমান ব্যবহার করা হত। ২০১৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি আন্তোনভ এএন-২৬ বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনা সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন: দেশবিরোধী কোনও সংগঠনের ফাঁদ এড়ান, বললেন ইমামরা
সাম্প্রতিক কালে প্রশিক্ষণ চলাকালীন ইউক্রেনে একাধিক বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনা সামনে এসেছে। ২০১৮-র ডিসেম্বরে প্রশিক্ষণ চলাকালীন একটি এসইউ-২৩ যু্দ্ধবিমান ভেঙে পড়ায় এক পাইলটের মৃত্যু হয়। তার দু’মাস আগে ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া চলাকালীন ওই একই মডেলের আরও একটি বিমান ভেঙে পড়ে এক জন মার্কিন ও এক জন ইউক্রেনীয় পাইলট প্রাণ হারান।
২০০২ সালে এয়ার শো চলাকালীন পশ্চিম ইউক্রেনে যাত্রী সমেত ভেঙে পড়ে একটি এসইউ-২৭ বিমান। তাতে ৭৭ জন প্রাণ হারান। আহত হন ১৬৫ জন।
২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ই মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৭ বিমানটি ভেঙে পড়ে। সে বার ২৯৮ জন যাত্রীই প্রাণ হারান। রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাকামীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় রাশিয়া বিইউকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুডে় বিমানটিকে নামায় বলে সেই সময় একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের রিপোর্টে দাবি করা হয়। যদিও রুশ সরকার এই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।