সোমবার দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: শুভেন্দু অধিকারীর এক্স হ্যান্ডেল।
কেন্দ্রীয় সরকার বকেয়া টাকা না দিলে রাজ্য সরকারই ১০০ দিনের শ্রমিকদের প্রাপ্য মেটাবে বলে শনিবারই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, অর্থ দফতরে তাঁর লোক আছে আর সেখান থেকে তিনি জেনেছেন, বকেয়া মেটাতে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। এ বার দিল্লি গিয়ে রাজ্য যাতে আর ঋণ নিতে না পারে সে ব্যবস্থাই নাকি তিনি করে এলেন। সোমবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ নিয়ে কথা বলেছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলা যে টাকা ঋণ হিসাবে নিয়েছে তার যথাযথ হিসাব না দিলে রাজ্য সরকারকে যাতে আর টাকা না দেওয়া হয়, সেই আর্জিও তিনি নির্মলাকে জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
শুধু এ টুকুই নয়, ক্যাগ রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বাংলার দুর্নীতি নিয়েও নালিশ জানিয়েছেন শুভেন্দু। সংবাদমাধ্যমকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে আমি বাংলার সরকার সম্পর্কে কিছু অভিযোগ জানিয়েছি। ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে যাতে কেন্দ্র তদন্ত করে সেই আর্জিও জানিয়েছি।’’ এর পাশাপাশি জিএসটির টাকা নিয়েও বাংলায় দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ দেশের একমাত্র রাজ্যে যেখানে ২০১৭ সালে জিএসটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অডিট হয়নি। তাই দাবি করেছি অডিট হওয়ার পর যাতে বাংলাকে টাকা দেওয়া হয়।’’
রবিবার রাতেই দিল্লি যান শুভেন্দু। বিজেপি সূত্রে জানা যায়, শাহ তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে তলব করেছেন। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ছাড়াও অন্য কিছু বিষয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে শাহ আলোচনা করবেন বলে জানা গিয়েছিল। নির্মলার সঙ্গে তিনি কী বিষয়ে কথা বলেছেন তা খোলসা করলেও শাহ-সাক্ষাতে কী কথা হয়েছে তা নিয়ে নীরব শুভেন্দু শুধু এ টুকুই জানিয়েছেন যে, বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে শুভেন্দু যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নালিশের নথি নিয়ে গিয়েছিলেন তা দেখা গিয়েছে ছবিতে। শাহের সঙ্গে বৈঠকের ছবিতে শুভেন্দুর হাতে একটি ফাইল দেখা গিয়েছে।
দিল্লিতে দাঁড়িয়েই শুভেন্দু সোমবার দাবি করেন, খুব তাড়াতাড়ি সিএএ কার্যকর হয়ে যাবে। মোদী সরকারে এটা যে করবেই সে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘যে সরকার কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করতে পারে সেই সরকারের কাছে সিএএ কার্যকর করাটা কোনও বিষয়ই নয়।’’ তবে শাহের সঙ্গে তিনি যে এ নিয়ে সোমবারের বৈঠকে কথা বলেননি সেটাও স্পষ্ট করেছেন শুভেন্দু। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘শাহের সঙ্গে আলোচনার বিষয় আমি প্রকাশ করব না। তবে সেই আলোচনার ফল খুব তাড়াতাড়ি টের পাওয়া যাবে।’’
সোমবারের দিল্লি সফরের শুরুতেই শুভেন্দু দেখা করেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে। এক্স হ্যান্ডলে শুভেন্দু জানিয়েছেন, বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল রাজ্য সম্পর্কে অনেক খোঁজখবর নিয়েছেন তাঁর থেকে। এর পরে সংসদ ভবনে প্রথমে শাহ ও পরে নির্মলার সঙ্গে দেখা করেন। সম্প্রতি স্টেট ফাইন্যান্সিয়াল অডিট রিপোর্টে ক্যাগ জানিয়েছে, ২০০২-০৩ সাল থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত দু’লক্ষ ২৯ হাজার কোটি টাকা খরচের শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) তারা পায়নি। এই নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ক্যাগ রিপোর্টের তথ্য অসত্য বলেও দাবি করেছেন। আর তার পরে পরেই শুভেন্দু নির্মলার কাছে ক্যাগ এবং অন্যান্য আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে এলেন। কেন্দ্রের পাঠানো এক প্রকল্পের টাকা রাজ্য অন্য প্রকল্পে খরচ করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু।