প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই এনডিএ জোট কত আসন পাবে, কত আসনে বিজেপি জয়ী হবে, তা সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে দিলেন প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক দিকে, কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ অন্য দিকে, বিজেপি সরকারের আমলে উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে মোদীর মন্তব্য, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে এনডিএ ৪০০-র বেশি আসন পাবে।’’
সোমবার লোকসভায় জবাবি ভাষণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকে ধারাবাহিক আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। কখনও নেহরু জমানাকে দুষেছেন, কখনও ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করেছেন। হাত শিবিরকে কটাক্ষ করে মোদীর মন্তব্য, ‘‘আপনাদের এই দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধী দলে থাকার সংকল্পকে আমি সাধুবাদ জানাই… আপনারা যে ভাবে বহু দশক ধরে এখানে (সরকারে) বসেছিলেন, একই ভাবে আপনারা সেখানে (বিরোধী দলে) বসার সংকল্প করেছেন… জনগণ অবশ্যই আপনাদের আশীর্বাদ করবেন।’’ শুধু তাই নয়, এর পর আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি ক’টি আসন পাবে তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন মোদী। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘‘আমি দেশের মেজাজ দেখে বলছি, এনডিএ তো ৪০০ পার করবে। আর ভারতীয় জনতা পার্টিকে ৩৭০ সিট অবশ্যই দেবে জনগণ।’’ দু’বার ওই কথা বলার পর মোদীর সংযোজন, ‘‘হমারা তিসরা কার্যকাল বহত বড়া ফয়সেলোঁ কা হোগা’ (আমাদের তৃতীয় কার্যকাল অনেক বড় সিদ্ধান্ত নেবে)। লালকেল্লা, রামমন্দির উদ্বোধনের সময় বলেছি, দেশকে হাজার বছরের সমৃদ্ধির শিখরে দেখতে চাই। তৃতীয় কার্যকালে সেই হাজার বছরের মজবুতির কাজ হবে। ভারতবাসীর প্রতি আমার অপার ভরসা।’’
এরই পাশাপাশি কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোটকে নিয়ে কটাক্ষের পর কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী আসন থেকে বিরোধিতা আসে। কিন্তু মোদী আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীরা লড়াইয়ের ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ভোটে লড়ার মনোবল তাঁরা হারিয়ে ফেলেছেন।’’ কংগ্রেসের উদ্দেশে কটাক্ষ হেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার কিছু তো নতুন ইস্যু আনতেন। কিছু তো নতুন জিনিস বলতেন এই ভোটের সময়। চলুন, এটাও আমি শেখাচ্ছি...।’’
মোদী জবাবি ভাষণে বলতে থাকেন, ‘‘বিরোদীদের যে ছন্নছাড়া অবস্থা এর জন্য দায়ী কংগ্রেস। ভাল বিপক্ষ হওয়ার সময় ছিল ওদের। ১০ বছর তো কম নয়। কিন্তু ওরা বিফল হয়ে গিয়েছে। আবার অন্য বিপক্ষকেও সামনে আসতে দেয়নি। তেজস্বী লোকজনকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক নতুন মুখ ছিলেন। তাঁদের উৎসাহ ছিল। কিন্তু নবীনদের ছবি উপরে এলে নিজেদের ছবি ঝাপসা হয়ে যাবে, এই ভয়ে কিছু করেননি তাঁরা।’’
প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, সুস্থ গণতন্ত্রে শক্তিশালী বিপক্ষ খুব জরুরি। কিন্তু বিরোধীর (কংগ্রেস) সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারবাদ। ওই কথা বলার সময় বহরমপুরের সাংসদ তথা কংগ্রেসের লোকসভার নেতার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘দেখুন অধীর চৌধুরীর অবস্থা। আমাদের খড়্গেজি এই সদন থেকে অন্য সদন শিফ্ট করে গিয়েছেন। গুলামজি তো পার্টি থেকেই শিফ্ট হয়ে গিয়েছেন।’’ এর পর নাম না করে রাহুল গান্ধীকে খোঁচা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘একই প্রোডাক্ট বার বার লঞ্চ করে করে কংগ্রেসের দোকানে তালা পড়ার সময় এসে গিয়েছে।’’ আবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘পরিবারবাদের রাজনীতির’ অভিযোগ আনতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আমাদের রাজনাথ সিংহের কোনও পার্টি নেই। অমিত শাহের কোনও পার্টি নেই। দেশের গণতন্ত্রের জন্য পরিবারবাদ রাজনীতি বিপজ্জনক। কোনও পরিবারের দু’জন রাজনীতিতে আসতেই পারেন। ১০ জনও আসুন। স্বাগত। কিন্তু প্রশ্ন হল সেই পরিবারই যদি পার্টি চালায়... এটা বিপজ্জনক।’’ মোদীর সংযোজন, ‘‘এটা আগে কখনও বলিনি। আজ বলে দিলাম।’’