হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করতে জেলাশাসকদের চিঠি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফল ঘোষণার পরও প্রার্থীদের জয়ের বিষয়টি মামলার রায়ের উপরই নির্ভর করবে বলে বুধবার জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের সেই নির্দেশ নির্বাচিত প্রার্থীদের জানাতে ২২টি জেলার জেলাশাসককে চিঠি দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আদালতের নির্দেশ সমস্ত জয়ী প্রার্থীদের যাতে জানানো হয়, সে ব্যাপারে ২২টি জেলার জেলাশাসক এবং জেলা পঞ্চায়েত ভোটের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
৮ জুলাই, শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। ভোটের দিন ঘোষণা করা হয়েছিল গত ৮ জুন। সেই সময় থেকেই ভোট ঘিরে প্রাণহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, বোমাবাজিতে তপ্ত বাংলা। গত মঙ্গলবার ভোট গণনার দিনও প্রাণহানি হয়েছে। গণনার শেষ দিন বুধবারও অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। যার রেশ থেকে গিয়েছে বৃহস্পতিবারও। এই আবহে বুধবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীদের জয় নির্ভর করবে মামলার রায়ের উপরেই। ভোট-হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য যদি নাগরিককে নিরাপত্তা না দিতে পারে, তা হলে সেটি খুবই গুরুতর বিষয়।’’ রাজ্যে ভোট ঘিরে অশান্তি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রের কাছে রিপোর্টও তলব করেছে হাই কোর্ট।
ভোট হিংসা নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ফল ঘোষণার পরেও অশান্তির ঘটনা রোখা যাচ্ছে না। নিরীহ নাগরিকদের পাশে সে ভাবে দাঁড়াতেও দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। আদালতে জমা পড়া ভোটের অশান্তি এবং অনিয়মের ভিডিয়ো বুধবার চালিয়ে দেখেন বিচারপতিরা। প্রধান বিচারপতির এজলাসে ওঠা মামলাটি দায়ের করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেত্রী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। এই নিয়ে ফারহাদ মল্লিক নামে এক ব্যক্তি আগেই মামলা করেছিলেন। বুধবার তিনটি মামলার একত্রে শুনানি হয়।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেও যে সব ঘটনা ঘটছে আদালত তা দেখে বিস্মিত। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, যে সন্ত্রাস, হিংসা চলছে রাজ্য তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মানুষের জীবনধারণের স্বাধীনতার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। পুলিশ নিরীহ মানুষকে সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ। সাধারণ মানুষের শান্তি যাতে ভঙ্গ না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্যের। যদি এটি তারা না করতে পারে তা খুবই উদ্বেগের।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অসহযোগিতার বিষয়টি বিশেষ ভাবে আদালত দেখবে। কমিশনকে পুর্নর্নিবাচন নিয়ে আবার ভেবে দেখতে হবে। যে বুথগুলির মামলা এসেছে সেগুলি দেখতে হবে। যে ঘটনা ঘটেছে তার দায়িত্ব নিতে হবে কমিশনকে। রাজ্য সরকার ভোটের ফলাফলের পরেও অশান্তি সামলাতে পারেনি। এই ঘটনায় আদালত অবাক হয়েছে। রাজ্য যদি নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে না পারে তা হলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে নোট করবে আদালত।’’