শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল ছবি।
অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হয়েছিল রাজ্য বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান। দলের অন্যতম শীর্ষনেতা অমিত শাহের উপস্থিতিতে ২৭ অক্টোবর ‘আনুষ্ঠানিক সূচনা’ হলেও তার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই অভিযান শুরু হয়ে গিয়েছিল। এক মাস অভিযান চলার পরে একটি রিপোর্টও তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপি। গোটা অভিযান ‘পোর্টাল নির্ভর’ হওয়ায় তথ্যের গোলমাল হওয়ার সুযোগ নেই বলেই বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। সেই হিসাব বলছে, বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি সদস্য সংগ্রহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের তুলনায় রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দক্ষিণ দিনাজপুর অনেকটা এগিয়ে।
দেখা যাচ্ছে, জেলার সব ক’টি বিধানসভার ‘গড়’ করলে সুকান্তের দক্ষিণ দিনাজপুর শুভেন্দুর পূর্ব মেদিনীপুরের থেকে দ্বিগুণের বেশি। তবে দুই জেলার আয়তনে বিপুল ফারাক। পূর্ব মেদিনীপুরে মোট বিধানসভা ১৬টি। সেখানে দক্ষিণ দিনাজপুরে মাত্র ছ’টি।
চলতি মাসেই রাজ্য বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার কথা। যদিও বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলতে থাকবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গোটা দেশে বুথ স্তর থেকে শুরু হয়ে সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই সময় পর্যন্ত বাংলায় অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কারণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দেওয়া এক কোটি সদস্যের লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনও অনেকটাই দূরে রাজ্য বিজেপি। গত বুধবার ২০ নভেম্বর পর্যন্ত কোথায় দলের কত সদস্য হয়েছে, কত সক্রিয় সদস্য হয়েছে তার একটি হিসাব জানা গিয়েছে রাজ্য বিজেপি সূত্রে। তবে রাজ্যে মোট কত সদস্য সংগ্রহ হয়েছে সেই সংখ্যাটি এখনই খোলসা করতে চাইছেন না কেউ। বুধবার সেই রিপোর্ট নিয়ে রাজ্য নেতাদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকও করেন বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে যে হিসাব পাওয়া গিয়েছে, তাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভা মিলিয়ে বুধবার পর্যন্ত বিজেপির সদস্য ৯৭,৪৯১ জন। বিধানসভা পিছু গড় ৬,০৯৩ জন। অন্য দিকে, দক্ষিণ দিনাজপুরের ছ’টি বিধানসভায় মোট সদস্য হয়েছেন ৭৩,৯৪৪ জন। প্রতিটি বিধানসভার গড় সদস্য ১২,৩২৪ জন।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভার মধ্যে ১৫টিতেই গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। একমাত্র পটাশপুরে এগিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সেই পটাশপুরে বিজেপি এখনও পর্যন্ত সদস্য করতে পেরেছে ৪,০৪৮ জনকে। শুভেন্দুর জেতা নন্দীগ্রাম জেলার মধ্যে এক নম্বরে। ওই বিধানসভা এলাকায় বিজেপির সদস্য হয়েছেন ৭,৫০৮ জন। অন্য দিকে, শেষ নির্বাচনের ফল অনুযায়ী দক্ষিণ দিনাজপুরে দুর্বল বিজেপি। জেলার ছ’টি বিধানসভার মধ্যে তিনটিতে বিজেপি আর তিনটিতে এগিয়ে তৃণমূল। এর মধ্যে আবার বিজেপি তুলনায় বেশি দুর্বল কুশমণ্ডি বিধানসভা এলাকায়। সেখানেই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫,৮০৪ জন সদস্য হয়েছেন বিজেপির।
তবে শুভেন্দুর জেলার থেকে তাঁর জেলার এগিয়ে থাকার হিসাব মানতে চাইছেন না সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘নানা ভাবে দলের সাংগঠনিক হিসাব রাখতে হয়। কিন্তু তাই বলে কোনও জেলাকে আলাদা করে দেখে না বিজেপি। রাজ্য সভাপতি হিসাবে কোথাও কম থাকলে সেই দায়ও আমারই। আর সেটা হয়ে থাকলে যথাযথ সময়ে খামতি পূরণ হয়ে যাবে।’’ অন্য দিকে, শুভেন্দুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘কোন হিসাবের কথা বলা হচ্ছে জানি না, তবে এখনও যা সময় রয়েছে তাতে অভিযানের শেষে পূর্ব মেদিনীপুরই এক নম্বরে থাকবে।’’
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের সকলকেই নিজের নিজের জেলায় বাড়তি সময় দিতে বলেছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মানতে হচ্ছে এখন কলকাতার বাসিন্দা জেলা থেকে আসা রাজ্য নেতাদেরও। প্রায় সকলেই নিজের নিজের জেলায় গিয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে যোগ দিচ্ছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদেরও নিজের নিজের আসন যে জেলায়, সেখানে গিয়ে সদস্য সংগ্রহে নামতে বলা হয়েছে। সাংসদ পিছু ১০ হাজার এবং বিধায়ক পিছু ৫ হাজার সদস্য সংগ্রহ করতে হবে বলেও বলা হয়েছে।